ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাক-কমান্ডো হামলার আশঙ্কা, গুজরাট বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ৩০ আগস্ট ২০১৯

পাক-কমান্ডো হামলার আশঙ্কা, গুজরাট বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গুজরাটের কচ্ছ এলাকার জলপথ দিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত কমান্ডোরা। তারা পানির নিচে হামলা চালাতে পারে। এমন গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে গুজরাট রাজ্যের সব বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্র সরকার। উপকূলরক্ষী বাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কান্দলা, মুন্দ্রাসহ সব বন্দরেই জাহাজের ওপর কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অস্বাভাবিক কিছু নজরে এলেই পুলিশ বা উপকূলরক্ষী বাহিনীকে জানাতে বলা হয়েছে। খবর আনন্দবাজার, ওয়ান ইন্ডিয়া, ডন ও এনডিটিভির। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ বা (এসএসজি) কমান্ডো মোতায়েনের খবর আগেই দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেনা গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, প্রায় ১শ’ এসএসজি কমান্ডোর গতিবিধি তাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছিল। তার মধ্যেই নতুন এ তথ্য জানালেন গোয়েন্দারা। কর্মকর্তারা বলছেন, গুজরাটের বন্দর দিয়ে ভারতে ঢুকে পাক কমান্ডো বা জঙ্গীরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা চালাতে পারে কিংবা হামলাও চালাতে পারে। এ আশঙ্কা থেকেই বন্দরে বন্দরে জারি করা হয়েছে কড়া সতর্কতা। ঠিক কোন জায়গা দিয়ে কমান্ডোরা ঢুকতে পারে তাও নির্দিষ্ট করে জানা গেছে গোয়েন্দা তথ্যে। বলা হচ্ছে, নদীবহুল এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা চলতে পারে। গত ৫ আগস্ট ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীর অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়ানোর পর থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা বেড়েছে। ভারতের কাশ্মীর সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে পাকিস্তান ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ যাতায়াত-যোগাযোগও বন্ধ করেছে। এ চরম উত্তেজনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলকভাবে ব্যালিস্টিক মিসাইল ‘গজনভি’ উৎক্ষেপণ করেছে পাকিস্তান। বুধবার গভীররাতে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে ভূমি-থেকে-ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। ভারতের সঙ্গে বৈরি সম্পর্কের প্রেক্ষিতেই তারা এ মহড়া চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের সরকারী কর্মকর্তারা যে গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছেন তাতে এরইমধ্যে পাক প্রশিক্ষিত কমান্ডোরা কচ্ছ উপসাগরের পশ্চিম উপকূলে ঢুকে পড়েছে বলে আভাস দেয়া হয়েছে এবং কান্দলা বন্দর পরিচালনাকারী একটি ট্রাস্টের সেক্রেটারিও এমন গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার এমন খবরের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী এ ধরনের অনুপ্রবেশের যে কোনরকম ঘটনা সামাল দিতে প্রস্তুত রয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও এমন খবরের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি। এক পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা এ খবর সত্য নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এমন কোন তৎপরতা নেই। ভারত কাশ্মীরের দিক থেকে বিশ্বের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে।’ তবে সাগরপথে পাকিস্তানী জঙ্গীরা অনুপ্রবেশ করে ভারতে হামলা চালানোর নজির আছে। ২০০৮ সালে ১০ জঙ্গী একটি মাছ ধরার ট্রলারে করে পাকিস্তানের করাচি থেকে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে একটি রাবার বোটে করে মুম্বাই উপকূলে পৌঁছেছিল। তাদের তিন দিনব্যাপী হামলায় ১৬৬ জন নিহত হয়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য তিনটি আকাশপথ বন্ধ করল পাকিস্তান ॥ সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য করাচির তিনটি আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। বুধবার এই পদক্ষেপ নেয়ার পর শুক্রবার পর্যন্ত এসব আকাশপথ বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের সরকার ভারতীয় ফ্লাইটগুলোর জন্য দেশটির আকাশপথ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তাভাবনা করছে বলে ঘোষণা দেয়। এর একদিন পর বুধবার দেশটির বিমান কর্তৃপক্ষ আকাশপথগুলো বন্ধ করে দিল। এর ফলে কোন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এসব আকাশপথ ব্যবহার করতে পারবে না। পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী টুইট বার্তায় জানান, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতীয় ফ্লাইটগুলোর পাকিস্তানী আকাশপথ ব্যবহারে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তাভাবনা করছেন। দেশটির মন্ত্রিসভায় এদিন ভারতীয় ফ্লাইটগুলোর পাকিস্তানী আকাশপথ এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত পাকিস্তানের স্থলপথ বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। অবশ্য এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ইমরান খান। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স পাকিস্তানের বালাকোটে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের সন্ত্রাসী শিবিরে হামলার পর ভারতের জন্য পাকিস্তানী আকাশপথ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান। তবে গত ২৭ মার্চ নয়াদিল্লী, ব্যাংকক ও কুয়ালালামপুর ছাড়া সব ফ্লাইটের জন্য পাকিস্তানের আকাশপথ খুলে দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। এরপর গত ১৫ মে ভারতগামী সব ফ্লাইটের পাকিস্তানী আকাশপথ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ১৬ জুলাই সব বেসামরিক ফ্লাইটের জন্য আকাশপথ খুলে দেয় পাকিস্তান।
×