ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাউফলে নদী ও খেলার মাঠ দখল করে ইট-বালু ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৩১ আগস্ট ২০১৯

 বাউফলে নদী ও খেলার  মাঠ দখল করে  ইট-বালু ব্যবসা

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ৩০ আগস্ট ॥ বাউফলের কালাইয়া বন্দরে ধানহাট কাম খেলার মাঠ ও নদী দখল করে ইট, খোয়া, বালু ও পাথরের ব্যবসা করা হচ্ছে । একেএম ফরিদ মোল্লা নামের এক ঠিকাদার এ ব্যবসা করছেন। তিনি মনিরা এন্টারপ্রাইজের মালিক। তিনি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। অভিযোগ রয়েছে, ফরিদ মোল্লা চার-পাঁচ বছর আগে ধানহাটের উত্তর পাশের কিছু অংশ ও কালাইয়া নদীর পাশে জেগে ওঠা চরের খাস জমির কিছু অংশ দখল করে ইট, বালু ও পাথরের ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে দখলের পরিধি বাড়তে থাকে। বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কালাইয়া নদীর পাশে সরকারী বিশাল ধানহাট কাম খেলার মাঠ। এর উত্তর ও পূর্ব পাশে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মজুদ করে রাখা হয়েছে খোয়া, বালু ও পাথরের বিশাল বিশাল স্তূপ। পূর্ব পাশে নদীর মধ্যে পাইল করে দখলের কার্যক্রম চলছে। এমনকি মাঠের মধ্যেও রয়েছে বালু ও পাথরের দুটি স্তূপ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহের প্রত্যেক সোমবার ওই ধানহাট মাঠে হাজার হাজার মণ ধান ক্রয় ও বিক্রয় হয়। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত তিনদিন ধান ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত হয় ধানহাট মাঠটি। বাকি চারদিন খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে স্থানীয় শিশু, কিশোর ও তরুণরা। যুগ যুগ এই রেওয়াজ চলতে থাকলেও বর্তমানে ধানহাট মাঠে ইট, বালু ও পাথর রাখার কারণে তারা খেলাধুলা করতে পারছে না। পাশাপশি ধানহাট ছোট হয়ে আসছে দখল হয়ে যাওয়ার কারণে। এক ব্যক্তি বলেন,‘স্থানীয়ভাবে তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা দেখেও না দেখার ভান করেন।’ এক তরুণ বলেন, ‘বৃষ্টির সময় এই ধানহাট মাঠে ফুটবল খেলতাম। আর গ্রীষ্ম ও শীতের সময় ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন খেলতাম। কিন্তু মাঠের মধ্যে ও মাঠের পাশে খোয়া, বালু ও পাথর রাখায় তারা এখন আর খেলতে পারছে না। এরপরও যারা খেলছে তারা খোয়া ও পাথরের কারণে নিয়মিত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।’ তিনি সরকারী ধানহাট মাঠটি দখলমুক্ত করার দাবি জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী কালাইয়া ধানহাটের পাশে ইট, বালু, খোয়া ও পাথরের ব্যবসা বন্ধ না করলে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা কমে যাবে। ইতোমধ্যে ধানহাটটি দখলের কারণে ছোট হয়ে আসছে, হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য্য।’ তিনিও ধানহাটটি দখলদারের হাত থেকে রক্ষা করার দাবি তোলেন। কালাইয়া আড়তদার সমিতির সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠে বালু, খোয়া ও পাথর রাখায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক সময় বালু ও খোয়া ধানের সঙ্গে মিশে যায়। তখন ওই ধান মাড়াই করার পর যে চাল বের হয়, তা নিম্নমানের হয়।’ একে এম ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘বড় ডালিমার অংশের রেকর্ডিয় সম্পত্তি ভেঙ্গে নদীর মধ্যে চলে গেছে। ওই জমি কালাইয়া অংশে ধানহাটের পাশে চর জেগেছে। ওই জমির ৪২ শতাংশ তিনি ক্রয় করেছেন। ওই জমিতেই ইট, বালু ও পাথরের ব্যবসা করছেন।’ তিনি সরকারী সম্পত্তি দখল করেননি বলেও দাবি করেন। উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারী আইনানুযায়ী নদীতে চর জেগে উঠলে ওই জমি কারও ব্যক্তি মালিকানার হতে পারে না। তা সরকারের হয়ে যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিজুস চন্দ্র দে বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
×