ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমন্বয়হীনতায় সড়ক ব্যবস্থাপনায় কাক্সিক্ষত ফল আসেনি

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সমন্বয়হীনতায় সড়ক ব্যবস্থাপনায় কাক্সিক্ষত ফল আসেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সড়ক ব্যবস্থাপনায় জড়িত সরকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতায় কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায়নি। শনিবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর বাস ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে গত পৌনে ৫ বছরে বাস মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বার বার বৈঠক করেছি। সড়কে বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো উত্তরণের উপায় খুঁজেছি আমরা। কিন্তু সেগুলোর উত্তরণ ঘটেনি। কারণ বাস মালিক-শ্রমিক এবং পুলিশের বাইরেও সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ সরকারী বিভিন্ন সংস্থা জড়িত রয়েছে। এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যে কারণে আমরা সড়ক ব্যবস্থাপনায় কাক্সিক্ষত ফল পাইনি। ডিএমপি কমিশনার জানান, রাজধানীর সড়কগুলোতে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করা প্রয়োজন। তাহলেই সড়ক ব্যবস্থাপনায় অনেক পরিবর্তন চলে আসবে। সুফল আসতে থাকবে। এর উদাহরণ হচ্ছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একটি এলাকা খুবই দুর্ঘটনাপ্রবণ ছিল। রোড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে একটি বাঁক সোজা করে দেয়া হয়। এর ফলে ৯৫ ভাগ দুর্ঘটনা কমে গেছে। নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সড়ক নিরাপদ করতে হবেই। তা না হলে জনরোষানল থেকে মালিক-শ্রমিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ পরিত্রাণ পাব না। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যদি নিরাপদ সড়ক আমরা তৈরি করতে না পারি। তাহলে জনগণের যে ক্ষোভ আমরা অতীতে দেখেছি সেটা কিন্তু থেমে থাকবে না। যখন বিস্ফোরণ হবে, আমরা যারা সংশ্লিষ্ট আছি মালিক-শ্রমিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার কেউ কিন্তু জনরোষানল থেকে পরিত্রাণ পাব না। তিনি জানান, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজধানীর মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালগুলো শহরের বাইরে নেয়ার সময় এসেছে। এগুলো সরাতে হবে। কারণ টার্মিনালগুলো এখন বাস ডিপোতে পরিণত হয়েছে। তাই এই ডিপোগুলোতে পরিবর্তন আমাদের আনতে হবে। বিষয়টি ভাবার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। ডিএমপি কমিশনার জানান, ঢাকা শহরের বাস-বে না থাকায় বাসগুলো থামে রাস্তায়। রাস্তায় দাঁড়িয়েই যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছে। ফলে পেছনে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে হাজারো জরিমানা করেও পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় বলে মত দেন তিনি। তিনি জানান, ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ১৬৭টা বাসস্ট্যান্ড চিহ্নিত করেছে। ফুটপাথ দিয়ে যেন মোটরসাইকেল চলাচল করতে না পারে, সেজন্য মেটাল পিলার স্থাপন করা হয়েছে। অথচ এগুলো ডিএমপির কাজ নয়। এরপরও নিজ অর্থায়নে সেগুলো করা হয়েছে। এখন কিছুটা হলেও যানজট নিরসন হচ্ছে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। তিনি জানান, পৃথিবীর একমাত্র দেশ আমাদের দেশ, যেখানে হাত উঁচিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখনও পর্যন্ত সিগন্যাল বাতি চালু করতে না পারা বড় ব্যর্থতা মনে করি। যার কারণে সড়কে শৃঙ্খলা আসছে না। চালকদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার জানান, চালকরা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালায়। কেন তাদের ভেতর নাগরিক দায়িত্ববোধ থাকবে না। এটা তো দণ্ডণীয় অপরাধ। দেশে আইন তৈরি হয় দেশের সভ্য মানুষ আইন মানবে সে জন্য। কিন্তু এদেশে হয় উল্টোটি। কেউ আইন মানতে চায় না। তাই আইন মানার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে হবে। অহেতুক পরিবহন মালিক-শ্রমিককে হয়রানি করলে কোন পুলিশ সদস্যকে ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে পুলিশ কমিশনার জানান, আমরা নির্দেশ দিয়েছি যেন অহেতুক কোন পরিবহনকে রেকার করা না হয়। অহেতুক হয়রানি করা না হয় বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তারা দেখবেন। আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, আমরা বলেছি, গাড়ির দরজাটা বন্ধ রাখুন। তা মানা হচ্ছে না। আমরা বলেছি হেলপারকে একটা পোশাক দেন। তাও মানা হচ্ছে না। অথচ এটির জন্য প্রয়োজন শুধুমাত্র আন্তরিকতা। কেন আমরা সেটি করছি না। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সেটিও ভাবতে হবে। পরিবহন খাতের মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার জানান, পরিবহন খাত শুধু এটি ব্যবসা না। এটি একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আপনারা আন্তরিক হউন। সড়কে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে শুধুমাত্র আন্তরিকতা দরকার। এটি হলেই যথেষ্ট। আপনারা যদি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিজেরা উদ্যোগী হোন তাহলে আমরা আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা করব। ট্রাফিক বিভাগের উদ্দেশে তিনি জানান, শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষই যদি আইন না মানে, তাহলে পুলিশ কেন, ফেরেশতা নেমে আসলেও আইন প্রয়োগ সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি জানান, যারা সিগন্যাল অমান্য করে চলাচল করবে তাকে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে মোটিভেশন করান। এতে ফল আসবে। কারণ যেভাবে হুট করেই গাড়ির সামনে দিয়ে পার হচ্ছে, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে কাঁটা তার ভেঙ্গে পার হওয়া এসবও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি জানান, কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানকার ফুটেজ দেখে যদি পথচারীর গাফিলতি পাওয়া যায়, তাহলে চালকের পাশাপাশি পথচারীকেও দায় নিতে হবে। সভায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এছাড়া বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিক ও পুলিশের বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×