ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার শর্তে মিন্নির জামিন

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৩০ আগস্ট ২০১৯

মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার শর্তে মিন্নির জামিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। জামিনের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, মিন্নি তার বাবার জিম্মায় থাকবে এবং মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। কথা বললে জামিন বাতিল করা হবে। একইসঙ্গে তদন্তাধীন মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্রিফিং নিয়ে স্ব^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) এ নির্দেশ বাস্তবায়নের আদেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুল এ্যাবসিলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে পর্যবেক্ষণসহ মিন্নিকে জামিন দিয়ে রায় দেন। আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেছেন, আমরা মর্মাহত। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্যদিকে মিন্নি বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর বলেছেন, আলহামদুল্লিাহ, আমি খুব খুশি। ন্যায়বিচার যে দেশে আছে এটা তার প্রমাণ আজকে পাওয়া গেল। মিন্নির ভুল স্বীকার মর্মে পুলিশ সুপার (এসপি) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা হতাশা ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। এজন্য এসপিকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এসপি হিসেবে তিনি পেশাদারিত্বের পরিচয় দেননি। ভবিষ্যতে কোন পুলিশ অফিসার তদন্তাধীন বা বিচারাধীন মামলার বিষয়ে ব্রিফ করলে সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। রায়ের সময় আদালত এমনই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ বিষয়ে সময়মতো ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া রিফাত হত্যার ঘটনায় করা মামলা বিচারাধীন বিষয় বিধায় আদালত এ বিষয়ে কোন আদেশ দিচ্ছেন না। তবে কোন মামলার তদন্ত ও বিচারাধীন বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এদিকে মিন্নির জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর দু’দিন শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় তার জামিন বিষয়ে আদেশ প্রদান করা হয়। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী। এ সময় আদালত কক্ষে থাকা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসরুল হক চৌধুরী জামিন আবেদনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শুনানি করেন। আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭, ৪৯৮ ধারায় এবং সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে মামলায় মিন্নিকে জামিন দিয়ে রায় দিয়েছে। মিন্নির জামিন প্রশ্নে এ আদালত গত ২০ আগস্ট এক সপ্তাহের রুল জারি করে আদেশ দিয়েছিল। ওইদিন একইসঙ্গে ২৮ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সিডি (কেস ডকেট) নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হতে বলেন। সে অনুসারে তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির কেস ডকেট নিয়ে আদালতে হাজির হন। ৩০ জুলাই মিন্নি তার জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এর আগে গত ১৬ জুলাই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে ১৭ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। পরে এ মামলায় মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এখন তিনি বরগুনা কারাগারে রয়েছেন। তার জামিন চেয়ে আনা আবেদন নাকচ করে দেন জেলার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। পরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতও মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ করে আদেশ দেন। গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে দশটার দিকে বরগুনা সরকারী কলেজের মূল ফটকের পাশে রিফাতকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে স্ত্রীর সামনে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে কয়েকজন যুবক। সে সময় নানাভাবে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেনি রিফাত। ওই ঘটনার একটি ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে তা ব্যাপক ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক রিফাতকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে একের পর এক আঘাত করছে। নৃশংস এ ঘটনায় নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তাতে বরগুনা শহরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড এবং তার সহযোগী রিফাত ফরাজী ও তার ছোট ভাই রিশান ফরাজীসহ ১২ জনকে আসামি এবং আরও চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। হত্যাকা-ে প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন বেশ ক’জন আসামি।
×