ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কামাল লোহানীসহ তিন গুণী পেলেন আলতাফ মাহমুদ পদক

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ৩১ আগস্ট ২০১৯

 কামাল লোহানীসহ তিন গুণী পেলেন আলতাফ মাহমুদ পদক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...। বাঙালীর অস্থিমজ্জায় মিশে থাকা এই গানের অমর সুরস্র্রষ্টা শহীদ আলতাফ মাহমুদ। শুক্রবার ছিল তার অন্তর্ধান দিবস। একাত্তরের ৩০ আগস্ট পাকবাহিনীর হাতে বন্দী হন সংগ্রামী এই সঙ্গীতশিল্পী। পরবর্তীতে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। কালজয়ী এই শিল্পীর অন্তর্ধান দিবসে তার স্মরণে তারই নামাঙ্কিত পদক প্রদান করা হলো তিন গুণীজনকে। আলতাফ মাহমুদ পদকপ্রাপ্ত এই তিন কীর্তিমান হলেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের দুই স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও জামী-আল-সাফী। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এই পদক প্রদান করা হয়। মঞ্চের বা পাশে ছিল রং-তুলির আঁচড়মাখা আলতাফ মাহমুদের প্রতিকৃতি। চারপাশে ছড়িয়েছিল গাঁদা আর গোলাপের পাপড়ি। ছবির নিচে জ্বলতে থাকা প্রদীপগুলো যেন তার পক্ষ থেকে আলো ছড়াচ্ছিল আয়োজনজুড়ে। তার সুরারোপিত গানের পরিবেশনা মনে করিয়ে দিচ্ছিল শিল্পীর মৃত্যু হলেও আমৃত্যু বেঁচে থাকে সৃষ্টি। এমন আবহের মাঝে কামাল লোহানীর স্মৃতিকথায় আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেন আলতাফ মাহমুদ। পদকপ্রাপ্ত তিন গুণীজনকে সম্মাননা স্মারক প্রদানের পাশাপাশি পরিয়ে দেয়া হয় উত্তরীয়। তুলে দেয়া হয় পদকের অর্থমূল্য ১০ হাজার টাকার শুভেচ্ছা উপহার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। কামাল লোহানীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন আলতাফ মাহমুদের সহধর্মিণী সারা আরা মাহমুদ। এই গুণীজনের শংসাবচন পাঠ করেন সাংস্কৃতিক সংগঠক সঙ্গীতা ইমাম। ফরিদ উদ্দিন আহমেদের শংসাবচন পাঠ করেন ফাউন্ডেশনের সদস্য আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ। জামী-আল-সাফীর শংসাবচন পাঠ করেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মারুফ রসূল। সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশে কামাল লোহানী বলেন, শিল্পীদের মধ্যে যারা এই দেশের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন আলতাফ মাহমুদ তাদের অগ্রগণ্য। তিনি ছিলেন সাহসের অফুরন্ত ভা-ার। তার চোখে যে আগুন জ্বলতো সেটাই ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সুরের মাঝে। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, যে কোন অনুষ্ঠান কিংবা রিহার্সালে আলতাফ মাহমুদ ছিলেন ভীষণ নিয়মানুবর্তী মানুষ। ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকায় অনুুষ্ঠিত যুবলীগের সম্মেলনে প্রথম দেখেছিলাম তাকে। সেদিন তিনি রবীন্দ্রনাথের একটি গানের প্যারোডি গেয়েছিলেন। তার গানের গলাটা ছিল দানাদার। ওই কণ্ঠস্বরটি মানুষকে ভীষণভাবে এমন কণ্ঠস্বর আজো খুঁজে পাইনি। শিল্পী হিসেবে মানুষের প্রতি আলতাফ মাহমুদের দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করে কামাল লোহানী বলেন, তিনি শুধু সুরকার বা গায়ক নয় গণমানুষের প্রতিনিধি হয়ে রাজপথের আন্দোলনে শামিল হতেন। বিশ্বাস করতেন মানুষের অধিকারে। অধিকারহীন মানুষকে তিনি মৃত মানুষ বলে বিবেচনা করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্পচর্চার মাঝে রাজনীতি-সচেতনতা না থাকলে মানুষের জন্য কিছু করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের তার দেখানো সেই পথে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। অনুভূতি প্রকাশে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আলতাফ মাহমুদের সুরারোপিত অমর একুশে গান আজো আমাদের উজ্জীবিত করে। জীবন চলার পথে সাহস যোগায়। শোককে শক্তিতে পরিণত করার অবলম্বন হয়ে ধরা দেয়। জামী-আল সাফী অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, কোন সৃষ্টির তখনই স্বার্থক হয় যখন সেই সৃষ্টিটা যাদের জন্য করা হয় তাদের আকাক্সক্ষার পূরণ হয়। আর এমন সৃষ্টির জন্য জন্য আলতাফ মাহমুদের নামাঙ্কিত এই সম্মাননাপ্রাপ্তিতে আমি আপ্লুত। অনুষ্ঠানে ‘মায়ের সঙ্গে ছেলের কথা’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। আলতাফ মাহমুদের সুর করা ‘ও বাঙালী’ শিরোনামের সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিপ্লব রায়হান।
×