ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় প্রয়াত এমপির ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৩১ আগস্ট ২০১৯

 পাবনায় প্রয়াত এমপির  ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে  ষড়যন্ত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৩০ আগস্ট ॥ সুজানগরের সাতবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজের প্রবেশপথের পাশে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় পাবনা-২ আসনের জনপ্রিয় এমপি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিন মাস্টারের ম্যুরাল নির্মাণের বিষয়কে রং লাগিয়ে তার পুত্র আহম্মদ ফিরোজ কবির এমপির ভাবমূর্তি বিনষ্টের চক্রান্ত চলছে। এ চক্রান্তের অংশ হিসেবে কয়েকটি মিডিয়ায় কলেজের শহীদ মিনার ভেঙ্গে পিতার ভাস্কর্য বানালেন এমপি শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করায় বিক্ষোভ, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মতো ঘটনা ঘটেছে। সাতবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এসএম শামছুল আলম জানান, প্রায় ৩৫ বছর আগে ওই কলেজের প্রবেশ পথের বামপাশে পরিত্যক্ত এবং সংকীর্ণ একটি জায়গায় ভাষা শহীদদের স্মরণে অপরিকল্পিত তথা ত্রুটিপূর্ণ একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কালের পরিক্রমায় শহীদ মিনারটির পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে যায়। তাছাড়া শহীদ মিনারটি কলেজে যাতায়াতের রাস্তা থেকে নিচু ভূমিতে অবস্থিত এবং সেখানে জায়গা সঙ্কুলান হয় না। ফলে বর্তমানে ভাষা শহীদদের স্মরণে ওই স্থানে আর কেউ পুষ্পমাল্য অর্পণ বা কোন অনুষ্ঠানাদি করতে যান না। তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালে সরকারীভাবে কলেজ মাঠে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং ব্যয়বহুল একটি ভাষাশহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারি এবং স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ওই শহীদ মিনারেই পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং স্মরণসভাসহ এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানাদি করে থাকেন। ফলে ওই শহীদ মিনারটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। শহীদ মিনারটি পরিত্যক্ত হওয়ায় ইতোমধ্যে কলেজের অর্থায়নে ভাষাশহীদদের স্মরণে কলেজের দক্ষিণ পাশে নতুন একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার নির্মাণে গবর্নিং বডি সিদ্ধান্ত নেয়। আর নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের ইট, বালিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা হয়। নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের প্রস্তুতি চলাকালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিত্যক্ত ওই শহীদ মিনার ভেঙ্গে সেখানে প্রয়াত এমপি আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ম্যুরাল নির্মাণ শুরু করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিৎ দেবনাথ জানান, ম্যুরাল নির্মাণে স্থানীয় এমপি আহমেদ ফিরোজ কবিরের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আহমেদ তফিজ উদ্দিন স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রাণপুরুষ তথা একাধিকবার পাবনা-২ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। সে কারণে তার স্মৃতির স্মরণে কলেজের অব্যবহৃত ওই জায়গায় ম্যুরালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং কলেজের গবর্নিংবডির সভাপতি ফজলুল হক জানান, শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলার পেছনে কোন হীন উদ্দেশ্য নেই। শহীদ মিনারটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। তার চেয়ে বড়কথা ওই স্থানে জায়গা সঙ্কুলান হতো না। সে কারণে শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে একটি উন্মুক্ত জায়গায় দৃষ্টিনন্দন ভাষাশহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও এলাকার একটি কুচক্রীমহল শহীদ মিনার ভেঙ্গে আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ম্যুরাল নির্মাণের যে বিষয়টি বিভিন্ন মহলে প্রচার করছেন সেটি রীতিমতো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গর্হিত কাজ। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন জানান, ষড়যন্ত্রকারীদের মাথাব্যথা জরাজীর্ণ শহীদ মিনার ভাঙ্গা নিয়ে নয়, তাদের মাথাব্যথা প্রয়াত এমপি আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে। তিনি বলেন, একটি পরিত্যক্ত জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত এমপি আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ম্যুরাল নির্মাণ করা কোন অপরাধ নয়। বরং যারা নির্মাণ করছেন তারা দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধা আহমেদ তফিজ উদ্দিনের প্রতি যথাযথ মর্যাদা এবং সম্মান প্রদর্শন করছেন। তবে দলীয় একটি সূত্র দাবি করেছে, বর্তমান সংসদ সদস্য আহম্মদ ফিরোজ কবির যেভাবে দিনের পর দিন জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন তাতে দলীয় কতিপয় নেতা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মিথ্যা এ ইস্যু তুলে তাকে হেয় করার চক্রান্তের নীলনক্সায় মিডিয়াকে ব্যবহার করে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছে। এ নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে।
×