ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অজন্থা মেন্ডিসের অবসর

প্রকাশিত: ১২:০২, ৩০ আগস্ট ২০১৯

অজন্থা মেন্ডিসের অবসর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘রহস্যময়’ স্পিনার হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছিল বিশ্ব ক্রিকেটে। ওভারের ৬টি বল ৬ রকমভাবে করার পাশাপাশি ‘ক্যারম বলে’ পারদর্শিতা দেখিয়ে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদেরও আতঙ্ক হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বেশিদিন সেই রহস্য নিয়ে টিকে থাকতে পারেননি, ক্রমেই ধার হারিয়ে নখ-দন্তহীন স্পিনারে পরিণত হয়ে দল থেকেই বাদ পড়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার জার্সিতে খেলার পর আর ডাক না পাওয়ার হতাশায় শেষ পর্যন্ত অজন্থা মেন্ডিস অবসরের সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এ ডানহাতি অফস্পিনার। ২০০৮ সালের এপ্রিলে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে ৩ উইকেট। একই বছর জুলাইয়ে ভারতের বিপক্ষে কলম্বোয় টেস্ট অভিষেকেই বিস্ময়। কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরলিধরন ছিলেন সেই ম্যাচে এবং নিয়েছিলেন দুই ইনিংসে ৫ ও ৬ উইকেট। আর অজন্থা ৪টি করে ৮ উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের পরবর্তী সময়ের স্পিন আক্রমণের দুশ্চিন্তা লাঘব করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ওই বছর অক্টোবরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টি২০ অভিষেকে ১৫ রানে নেন ৪ উইকেট। তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই দুর্দান্ত নৈপুণ্য দিয়ে আবির্ভাব, সারাবিশ্বের নজর নিজের দিকে টেনে নিতে পেরেছিলেন। আর একটানা বিস্ময় ছড়িয়েই যাচ্ছিলেন ‘ক্যারম বলে’ নিজের অসামান্য কার্যকারিতা ও দক্ষতা দেখিয়ে। ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হাম্বানটোটায় জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচে মাত্র ৮ রানে ৬ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে বড় বিস্ময় উপহার দিয়েছিলেন অজন্থা। সেটি এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচের সেরা বোলিংয়ের বিশ্বরেকর্ড। অথচ সময় যত গেছে, হারিয়েছেন ক্ষিপ্রতা, যোগ্যতা। তাই শ্রীলঙ্কা দল থেকেও ছিটকে গেছেন। যাওয়া-আসার মধ্যে থাকা অজন্থা মেন্ডিস নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ক্রাইস্টচার্চে ওয়ানডে খেলেছিলেন। সেটিই সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলা। টানা চার বছর আর সুযোগ পাননি। জাতীয় দলে চার বছর উপেক্ষিত থাকার হতাশা থেকে ক্রিকেটকে তাই বিদায় বলে দিলেন এই রহস্যময় স্পিনার। বিবিসি সিনহালা রিপোর্ট করেছে, সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে দুইবার ৬ উইকেট নেয়া একমাত্র বোলার অজন্থা। অর্থাৎ তিন ফরমেটে ১৪৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২৮৮ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করলেন মেন্ডিস। ২০০৮ সালে ভারতের বিপক্ষে যে সিরিজে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল, অজন্থা ৩ ম্যাচে নিয়েছিলেন ২৬ উইকেট। বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ে রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, শচীন টেন্ডুলকর ও সৌরভ গাঙ্গুলীদের নিয়ে গড়া ভারতের সেরা ব্যাটিং লাইনকে ধাঁধায় ফেলে দেন তিনি। পরের ৬ বছরে ১৯ টেস্ট খেলে নেন ৭০ উইকেট, চারবার এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান এবং সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৯৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট। ২০০৯ ও ২০১২ বিশ্ব টি২০ ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার শীর্ষ স্পিনার ছিলেন মেন্ডিস। শুধু টেস্ট আর টি২০ নয়, ওয়ানডেতেও ঝলমলে ছিলেন তিনি। দ্রুততম ৫০ উইকেটের মালিক হন মাত্র ১৯ ম্যাচ খেলে। ২০০৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১০০ রানের দুর্দান্ত জয়ে ১৩ রান দিয়ে নেন ৬ উইকেট। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তার এই চমৎকার শুরুটা ম্লান হতে থাকে কয়েকটি ইনজুরিতে। মেন্ডিসের অনুপস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার স্পিন আক্রমণে পাকাপোক্ত জায়গা পেয়ে যান অভিজ্ঞ রঙ্গনা হেরাথ। তার অবসরের পর শক্ত জায়গা করে নেন আকিলা ধনঞ্জয়া, লাসিথ এম্বুলদেনিয়া ও দিলরুয়ান পেরেরার মতো বোলাররা। অজন্থার সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট ছিল প্রিমিয়ার লীগ টায়ার ‘বি’তে, যেখানে শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া ক্লাব পুলিশ এসসির হয়ে অধিনায়কত্ব করেন তিনি।
×