ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুধকুমারে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন

ভাঙ্গনের হুমকিতে ১২০ পরিবার

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৩১ আগস্ট ২০১৯

ভাঙ্গনের হুমকিতে  ১২০ পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে ॥ প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর দিয়ে দুধকুমার নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। বার দিনব্যাপী এই কর্মযজ্ঞ চললেও সদর উপজেলা পরিষদের নাজির শফিকুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সিন্ডিকেটের যোগসাজশের ফলে বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। এতে ভূমিধস ও ভাঙ্গন বিপর্যয়ে রয়েছে ১২০টি পরিবার। পাশাপাশি নদীর ওপর পাইপ বসানোয় প্রতিদিন ঘটছে ছোটবড় নৌদুর্ঘটনা। এসব অনিয়ম যেন কেউ দেখার নেই। জানা যায়, সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর বাজারের পাশে নুরানী পাড়ায় দুধকুমর নদীতে ড্রেজার বসিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। বন্যার পর ব্রহ্মপুত্র নদের মুখে বালু পড়ায় যাত্রাপুর বাজারে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এখন যাত্রাপুর বাজারের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র নৌপথ হলো দুধকুমার নদী। শীর্ণকায় দুধকুমার নদী দিয়ে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী-উলিপুর-রৌমারী-চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলার তিন শতাধিক চরের মানুষ এই পথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ এই ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। ২০১৮ সালে এই নুরানী ও ফারাজী পাড়া এলাকায় ভাঙ্গন ঠেকাতে দুধকুমার নদীতে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও পাইলিংয়ের কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই নদীতে ও একই স্থানে ড্রেজার বসিয়ে গত ২১ আগস্ট থেকে বালু উত্তোলনের উদ্যোগ নেয় সিন্ডিকেটের লোকজন। ওইদিনই জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়। প্রশাসনের নির্দেশে সেদিনই বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদের নাজির শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পাইপ সরানোর কথা বলেন। এ সময় স্থানীয় অধিবাসী মনোয়ার হোসেন ড্রেজার মেশিনসহ সমস্ত মালামাল সরিয়ে নেয়ার কথা বললে নাজির শফিকুল ইসলাম তাকে ধাক্কা দিয়ে চোটপাট করে বলেন, বেয়াদপ তুমি কথা বল কেন? আমি আছি না। তার এমন আচরণে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তার কথার ফলে ড্রেজার মেশিন সেখানেই রাখা হয়। পরে তিনি চলে গেলে রাতে ড্রেজার চালানো হয়। বিষয়টি সংবাদকর্মীদের নজরে এলে ২৬ আগস্ট সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় আগেরদিন রবিবার সারারাত ধরে মেশিনটি চলেছে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে দেয়া হলেও নাজির শফিকুল ইসলামের কারণে ড্রেজারটি সরানো হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবারও মেশিনটি চালু অবস্থায় পাওয়া যায়। নাজির শফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এ পর্যন্ত তিন দফা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার অপসারণের জন্য চাপ দেই। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে ড্রেজার ও পাইপ সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তা না হলে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এলাকার ছোলেমন, মোতালেব, কাদের, ছুরৎজামাল ও আজিজুল জানান, ঠিকাদাররা পার্শ্ববর্তী চাকেন্দা খানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবনির্মিত চারতলা ভবনে বালু তোলার জন্য ড্রেজার দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে এসব বালু। এ সময় ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হয়ে বালু ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও স্কুল কমিটির প্রভাবশালীদের নির্দেশে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নৌকার মাঝি যাত্রাপুরের এনামুল, দৈখাওয়ার মাহালম, চর যাত্রাপুরের কামাল জানান, ড্রেজারের পাইপের কারণে নদী পাড়াপাড়ে অতিরিক্ত সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট। মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, নদী তীরে ড্রেজার বসানোর পর গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে মেশিন সরানো হয়েছে। আবার তারা নদীর অপর পাড়ে মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে। এটিই এখন মূল নদী। পাইপ বসানোয় নৌকা চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঘটছে নৌ-দুর্ঘটনা। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমীনকে মোবাইলে অভিযোগের কথা বললে তিনি জানান, আপনি বলছেন বালু তুলছে। কিন্তু আমাদের লোক বলছে মেশিন সরানো হয়েছে। এখন কার কথা বিশ্বাস করব।
×