ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাসান-শিরিনই দ্রুততম মানব-মানবী

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ৩১ আগস্ট ২০১৯

হাসান-শিরিনই দ্রুততম মানব-মানবী

রুমেল খান ॥ এ্যাথলেটিক্সকে বলা হয় ‘মাদার অব গেমস’। আর সেই গেমসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ডিসিপ্লিন হচ্ছে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। অনুর্ধ ১০ সেকেন্ডের রুদ্ধশ্বাস দৌড়ে কে হন বিজয়ী বা বিজয়িনী, সেটা জানার জন্য শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক। অনুর্ধ ১০ সেকেন্ডের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে এ ভূবনে। ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হতে পারে সুউচ্চ অট্টালিকা, ঘটতে পারে গাড়ি দুর্ঘটনা, আবার এক নিঃশ্বাসের দৌড়ে হাসিল করা যায় স্বর্ণপদক। তেমনটাই হাসিল করলেন শিরিন আক্তার এবং হাসান মিয়া। মহিলাদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে (ইলেকট্রনিক টাইমিং) শিরিন আক্তার (বাংলাদেশ নৌবাহিনী) ১২.২০ সেকেন্ড নিয়ে প্রথম, সোহাগী আক্তার (বাংলাদেশ নৌবাহিনী) ১২.৪৭ সেকেন্ড নিয়ে দ্বিতীয় এবং শরীফা খাতুন (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) ১২.৪৮ সেকেন্ড নিয়ে তৃতীয় হন। দ্রুততম মানবী হওয়ার পর শিরিন বলেন, ‘১০০ মিটার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখাটা আনন্দের। এ জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। এর কৃতিত্ব আমার কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফি স্যারের। বিকেএসপিকে ধন্যবাদ তারা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে সেখানে অনুশীলন করার। আর আমার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই, কারণ তারা আমাকে যতটা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ততটাই দিচ্ছে। এছাড়া এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন আমাকে সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। এ জন্যই আমি আমার জায়গা ধরে রাখতে পারছি এবং সেই সঙ্গে আমি আমার পড়াশুনাটাও চালিয়ে যেতে পারছি।’ জাতীয় এবং সামার ... সব মিলিয়ে নয়বার দ্রুততম মানবী হলেন শিরিন (সামারে পাঁচবার, ন্যাশনালে চারবার)। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এবারের হানড্রেড মিটার স্প্রিন্টে জেতার ব্যাপারে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমার কোচও প্রতিনিয়ত আমাকে উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন।’ শিরিনের সেরা ইলেকট্রনিক্স টাইমিং ১১.৯৯ সেকেন্ড। এটা দেশের পক্ষেও সেরা টাইমিং। গত ২০১৬ এসএ গেমসে গুয়াহাটিতে এই টাইমিং করেছিলেন শিরিন। সে তুলনায় শিরিনের এবারের টাইমিং (১২.২০ সেকেন্ড) বেশ খারাপই বলতে হবে। তার মানে আগের চেয়ে তার নৈপুণ্যের অবনতি হয়নি কী? এ প্রসঙ্গে শিরিনের ভাষ্য, ‘আজকে দৌড়ে আমার যে টাইমিং সেটার চেয়ে আরেকটু ভাল টাইমিং করতে পারলে আশাকরি আসন্ন এসএ গেমসে দেশের হয়ে পদক জিততে পারব।’ গত কয়েক বছর ধরে শিরিনই আধিপত্য বিস্তার করে দ্রুততম মানবীর খেতাব জিতে চলেছেন? অন্যরা কেন এগিয়ে আসতে পারছে না? শিরিনের ব্যাখ্যা, ‘অন্যরা উঠে আসছে না এটা ভুল কথা। সবাই চেষ্টা করছে, পরিশ্রম করছে। যেমন সোহাগী, শরীফা, রূপা, সোনিয়া। আগামী দিনগুলোতে তারা নিশ্চয়ই দ্রুততম মানবী হতে পারবে।’ দ্রুততম মানবী হওয়ার ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে শিরিন অবশ্য অনেক পিছিয়ে আছেন। কেননা সাবেক স্প্রিন্টার নাজমুন নাহার বিউটি সব আসর মিলিয়ে ১৯ বার দ্রুততম মানবী হয়েছেন। (১০ বার ন্যাশনালে, ৯ বার সামারে)। এ নিয়ে বিউটির ভাষ্য, ‘২০১৩ সালে আমি বাংলাদেশ গেমসে অংশ নিইনি। সেখান থেকেই শিরিনের উত্থান এবং টানা সাফল্য।’ বিউটি ২০০৫-২০১৩ পর্যন্ত টানা নয়বার জাতীয় পর্যায়ে দ্রুততম মানবী হন। এছাড়া সাবেক এ্যাথলেট ফিরোজা বেগম ১০বার দ্রুততম মানবী হন। কাজেই বিউটিকে টপকাতে হলে শিরিনের আগে টপকাতে হবে ফিরোজাকে। পুরুষদের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট হাসান মিয়া (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) ১০.৬১ সেকেন্ড নিয়ে প্রথম, মোহাম্মদ ইসমাইল (বাংলাদেশ নৌবাহিনী) ১০.৬৭ সেকেন্ড নিয়ে দ্বিতীয় এবং রাকিবুল ইসলাম (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) ১০.৭৪ সেকেন্ড নিয়ে তৃতীয় হন। হাসান মিয়া : ‘এ নিয়ে সামারে টানা ও মোট দ্বিতীয়বারের মতো দ্রুততম মানব হলাম। আল্লাহ্র রহমতে আমি অনেক ভাল খেলেছি, ভাল আছি। প্রত্যাশা করছি আগামী এসএ গেমসে এরচেয়েও ভাল টাইমিং করে বাংলাদেশের হয়ে পদক জিততে পারব। দেশকে ভাল কিছু উপহার দিতে চাই। তবে নিজের সেরাটা দিয়েও যদি পদক জিততে না পারি তাহলে সেটা হবে আমার দুর্ভাগ্য।’ মেজবাহ ও ইসমাইলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গে হাসান বলেন, ‘ওনারা দু’জনেই অনেক ভাল ও সিনিয়র খেলোয়াড়। ওনাদের হারিয়ে ভাল করতে পেরে আমি খুবই খুশি। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।’ হাসান আরও যোগ করেন, ‘খুব ভাল লাগছে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েই দলকে একটি স্বর্ণপদক দিতে পেরেছি। আনন্দটা বেশি এই কারণে যে, অনেক কষ্ট করে নিজের জায়গা ফিরে পেয়েছি। ভবিষ্যতে অনেক ভাল টাইমিং করতে চাই। গত সামারে হাসান দ্রুততম মানব হয়েছিলেন বিকেএসপির হয়ে। গেল বছর সামার মিটে দ্রুততম মানব হলেও জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে তা হারিয়েছিলেন নৌবাহিনীর মোঃ ইসমাইলের কাছে। এক মৌসুম বাদেই ফের দ্রুততম মানবের মুকুট ছিনিয়ে নিলেন সেনাবাহিনীর হাসান মিয়া। আগে জুনিয়র মিটে বিকেএসপির হয়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে নয়বার দ্রুততম কিশোর হয়েছিলেন। এবার হলেন দ্রুততম মানব। কুমিল্লার মুরাদনগরের সীমানার পাড় গ্রামে এ্যাথলেটিক্স পরিবার থেকে উঠে এসেছে হাসান। বড় দুই ভাই জীবন মিয়া ও ফারুকুল ইসলাম এ্যাথলেট ছিলেন। বড় ভাইয়ের উৎসাহেই বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া। ২০১৯ সালে কাতারের দোহায় এশিয়ান এ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে কমবয়সী প্রতিযোগী ছিলেন এই হাসান।
×