ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে গণহত্যা প্রশ্নে আমার অবস্থান সব সময়ই স্পষ্ট ॥ অরুন্ধতী

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৩০ আগস্ট ২০১৯

বাংলাদেশে গণহত্যা প্রশ্নে আমার অবস্থান সব সময়ই স্পষ্ট ॥ অরুন্ধতী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বুকারজয়ী ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায় বলেছেন, তার ৯ বছর আগের এক সাক্ষাতকারের একটি ভিডিও ক্লিপ থেকে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে সেজন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। এক বিবৃতিতে শান্তির পক্ষের বিশ্বনন্দিত এই এ্যাকটিভিস্ট বলেছেন, ক্ষণিকের ওই ক্লিপের বক্তব্যকে সামনে এনে তাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তার অবস্থান একেবারেই তেমন নয়। খবর ওয়েবসাইটের। বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার ব্যাপারে তার অবস্থান সব সময়ই স্পষ্ট এবং তার লেখাতেও এই প্রসঙ্গ বার বার এসেছে। নিজের মন্তব্যের পক্ষে নিজের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিনিস্ট্রি উইথ দ্য আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ এবং ‘ওয়াকিং উইথ দ্য কমরেডস’ নামের এক প্রবন্ধ থেকে দুটি উদাহরণও তুলে ধরেন অরুন্ধতী। ২০১১ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টারে দিবেশ আনন্দের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় ভারতের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন অরুন্ধতী। সে সময় তিনি কাশ্মীরসহ মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা এসব রাজ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবল উপস্থিতির কথা বলতে গিয়ে বলেন, পাকিস্তানও এমন করে তার নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সেনা মোতায়েন করেনি। তবে অরুন্ধতীর বক্তব্যের একটা ক্ষুদ্র অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। নেটিজেনদের একাংশ তার বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশে পাকিস্তানী গণহত্যা’ অস্বীকার করার অভিযোগ তোলে। সেই প্রেক্ষাপটেই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় উদ্বিগ্ন অরুন্ধতী এক বিবৃতিতে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। বলেছেন, ছড়িয়ে পড়া ক্ষণিকের ভিডিও ক্লিপটি কোনভাবেই আমার লালিত বিশ্বাসের কিংবা বছরের পর বছর ধরে আমি যা লিখে যাচ্ছি তার প্রতিনিধিত্ব করে না। আমি একজন লেখক, লেখায় আমি যা তুলে ধরি তা উপস্থিত বক্তব্যের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরপরও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা অস্বীকার করছি না এবং এই ভিডিও ক্লিপটি যদি ক্ষণিকের বিভ্রান্তিরও কারণ হয়ে থাকে, তো তার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। বিবৃতিতে অরুন্ধতী লিখেছেন, পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তানে যা করছে এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে তা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি কখনই অস্পষ্ট ছিল না এবং আমার লেখায় সব সময়ই সেসব প্রসঙ্গ এসেছে। প্রসঙ্গত, অরুন্ধতীর যে সাক্ষাতকারটি ঘিরে বিতর্ক চলছে সেই সাক্ষাতকারের ভিডিওতেও ২৯ মিনিট ৩০-৪০ সেকেণ্ড অংশে অরুন্ধতী স্পষ্টতই বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার কথা উল্লেখ করেছেন। এই প্রশ্নে তিনি ভারতীয় মাওবাদীদের সমালোচনা করে বলেছেন, কৌশলগত কারণে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার প্রশ্নে তারা নীরব। উল্লেখ্য, অরুন্ধতী তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চীনের পাকিস্তানকে সমর্থনের প্রশ্নকে সামনে এনে বলতে চেয়েছেনÑ মাওবাদীরা চীনপন্থী হওয়ার কারণে এমন ভূমিকা নিয়ে থাকে। বাংলাদেশে পাকিস্তানী গণহত্যার প্রশ্নে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে অরুন্ধতী তার বিবৃতিতে নিজেই দুটি উদাহরণ হাজির করেছেন। ২০১৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস-এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন তিনি। সেখানকার একটি প্রধান চরিত্র কাশ্মীরে দায়িত্ব পালন করা একজন ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিপ্লব দাসগুপ্ত ওরফে গারসন হোবার্ট বলেন, এটা সত্য যে, কাশ্মীরে আমরা ভয়াবহ কিছু কাজ করেছি। কিন্তু পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে যা করেছে সেটা ছিল একেবারে গণহত্যা। ২০১০ প্রকাশিত ও ২০১৯ সালের জুনে পুনঃপ্রকাশিত প্রবন্ধ ওয়াকিং উইথ দ্য কমরেডস-এর উদাহরণও সামনে এনেছেন অরুন্ধতী। সেখানে তিনি লিখেছেন, চারু মজুমদার যখন তার বিখ্যাত ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান এবং চীনের পথই আমাদের পথ’ উক্তির মধ্যদিয়ে নিজেকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) জেনারেল ইয়াহিয়া খান গণহত্যা চালানো সত্ত্বেও নকশালরা এ ব্যাপারে নীরব ছিলেন। কারণ ওই সময় চীন ছিল পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কম্বোডিয়ার খেমাররুজ বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সময়ও নীরবতা লক্ষ্য করা গেছে নকশালদের। রুশ ও চীনে [কমিউনিস্ট] বিপ্লবের সময় যে নিষ্ঠুরতার বাড়াবাড়ি হয়েছিল তা নিয়েও সোচ্চার হতে দেখা যায়নি তাদের। তিব্বত নিয়েও নীরবতা ছিল। বিবৃতিতে অরুন্ধতী বলেছেন, কাশ্মীরে যা ঘটছে তা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের পর হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা বাংলাদেশের গণহত্যা ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পাকিস্তানে যা করছে সেটার পুরনো/নতুন অনুমিত বক্তব্যে খুঁড়ে বের করার চেষ্টা করবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যারা আমার লেখা পড়েছেন তারা এই ধারণায় একমুহূর্তও বিভ্রান্ত হবে না। আমি বিশ্বাস করি না যে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নৈতিকভাবে একে অন্যের চেয়ে ভাল। এই মুহূর্তে ভারতে খাঁটি ফ্যাসিবাদ কায়েমের প্রক্রিয়া চলমান। যে কেউই এটা প্রতিরোধ করতে যাবেন তাদেরকে কলঙ্কিত, যা ইচ্ছা বলা, কারাগারে পাঠানো বা মারধরের ঝুঁকিতে থাকতে হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হবেই। উল্লেখ্য, অরুন্ধতী রায় তার ‘ফিল্ডস নোটস অন ডেমোক্র্যাসি: লিসেনিং টু গ্রাসহুপারস’ শিরোনামের বইতে ‘আজাদি’ শীর্ষক প্রবন্ধেও বাংলাদেশে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার কথা উল্লেখ করেছেন।
×