ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ের দেখা পেতে মেয়ের আর্তনাদ!

প্রকাশিত: ১২:৩০, ৩০ আগস্ট ২০১৯

মায়ের দেখা পেতে মেয়ের আর্তনাদ!

শারীরিক অক্ষমতা জয় করলেও জীবনযুদ্ধে হারতে বসেছে চাঁদের কণা। সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েও জোটেনি একটি চাকরি; চান প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে মাহবুবা হক চাঁদের কণা। নয় মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হওয়ায় তার দুটি পা অচল হয়ে যায়। বাবা-মায়ের চেষ্টায় দুই হাতে ভর করেই তিনি প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে নেন। রাজশাহীর মাদারবক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করেছেন এবং ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর করেছেন ২০১৩ সালে। স্নাতকোত্তর অর্জনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়ায় চাকরির জন্য এই তরুণী প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চেয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করেন গত ২৬ জুন। অনশন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এবং চাকরির আশ্বাস পেয়ে অনশন ভেঙ্গে স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন চাঁদের কণা। তবে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির আশ্বাস পেলেও পরে সেটি দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। চাঁদের কণা জানান, ‘আমাকে সমাজসেবা অধিদফতরে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয়। যে চাকরি এসএসসি পাস করেও সম্ভব। আমি বেশি কিছু চাই না যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারী চাকরি চাই। আমি বারবার গণভবনে গিয়ে চেষ্টা করেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখার করার সুযোগ পাইনি। আমি আমার মা দেশরতœ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমার মা নেই প্রধানমন্ত্রীই আমার মা। তিনি আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন। আমি আশা করি, তার সঙ্গে দেখা হলে, আমার কথাগুলো বলতে পারলে, তিনি একটা সরকারী চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। মেয়ের কষ্ট শুনে মা কখনও মুখ বুজে বসে থাকবে না। মা-মেয়ের বাঁচার পদ তৈরি করে দিবেন। আমি আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ অশ্রুজ্বলে মায়ের সঙ্গে দেখা করার আর্তনাদ করে কথাগুলো বলেন প্রতিবন্ধী তরুণী চাঁদের কণা। মমতাময়ী মায়ের কাছে বলতে চান তার সংগ্রামী জীবন-যাপনের কথা। চাঁদের কণা যখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তখন তার মা মারা যান। কয়েক বছর পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। ছোট দুই ভাই আছে। চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি। টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান গ্রন্থনা এবং কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজকর্ম করে জীবিকা চালিয়েছেন। শিক্ষা জীবনের সংগ্রামমুখর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন মাদার বক্স কলেজে পড়তাম, পঞ্চম তলায় আমার ক্লাস হতো। ৯টার ক্লাসের জন্য আমি কলেজে যেতাম সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগত। স্কুলজীবন থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত এমন লক্ষ্য-কোটি বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়া।’ অনশনে বসার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করার পর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারী চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছি। সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পার হতে আর চার মাস বাকি ছিল। তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছিলাম।’ পরিশেষে নিরাশ হয়ে গণমাধ্যমের শরণাপন্ন হলেন চাঁদের কণা। গণমাধ্যমের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বপ্নের বার্তা পৌঁছে দিতে চান। এখন তার একমাত্র ভরসা দুর্দিনের সাথী গণমাধ্যম। এখন দেখার অপেক্ষায় চাঁদের কণার স্বপ্নের চাকা ঘুরে দাঁড়াবে না-কি স্বপ্নের অপমৃত্যু হবে।
×