ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার কৃষকের সৌর সেচ পাম্পের বিদ্যুত কিনবে সরকার

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৩১ আগস্ট ২০১৯

  এবার কৃষকের সৌর সেচ পাম্পের বিদ্যুত কিনবে সরকার

রশিদ মামুন ॥ নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। এবার কৃষকের সৌর সেচ পাম্পের বিদ্যুত কিনবে সরকার। নেট মিটারিং বা গ্রাহকের জন্য এনার্জি ব্যাংক তৈরিতে সফল হওয়ার পর এবার সৌরচালিত সেচ পাম্পের বিদ্যুত গ্রিডে সরবরাহ করার প্রচেষ্টা থেকেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় এই বিদ্যুত গ্রিডে সরবরাহ করা যায় সে বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে সেচ পাম্পগুলোর সৌরচালিত বিদ্যুত গ্রিডে যোগ হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহে এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে দেশে সৌরচালিত সেচ পাম্প জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এককভাবে কোন প্রতিষ্ঠান না করলেও বিক্ষিতভাবে দেশে ডিজেল চালিত সেচ পাম্পগুলো তুলে দিয়ে সৌরচালিত সেচ পাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, অবকাঠামো উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান (ইডকল) পৃথকভাবে দেশে সৌরচালিত সেচ পাম্প স্থাপন করছে। লাভজনক হওয়ায় অনেকে বেসরকারী উদ্যোগে সেচ পাম্প স্থাপন করছেন। বিদ্যুত বিভাগ মনে করছে ডিজেল চালিত সেচ পাম্পের বদলে সোলার চালিত সেচ পাম্প দুই দিক থেকে ভাল। একদিকে এতে আর জ্বালানির খরচ প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে সেচ মৌসুমের পরও এখান থেকে বিদ্যুত পাওয়া সম্ভব। কিন্তু নীতিমালা না থাকার কারণে এখন সেচ মৌসুম শেষ হওয়ার পর সোলার প্যানেলগুলো অলস বসে থাকে। কিন্তু সারা দেশে ব্যাপকহারে সেচ পাম্প সোলারে রূপান্তরের পর সেই প্যানেল বসিয়ে রাখলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হতে হবে। এখন দেশে ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডিজেল এবং দুই লাখ ৭০ হাজার বিদ্যুত চালিত সেচ পাম্প রয়েছে। ডিজেল পাম্পগুলো বছরে কমপক্ষে ১০ লাখ টন ডিজেল পোড়ায়। যার আর্থিক মূল্য প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে সেচ মৌসুমে অতিরিক্ত এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হয়। ক্রমান্বয়ে সৌর বিদ্যুতে সেচ পাম্পগুলো চালানো গেলে ডিজেল এবং বিদ্যুতের খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ সাশ্রয় হবে। সাধারণত দেশে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সেচ মৌসুম বিবেচনা করা হয়। এই চার মাসের প্রথম দুই মাস শীতকাল। এ সময় দেশে সূর্যালোকের প্রাপ্যতা কম থাকে। কিন্তু বছরের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সূর্যালোকের প্রাপ্যতা বেশি থাকে। যখন প্যানেলগুলো বসিয়ে রাখা হয়। উদ্যোক্তারা বলছেন একটি সোলার পাম্প ৪ থেকে ৫টি ডিজেল পাম্পের সমপরিমাণ পানি উত্তোলন করতে পারে। সোলার পাম্পে প্রতি বিঘায় কৃষকের খরচ আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। ডিজেল এবং বিদ্যুতচালিত পাম্পে এর থেকে বেশি খরচ হয়। ডিজেল এবং বিদ্যুতের বদলে সৌর সেচ দিলে এক বিঘা জমিতে একজন গ্রাহক এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারেন। সরকার সোলার সেচ পাম্প সম্প্রসারণে উদ্যোক্তা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ব্যক্তি বা সমষ্টিগতভাবে সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করা যায়। ব্যক্তি বা সমবায় ১৫ ভাগ মূলধনী বিনিয়োগ করলে বাকি ৮৫ ভাগ দুভাবে বিনিয়োগ হয়। পাম্প স্থাপনের মোট ব্যয়ের অর্ধেক অনুদান হিসেবে দেয়া হয়। বাকি ৩৫ শতাংশ ১০ বছর মেয়াদী ঋণ দেয়া হয়। ফলে দ্রুত সোলার সেচ পাম্প সম্প্রসারণ সম্ভব। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, নেট মিটারিং নীতিমালা করার পর দ্রুত শহুরে বাড়ির ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করার হার বেড়েছে। এই পদ্ধতিতে গ্রাহক ব্যবহার অতিরিক্ত বিদ্যুত গ্রিডে সরবরাহ করছে। আবার পিক আওয়ারে গ্রাহককে গ্রিড থেকে ওই বিদ্যুত দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এখন দেশের সব বিতরণ কোম্পানি ৪৭৮টি নেট মিটারিং এর গ্রাহক যোগাড় করেছে। নেট মিটারিংয়ের মোট উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে আট দশমিক ২১৩ মেগাওয়াট। জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৮ দশমিক ৬৪ ভাগ। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৬৪ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষি। কৃষককে বিদ্যুত বিক্রির প্রেরণা দেয়া সম্ভব হলে দ্রুত সম্প্রসারণ হতে পারে সৌর বিদ্যুত উৎপাদন। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুত বিভাগ থেকে সম্প্রতি সোলার সেচ পাম্পের বিদ্যুত কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এই বিদ্যুত কোন প্রক্রিয়ায় সরবরাহ করা হবে, কিভাবে গ্রিডের উপযোগী করা যায় সেসব কারিগরি দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে একটি নীতিমালা তৈরি করার জন্য ¯্র ডোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×