ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি বাড়ছে

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভারতে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি বাড়ছে

ভারতে প্রতিবছর ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি বেড়েই চলছে। কেবলমাত্র সর্বশেষ গত অর্থবছরে ভারতে ৬ হাজার ৮ শ’ ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। যার আর্থিক পরিমাণ ৭১ হাজার ৫ শ’ কোটি টাকা। যা আগের আর্থিক বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি। গত এগারোটি অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এভাবেই প্রতিবছর ভারতে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বিভিন্নভাবে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি বন্ধে চেষ্টা করছেন। এমনকি লোকসভায় আইনও পাস করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। হাই প্রোফাইল ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে। এতে করে বেশকিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক এখন রীতিমতো হুমকির মুখে রয়েছে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) অতি সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনে দেয়া এক আবেদনের উত্তরে গত ১১ বছরে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। ‘দেশে মোট কত ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে’ মর্মে সংবাদসংস্থা প্রেসট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে তথ্য জানতে চেয়েছিল। পিটিআইকে দেয়া জবাবে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক জানায়, গত এগারো বছরে ভারতে মোট ৫৩ হাজার ৩৩৪টি ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। আর্থিক অঙ্কে যার পরিমাণ ২ দশমিক ৫ লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে গত অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বেশকিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ৭১ হাজার ৫৪২ দশমিক ৯৩ কোটি টাকার আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি। এতে মোট ৬ হাজার ৮০১টি ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক আরও জানিয়েছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৩৭২টি ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৮৬০ দশমিক ০৯ কোটি টাকা এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৬৯টি জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৯৯৮ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা হারিয়েছে। ব্যাংকগুলোতে ঋণ জালিয়াতির ঘটনা বন্ধ বা কমিয়ে আনতে ব্যাপক চেষ্টা করলেও কেন্দ্রীয় সরকার তাতে লাগাম টানতে পারেনি। যার ফলে পরবর্তী প্রতিটি অর্থবছরে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা বেড়েই গেছে এবং এর পরিণামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির বোঝা ঘাড়ে নিতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ঋণ জালিয়াতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো পুলিশের কাছে অপরাধমুলক অভিযোগ দায়ের করলে রিজার্ভ ব্যাংকে তা নথিভুক্ত হয়। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কি ব্যবস্থা নিয়েছে, তার তথ্য পাওয়া যায় না। সাম্প্রতিক কালে ভারতে দুটি হাই প্রোফাইল ঋণ জালিয়াতির ঘটনা বেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এরমধ্যে হীরার গহনা ব্যবসায়ী নীরব মোদি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ১১ হাজার ৩০০ কোটি রুপী নিয়ে সটকে পড়েছেন। বিজয় মালিহা নামের আরেক শিল্পপতি ৯ হাজার কোটি রুপী ঋণ খেলাপি হয়েছেন। নীরব মোদি এবং বিজয় মালিহার মতো ভারতের ৩০টি শীর্ষ কোম্পানির কাছে এক-তৃতীয়াংশের বেশি খেলাপি ঋণ অর্থাৎ প্রায় ৭২ হাজার কোটি রুপী আটকে পড়েছে। এ অর্থ ফেরাতে এবং এ ধরনের জালিয়াতি মোকাবেলায় প্রথমে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ এবং পরে লোকসভা নির্দিষ্ট একটি আইন পাস করে। ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন্দ্রের কাছে এর কোন বিকল্প ছিল না। এ আইনের কারণেই বড় ধরনের ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসায় দেশের দুর্নীতি দমন বিভাগের নিয়ামক সংস্থা সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি) বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে এবং এক শ’টি বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির রিপোর্ট তৈরি করেছে। গত বছর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আইডিবিআই) ব্যাংকের ৬ শ’ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মোবাইল ফোন কোম্পানি এয়ারসেলের সাবেক প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিবশঙ্করণ ও তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পাশাপাশি শিবশঙ্করণের ছেলের পরিচালিত সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়া, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে আইডিবিআই ব্যাংকে কাজ করেছিলেন এমন ১৫ জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যারা শিবশঙ্করণের অধীনে কাজ করেছিলেন এবং তাদের সময়ই ঋণ অনুমোদন করা হয়েছিল। সম্প্রতি নীরব মোদিকেও লন্ডনে গ্রেফতার করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এভাবেই ঋণ জালিয়াতি রোধ বা কমিয়ে আনতে চাইছে। কিন্তু এর সুফল কতটা মিলবে, তা দেখার জন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হবে। সূত্র-এই সময়
×