ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী;###; জিয়া খুনীদের যাতে বিচার না হয় সেই ব্যবস্থাও করেছিল

খুনীদের দল বিএনপি ॥ দেশ যেন আর কখনও সেই হায়েনাদের হাতে না পড়ে

প্রকাশিত: ১০:১৫, ৩১ আগস্ট ২০১৯

খুনীদের দল বিএনপি ॥ দেশ যেন আর কখনও সেই হায়েনাদের হাতে না পড়ে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে ‘খুনীদের দল’ আখ্যায়িত করে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ যেন আর কখনও সেই হায়েনাদের হাতে না পড়ে। একজন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী খুনীর হাতে তৈরি রাজনৈতিক দল খুনী ছাড়া আর কি হতে পারে? বাংলাদেশ যে আজ উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা যেন আর থমকে না দাঁড়ায়। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে অনেক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে বিএনপি নেতারা এখন নতুন সাফাই গাইতে শুরু করেছে’ মন্তব্য করে বলেন, বিএনপি নেতারা এখন বলছে, ’৭৫ সালে তো বিএনপি গঠনই হয়নি, তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যায় বিএনপি কীভাবে জড়িত হলো? বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির যে প্রতিষ্ঠাতা, সেই জিয়াউর রহমান নিজেই খুনী। জিয়াউর রহমান শুধু সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল না, এই হত্যার যাতে বিচার না হয় সেই ব্যবস্থাও সে করেছিল। ইনডেমনিটি ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল সেসব আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। আওয়ামী লীগের যারা বেইমান-মোনাফেক খুনী মোশতাকের সঙ্গে গিয়েছিল, তারা কোন না কোনভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের চক্রান্তে ছিল। যারাই মোশতাকের সঙ্গে ছিল তারা খুনের সঙ্গে জড়িত। পরবর্তীতে তারা জিয়ার সঙ্গে গিয়েছিল। এখন তাদের অনেকে বেঁচে আছে, তারা আবার বড় বড় কথাও বলে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত, উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এমপি, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, দক্ষিণের সহ-সভাপতি আবু হানেফ মান্নাফী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী, উত্তরের সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রচার সম্পাদক আকতারুজ্জামান ও উত্তরের উপ-প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা। এ সময় মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচীর শেষ দিন আজ শনিবার গণভবনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবেগজড়িত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা কখনও ভাবতে বা বিশ্বাস করতে পারেননি এদেশের কোন মানুষ তাঁকে হত্যা করতে পারে। তাঁকে হত্যা করল কারা? এই দেশের মানুষ। তিনি কখনও বিশ^াস করেননি, এই দেশের মানুষ তাঁকে হত্যা করবে। যারা হত্যা করল, তারা আমাদের বাড়িতেই ঘন ঘন যাতায়াত করতেন। বৌ, ছেলে, শাশুড়ি, মেজর ডালিম তো সারাদিন আমাদের বাড়িতে থাকত। খুনী নূর, ফারুকও যাতায়াত করত। তারা যে এই কাজ করবে, তা কেউ ভাবতেও পারেনি। মানুষ এমন বেইমানি করতে পারে তা ভাবতে পারিনি। তিনি বলেন, ওই সময় বিশ্বনেতারা অনেক কিছু বলেছেন, ফিদেল ক্যাস্ত্রো, ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছিলেন, আমার দেশের কেউ আমাকে কেন মারবে? তিনি এটা বিশ্বাসই করতে চাননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নাম পর্যন্ত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ৩ নবেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো। ’৭১ যেভাবে নারী ও শিশু হত্যা করা হয়েছিল, ঠিক ’৭৫-এর নারী ও শিশুদের হত্যা করা হলো। যেন কারাবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ধানম-ির ৩২ নম্বরে। দীর্ঘ বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা ’৭৫-এর ১৫ আগস্টে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে সেদিন হারানো স্বজনদের নির্মম খুনের বর্ণনা দেন। এ সময় পুরো মিলনায়তন শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘটনার পরদিন (১৬ আগস্ট) বনানী কবরস্থানে আমার মাসহ অন্যদের কবর দেয়া হয়। তাদের কাফনের কাপড় পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আর বাবার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় টুঙ্গিপাড়ায়। টুঙ্গিপাড়ার বাড়িটি সিলগালা করা হয়। সেখানেও কারফিউ জারি করা হয়। তখন কেউ ভিতরে যেতে পারেনি। কাফনের কাপড় পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, দোকানপাট ছিল বন্ধ। রেড ক্রিসেন্ট থেকে রিলিফের কাপড় এনে সেই কাপড় দিয়ে দাফন করা হয় আমার পিতাকে। আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে আমরা দুই বোন সবাইকে রেখে বিদেশে গিয়েছিলাম। কখনও ভাবতেও পারিনি যে নেতা আজীবন সংগ্রাম ও কষ্ট সহ্য করে বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ ও মানচিত্র দিয়েছেন, তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) কেউ হত্যা করতে পারে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে যারা বিজয়ী জাতি হয়েছিল, সেই জাতি (বাঙালী) ‘খুনীর জাতি’ হিসেবে পরিচিত হলো। তিনি বলেন, পলাশীর যুদ্ধের সময় খুনী মীরজাফর বেইমানি করে ক্ষমতা নিয়ে তিন মাসও টিকতে পারেননি। তেমনিভাবে খুনী মোশতাকের কপালেও বেশিদিন সয়নি। মাত্র আড়াই মাসের মাথায় তাকেও বিদায় নিতে হয়েছিল। খুনের সঙ্গে যারা জড়িত, খুনিদের নিয়ে যে দল গঠন, সেই জিয়াউর রহমানের শাসকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৫ আগস্ট শুধু একটা পরিবারকে হত্যা নয়, এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের ইতিহাস মুছে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে যার অবদান, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যত আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান তাও মুছে দেয়া হয়েছিল। তখন একটি মাত্র টেলিভিশন ছিল-বিটিভি। সেই বিটিভিতেও একটি বারের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামটি আসেনি। একেবারে ইতিহাস থেকেই মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই ১৫ আগস্টের খুনীদের মদদ দিয়েছে। যেভাবে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনীদের দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল, ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়াও পুনর্বাসন করেছেন। এরশাদও খুনীদের মদদ দিয়েছে, পুরস্কৃত করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খুনী মোশতাকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ছিল জিয়াউর রহমান। আর তাই বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনী মোশতাক প্রথমেই জিয়াকে সেনাপ্রধান করে। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়া উৎসাহ ও সহযোগিতা দিয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড তদন্তে লন্ডনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির স্যার টমাস উইলিয়াম এমপি ভিসা নিতে গেলে তাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হয়নি। জিয়া হত্যাকান্ডে জড়িত না থাকলে, বিএনপির খুনীর দল না হলে তদন্ত করতে বাধা দিল কেন? তাদের এত কি দুর্বলতা ছিল? সামরিক ক্যুর নামে জিয়াউর রহমানের হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার-সৈনিককে হত্যা করার উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এদেশে গুম-খুনের রাজনীতি চালু করেছিল জিয়াউর রহমান। শুধু রাজনৈতিক দলের নেতা নয়, সামরিক বাহিনীতে যারা মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ছিলেন তাদের নির্মমভাবে ফাঁসি দিয়ে কিংবা গুলি করে হত্যা করে এই জিয়া। অনেকেই বলেন, নাস্তার টেবিলে কাটা চামচ দিয়ে খেতে খেতে নাকি ফাঁসির হুকুমে সই করত জেনারেল জিয়া। নিরপরাধ মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে সে। তাদের কান্নায় চিৎকারে আকাশ ভারি হয়ে উঠত। আর এখন সেই বিএনপি গুম, খুনের কথা বলে! তিনি বলেন, জিয়ার হাতে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দলটির চরিত্রই হচ্ছে খুনের। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আইভীর রহমানসহ ২২ জনকে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত জোট। তখন তারা নিহদের লাশ পর্যন্ত ফেরত দিতে চায়নি। খুনীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সাহায্য করতে উদ্ধার কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে তখন ক্ষমতাসীন সরকারের নির্দেশে। এরপর ১৭ আগস্ট দেশের ৬৪টি জেলার পাঁচশ’ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানী কায়দায় গণহত্যা, খুন, নির্যাতন চালায় বিএনপি। জঙ্গীবাদ, লুণ্ঠন, মানি লন্ডারিংসহ দুুঃশাসনের মাধ্যমে পুরো দেশকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ’৭৫ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ একুশ বছর এবং ২০০১ সালের পর ৮ বছর মিলিয়ে এই ২৮/২৯ বছর দেশের মানুষ কী পেয়েছে? যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। দেশের মানুষের দিকে এরা তাকায়নি, দেশের কোন উন্নয়ন করেনি। বরং বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের কল্যাণ হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন, ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ছিল। জিয়া সেসব যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছে, অনেককে ব্যবসায়ী বানাতে গিয়ে দেশে ঋণ খেলাপী কালচারও চালু করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেনারেল জিয়া একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী এম এ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী ও যুদ্ধাপরাধী আলীম, মাওলানা মান্নানদের মন্ত্রী করে তাদের হাতে লাখো শহীদের রক্ত স্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দেয়। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। ১৫ আগস্ট ভোটারবিহীন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রশিদ ও হুদাকে এমপি বানায়, এমনকি রশিদকে বিরোধী দলের আসনে বসিয়ে সংসদের পবিত্রতা নষ্ট করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, যারা খুনের সঙ্গে জড়িত, আত্মস্বীকৃত খুনীদের মদদ ও পুরস্কৃত করে, একাত্তরের গণহত্যাকারীদের মন্ত্রী বানায় সেই দল বিএনপি খুনীদের দল নয়, এটা বলে কীভাবে? বিএনপি খুনীদের দল নয় তো কীসের দল? যারা একাত্তরের গণহত্যাকারীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয় তারা খুনীর দল ছাড়া আর কি তারা? তিনি বলেন, বিএনপির জন্মই তো হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়ে। এখনও দলটির (বিএনপি) চরিত্র এতটুকু বদলায়নি। তারা ক্ষমতায় থাকতে একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে খুশি করতে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশ যেন কোনভাবেই সফল হতে না পারে, সেই চেষ্টাই করেছিল। দেশের ফেরার পর থেকে বারবার তাকে হত্যা প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা, বারবার আমাকে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখতে হয়েছে। মৃত্যুকে হাতে নিয়েই আমি দেশে ফিরেছিলাম। বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের মহাসড়কে আনতে পেরেছি। দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব দেখে অবশ্যই আমার বাবা-মার আত্মার শান্তি পাবে। দেশের কোন মানুষ আজ না খেয়ে থাকে না, আমরা একদম তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি, তাদের উন্নত জীবন দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। একাত্তরের পরাজিত দেশ পাকিস্তান থেকে এখন বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ অনেক দিক থেকে আমরা একাত্তরে যে দেশকে পরাজিত করেছি তাদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা তা করতে পেরেছি। পরাজিত দেশ থেকে বাংলাদেশ অনেক দিক থেকেই আজ এগিয়ে চলেছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনে সারাবিশ্বের মধ্যে প্রথম হচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে অনেক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যখন বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। শুধু এটুকু মনে হয়, ৪৪ বছর পর আমার বাবা ও মায়ের আত্মা শান্তি পাবে এই দেখে যে, দেশের মানুষ আর ক্ষুধার জ¦ালায় কাতর হয় না। রোগে ধুকে ধুকে মারা যায় না। লেখাপড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যে লক্ষ্যগুলো স্থির করেছি, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। এই শোক ব্যথা বুকে নিয়ে এগিয়ে যাবো। একই দিনে আমরা সবাইকে হারিয়ে শোক নিয়েও আমরা দুটো বোন কাজ করছি। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে কাজ করছি। দেশের মানুষ ভাল থাকলে জাতির পিতার আত্মার শান্তি পাবে। আমরা শুধু বাবা মা হারিয়েছি তা নয়, দেশের মানুষ হারিয়েছিল সব সম্ভাবনা। আমরা সেই সম্ভাবনা আবার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এখন একটু ভাল লাগে, দেশের মানুষ একটু শান্তিতে আছে, একটু খেতে পারছে। সুন্দর জীবন পাবে, এটাই জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে এক নম্বরে আছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমার হারাবার কিছু নেই। চাওয়া পাওয়ারও কিছু নেই। কারণ আমার কাছে সততাই হচ্ছে শক্তি। যা থাকলে যেন কোন অবস্থায় কথা বলা যায়, যে কোন অবস্থা মোকাবেলা করা যায়। একমাত্র সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা যায়। তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর আদর্শ আছে। একজন রাজনীতিবিদ যদি সফল হতে চায় তাকে অবশ্যই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হবে। রাজনীতিতে দুটি পদ আছে। একটি হলো- সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে চলে মানুষের ভালবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করা। আরেকটা হচ্ছে- আদর্শহীন, নীতিহীন রাজনীতি করে অর্থ ইনকাম করা। এই পথে যারা যায় তারা একসময় হারিয়ে যায়, এটাই বাস্তবতা। তাই সবাইকে অনুরোধ করব জাতির পিতার নিজের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনূটা মনোযোগ দিয়ে পড়া। সেখানে অনেক শেখার আছে। একজন মানুষ তাঁর জীবনের সমস্ত দিয়ে কিভাবে কাজ করেছে, একটি জাতির জন্য, একটি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য সোট জানতে পারবেন কারাগারে রোজনামচা পড়ার মাধ্যমে। বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আরও কাজ করতে হবে, দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে, উন্নতি করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ একটু ভাল থাকলে জাতির পিতার আত্মার শান্তি পাবে। সেজন্য দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। তবে দেশের এই অগ্রযাত্রা যেন থমকে না যায়, বাংলাদেশ আর যেন সেই হায়েনাদের কবলে না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
×