ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনিয়োগ কমে যাওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট

ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশে নেমে এসেছে

প্রকাশিত: ১১:২৮, ৩০ আগস্ট ২০১৯

ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশে নেমে এসেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় কমেছে ব্যাংকিং খাতের ঋণ বিতরণ (ঋণ প্রবৃদ্ধি)। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। গত জুন মাসে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৮ লাখ ৭১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। এতে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ তথ্যে এসব জানা গেছে। ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তাদের মতে, ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ার অর্থ হলো বিনিয়োগ কমে যাওয়া। আর বিনিয়োগ কমে গেলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও কমে যাবে। প্রবৃদ্ধি কমে গেলে কর্মসংস্থান বাড়বে না। এ বিসয়ে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অনেকটা ধারাবাহিকভাবে ঋণ বিতরণ কমে যাচ্ছে। আর ঋণ বিতরণ কম হওয়ার মানেই হলো দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। কেননা আমাদের দেশে বিনিয়োগ হয় মূলত ব্যাংকিং খাতের অর্থায়নের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ না হওয়া মানে হলো দেশের প্রবৃদ্ধি হবে না, প্রবৃদ্ধি না হওয়া মানে কর্মসংস্থান বাড়বে না। কর্মসংস্থান না বাড়লে দেশ পিছিয়ে পড়বে। কিছুদিন ধরে সরকার প্রবৃদ্ধির যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে তা অন্য সূচকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। খেলাপী ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো কড়াকড়ি আরোপ করছে এটা সত্য, তবে দেশে ঋণের চাহিদাও খুব একটা নেই তা বলা চলে, বলেন মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। ক্রেডিট গ্রোথ ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে ঋণ বিতরণ কমেছে, এটা অর্থনীতির জন্য অবশ্যই খারাপ। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা এখনও খেলাপী ঋণ। খেলাপী ঋণের কারণে ঋণ বিতরণে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। তবে চলতি প্রান্তিকে ডিপোজিট গ্রোথ ভাল হয়েছে তা অনেকটা ক্রেডিট গ্রোথের মতোই। তারপরেও কিছুটা সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের ৩০ জুনের পরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। গত মার্চে এর পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। মাত্র তিন মাসে দেশে ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ৬২ হাজার ২২ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে দেশে খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগে গত ডিসেম্বরে খেলাপী ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে ৬২ ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারী ব্যাংক ৪৪টি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ৯টি এবং অবশিষ্ট বাকি ৯টি হলো বিদেশী ব্যাংক।
×