ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক সেবা প্রদানে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না

প্রকাশিত: ১০:১৯, ৩১ আগস্ট ২০১৯

 নাগরিক সেবা প্রদানে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাগরিক সেবা প্রদানে দুর্নীতিকে কোনক্রমেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি। শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকারের করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এটা সমাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করতে কাজ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতেই সরকার কাজ করছে। দুর্নীতিকে শতভাগ নির্মূল করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। সেবাখাতে কর্মরত প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) সভাপতি মশিউর রহমান খান সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। ডুরা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেলের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই, প্রখ্যাত স্থপতি ইকবাল হাবিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনছার আলী খান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার ওপর একটি কি নোট পেপার উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মাদ খান। সেবা খাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা বিভাগের সমন্বয়হীনতার প্রশ্নে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, আমাদের সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ছে এবং সমন্বয় কোথায় কোথায় করা দরকার এটাও আমরা জেনেছি। সমন্বয়তো প্রতিদিন নতুন করে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করছি। বলা হয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের মধ্যে সমন্বয় নেই, আমিতো সমন্বয়হীনতার কিছু দেখি না। উত্তরের মশার ওষুধ দক্ষিণ সিটি ভাগ করে নিচ্ছে। তারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করছে। তবে কোথায় কোথায় সমন্বয় নেই, কে কথা শুনছে না, সেটা সুনির্দিষ্ট করে দেখিয়ে দিলে খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, আমিতো সমন্বয়হীনতার অভাব দেখি না। তাছাড়া দুইজন মানুষতো দুই রকমের চিন্তার হবে। সবার কথাতো এক হতে পারে না, কিন্তু আমরা এ্যাডজাস্ট করব। সমন্বয় একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল কি না এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এখানে আউট ট্র্যাকে কথা বলা যাবে না। আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। আমিও করেছি, মেয়ররাও করেছেন, কাউন্সিলররাও করেছেন এবং সেখানে সামর্থ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। এ কথা বলা যাবে না, সফল। সফল তখনই বলতে পারতাম, একজন মানুষও যদি আক্রান্ত না হতো, একজন মানুষও যদি ক্ষতিগ্রস্ত না হতো। আমিতো এ দাবি করব না সফল। আমিও মানুষ। মানুষের সেবা করার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছি। এখন শত চেষ্টা করার পরেও সেটার সফলতা না আসে, কী করে দাবি করব শতভাগ সফল হয়ে গেছি। মন্ত্রী বলেন, আমি আসলে ওইভাবে দেখি না। সিটি কর্পোরেশন হয়ত নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেছে। আমি জানি, এমপিরা কাজ করেছেন, এখন কোথায় করেন নাই সেটা বলতে পারব না। সেমিনারে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, নগর পরিকল্পনা স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব কিন্তু কোন এক সময় আহাম্মকি করে আমরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক করে তার হাতে দায়িত্ব দিয়েছি। অথচ নগরের জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা সিটি কর্পোরেশনের কোন ক্ষমতা নেই। তাই রাজউক ভেঙ্গে নগর সরকার বা সিটি কর্পোরেশনকে দিয়ে দেয়া হোক। তাদের লোকবল, অর্থ, অন্যান্য সম্পদ সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া হোক। জলজট ও কঠিন তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ২০১৭ সালে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সভাপতিত্বে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, ওয়াসাকে দ্বিখ-িত করে সিটি কর্পোরেশনের হাতে দিতে। সেই সিদ্ধান্তের কোন অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, সেদিনের সেই পরিকল্পনা কেন বাস্তবায়ন হলো না? পানি সরবরাহ নিয়ে মশকরা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির দিকে যেতে হবে। কেন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি? রাস্তা কাটার মহোৎসব থেকে রেহাই পেতে ১৯৯৮ সালে ধানমন্ডি ৩২নং সড়কের ডাক সিস্টেমকে ফলো করার আহ্বান জানিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, ১৯৯৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ধানমন্ডি ৩২নং সড়কে জল, বিদ্যুত, গ্যাস পয়ঃনিষ্কাশন পুরো সড়কে উত্তর প্রান্তের ফুটপাত জুড়ে কৌতূহল প্রকোষ্টের মধ্য দিয়ে একটা ডাক সিস্টেমে করে ফেলেছিলাম। নগরের নিরাপত্তায় মেট্রোপলিটন পুলিশকে নগর সরকারের অধীনে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ডিএমপি নগরীর জন্য করা হয়েছে। কিন্তু কেন তা স্থানীয় সরকারের অধীনে থাকবে না? পুলিশ সরকারের বা তাদের সংস্থার অধীনে থাকুক কিন্তু ডিএমপিকে সিটি কর্পোরেশনের অধীনে দিয়ে দেয়া হোক। সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা নিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, মৌচক-মগবাজার ফ্লাইওভারে ছিনতাই হয়, বিদ্যুতের পোস্ট লাগানো যাচ্ছে না, কেন? সমন্বয়ের অভাব। কাজেই সমন্বিত নগর ব্যবস্থাপনায় কমিটি হোক আর ব্যবস্থা হোক সেটা নগর সরকার হোক বা অন্য কোন আদলে হোক। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে জনসচেতনতাকেই প্রথম কাজ বলে দাবি করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সিইও আব্দুল হাই বলেন, স্থানীয় সরকারের একটি সংস্থা সিটি কর্পোরেশন। এখানে কাজ করতে বড় সমস্যা জনসেচতনতা ও সমন্বয়হীনতা। আমরা ড্রেন পরিষ্কার করতে যেয়ে দেখেছি ড্রেনের ভেতর বিশাল আকারের মেট্রেস। যেটা ২০-৩০ জন লোক দিয়েও উঠাতে পারি নাই। অনেক স্টিলের আলমারি পেয়েছি। যারা এটা ফেলেছেন তাদের কি কোন দায়িত্ব নেই? শুধু সিটি কর্পোরেশন পরিষ্কার করে দিয়ে আসবে। দুইজনকেই সচেতন হতে হবে। জনসচেতন হলে প্রত্যেকের নাগরিক সেবা দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব। তিনি বলেন, এডিস মশা রোধে প্রত্যেক মানুষকে সচেতন করতে আমরা চিরুনি অভিযান করছি। গত পাঁচদিনে ১ লাখ ৫২ হাজার বাড়ি পরিদর্শন করেছি। তাতে দেখা গেছে ২০ শতাংশ বাড়িতেই এডিসের লার্ভা। দুই বাড়ির মাঝখানে খালি জায়গা ময়লা এটা কি নগরবাসীর দায়িত্বের মধ্যে পরে না? আমরা প্রাথমিকভাবে সচেতন করছি। আসলে আইনের প্রয়োগ ছাড়া এটা সম্ভব না। বহির্বিশ্বে দেখা যায় যত্রতত্র ময়লা ফেললে আইন প্রয়োগ করা হয়। আমরা এখন প্রাথমিকভাবে সচেতন করছি। পরবর্তীতে আইন প্রয়োগ করে হলেও আমরা বাস্তবায়ন করব। এ বিষয়ে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অনুষ্ঠানে কি নোট পেপারে বিআইপি সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মাদ খান বলেন, স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া হয়। আমাদের স্থানীয় সরকারে যে বাজেট দেয়া হয়, তা দিয়ে নাগরিকরা সর্বোত্তম সেবা পাচ্ছে কিনা সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। বর্তমান সময়ে আমাদের জনস্বার্থের বিষয়টি বেশি আলোচিত। বিশেষ করে ডেঙ্গুর কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কতটুকু নিশ্চিত হচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। এসব মোকাবেলায় আমরা কীভাবে বছরব্যাপী কাজ করতে পারি, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর নাগরিকদের দায়িত্ব হচ্ছে তারা কীভাবে স্থানীয় সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়টি নজরে দেয়া। অনুষ্ঠানে বিআইপি সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, সেবা প্রদান ও গ্রহণকারীদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। অর্থ ও জনবলের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা যদি ভাল সেবা দিতে চাই, সেবার মান বাড়াতে চাই, তাহলে এই জায়গাটিতে আরও বেশি উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য রিসোর্স থাকতে হবে এবং সেই রিসোর্সগুলোকে একেবারে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।
×