ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি দেয়ার কথা বলে শ্যামলীতে ভার্সিটি ছাত্রীকে গণধর্ষণ

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ৩০ আগস্ট ২০১৯

চাকরি দেয়ার কথা বলে শ্যামলীতে ভার্সিটি ছাত্রীকে গণধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর শ্যামলীতে এক ভার্সিটি ছাত্রীকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে তাকে অচেতন করে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষিত ওই তরুণী শান্ত মারিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ছাত্রী। এ ঘটনায় পুলিশ ফাহিম আহমেদ ফয়েজ (৩০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। তাকে পড়ে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তরুণীকে ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, আটক ফাহিম একটি বেসরকারী ক্লিনিকের প্যাথলজিতে কাজ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে তরুণীদের ফাঁদে ফেলে তারা প্রতারণা করে আসছে। এ ঘটনায় জড়িত নাহিদ পাটোয়ারী (৩২) নামে আরেক যুবককে খোঁজা হচ্ছে। ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান জানান, শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে। মঙ্গলবার বিকেলে শ্যামলীর তিন নম্বর রোডের ৫১/১/বি ভবনের পঞ্চম তলায় হেলথ ভিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন। ধর্ষিত তরুণী অভিযোগ করেন, ইন্টারভিউ বোর্ডে ডেকে নিয়ে তাকে দু-একটি প্রশ্নের পরই সিগারেট আর ওয়াইন অফার করা হয়। এতে সাড়া না দেয়ায় কৌশলে কোকের সঙ্গে নেশাজাতীয় খাইয়ে তাকে অচেতন করা হয়। এ অবস্থায় কয়েকজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। জ্ঞান ফিরলে ফাহিম ও নাহিদ পাটোয়ারীকে হাতেপায়ে ধরে অনুরোধ করে বাসায় ফেরেন চাকরিপ্রত্যাশী ওই তরুণী। বাড়ি ফিরে পরিবারকে বিষয়টি জানান। বুধবার গভীর রাতে ওই তরুণী শেরেবাংলা নগর থানায় নারী-শিশু নির্যাতনে আইনে মামলা করেছেন বলে ডিসি আনিসুর রহমান জানান। শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সী জানান, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে শ্যামলীর ওই বাড়ি থেকে ফাহিম আহমেদ ফয়েজ নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফাহিম ধর্ষণের কথা স্বীকার করে বলেছে, সে ও নাহিদ ইন্টারভিউ দিতে আসা ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছে। নাহিদকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ওসি জানান, বুধবার রাত নয়টার দিকে ওই তরুণী থানায় এসে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, যে গ্লাসে ওই তরুণীকে কোক খাওয়ানো হয়েছিল সে গ্লাস জব্দ করা হয়েছে। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ আটক ফাহিম জানায়, বিভিন্ন পত্রিকায় ছোট ছোট আকারে তারা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে। এসব বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে যারা ইন্টারভিউ দিতে আসেন, তাদের মধ্যে সহজ-সরল দেখে টার্গেট করা হয়। ভাল বেতনের লোভ দেখিয়ে তারা ইন্টারভিউ দিতে আসা ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। কোন কোন নারীকে টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাবও দেয়া হয়। অনেকেই এদের ফাঁদে পড়েছেন। তবে ‘লোকলজ্জার ভয়ে’ অনেকেই এ ঘটনা প্রকাশ করেননি। পুলিশ জানায়, হেলথ কেয়ার নামে কোথাও কোন সংস্থা কাজ করে না। এটা শুধুই আইওয়াশ। বেকার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা করাই এদের কাজ। এরা কয়েক মাস পরপর বাসা বদল করে। অন্য জায়গায় গিয়ে অন্য নামে আবার বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে নতুন করে প্রতারণা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে সিলগালা করা হয়েছে। ওই তরুণীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ধানমণ্ডির একটি ব্যাচেলর মেসে থেকে তিনি শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনে পড়াশোনা করেন। এক বছর ধরে তার পরিচয় নাহিদ পাটোয়ারীর সঙ্গে। সেই সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যোগাযোগও ছিল তাদের। গত ২৭ আগস্ট (মঙ্গলবার) দুপুর দুইটার পর মোবাইলে কল করে ডাকা হয় তাকে (ওই তরুণী)। ইন্টারভিউ বোর্ডে ডেকে দু-একটি প্রশ্নের পরই সিগারেট আর ওয়াইন অফার করা হয়। এতে সাড়া না দেয়ায় কৌশলে কোকাকোলার সঙ্গে ওয়াইন খাইয়ে ওই তরুণীকে অজ্ঞান করা হয়। এরপর প্রথমে ফাহিম আহমেদ ফয়েজ ও পরে নাহিদ পাটোয়ারী তাকে ধর্ষণ করে। শেরেবাংলা নগর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, ওই তরুণীকে ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পলাতক নাহিদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
×