ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চের অভাবে এগোচ্ছে না থিয়েটার

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ৩০ আগস্ট ২০১৯

মঞ্চের অভাবে এগোচ্ছে না থিয়েটার

গৌতম পাণ্ডে ॥ ‘আমি বরাবর থিয়েটার দেখতে পছন্দ করি। দেশে বিনোদনের মাধ্যম বলতে এখনও মান নিয়ে টিকে আছে থিয়েটার। নতুন নাটক মঞ্চে এলে আমি মিস করি না। সব নাটক যে ভাল লাগে একথা বলব না। তবে এখানে অশ্লীলতা নেই, পরিবার নিয়ে উপভোগ করা যায়। টেলিভিশনের নাটক আর সিনেমা এখন আর দেখতে ইচ্ছে করে না। তাই পরিবার নিয়ে প্রায়ই যানজট উপেক্ষা করে চলে আসি শিল্পকলায় নাটক দেখতে’। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে সম্প্রতি সপরিবারে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার প্রযোজিত নাটক ‘স্তালিন’ দেখতে এসে একথা বলেন মিরপুরের বাসিন্দা আনোয়ার পারভেজ। টিকেট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক দর্শক মহসিন বললেন, নতুন নাটক মঞ্চে এলে প্রায়ই ছুটে আসি শিল্পকলা অথবা মহিলা সমিতিতে। অনেক মানসম্মত নাটক এখন মঞ্চে হচ্ছে। তবে অনেক সময় নতুন নাটকের ক্ষেত্রে টিকেট না পেলে মন খারাপ হয়। শুধু শিল্পকলা ছাড়া ঢাকা শহরে আর কোন নাট্যমঞ্চ না থাকায় আমাদের মতো দর্শকের জন্য খুব কষ্ট হয়। আমার উত্তরা থেকে আসতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। তার পরও ছুটে আসি এখানে নাটক দেখতে। বাংলাদেশে মঞ্চ নাটকের রয়েছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য, অসংখ্য গুণী টেলিভিশন-চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পী এসেছেন এখান থেকে। নাট্য সমালোচক মফিদুল হক এক প্রবন্ধে লিখেছেন, স্বাধীনতার পর শিল্পের যে শাখায় সবচেয়ে বেশি উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, তা হচ্ছে মঞ্চ নাটক। চলচ্চিত্র নয়, সে অর্থে সাহিত্যও নয়, মঞ্চ নাটক। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে মঞ্চ নাটকের ভ্রƒণের সঞ্চার হয়। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ১৯৭৩ সালে বাদল সরকার রচিত ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকে টিকেট প্রথা চালু করে জন্ম দেন দর্শনীর বিনিময়ে নাটক দেখার ধারা। ১৯৮১ সালের আগস্টে ঢাকার নাট্যদলগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে জন্ম হয় গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। আমাদের থিয়েটার বর্তমানে দ্বারস্থ মিলনায়তনের কাছে। নাটকের জন্য এখন ঢাকায় শিল্পকলাই সম্বল। তবে বেশ কিছুদিন হলো মহিলা সমিতি মিলনায়তন আবারও চালু হয়েছে। ঢাকার আয়তন এখন যত বড়, তাতে সব এলাকার মানুষ যানজট ঠেলে নাটক দেখতে আসতে পারে না। এলাকাভিত্তিক নাট্যচর্চা গড়ে ওঠার মতো অবস্থা নেই। কারণ সব এলাকায় নাটক করার উপযোগী মঞ্চ নেই। সবকিছুর পরে থিয়েটার দ্বারস্থ দর্শকের কাছে। পিটার ব্রুকের কথায়, একজন দর্শকই থিয়েটারের শর্তপূরণ করেন। ঢাকায় চল্লিশের অধিক নাটক মঞ্চে এসেছিল কিছুদিন আগে। চলতি সময়ে আরও বেশি নাটক মঞ্চে আসছে। নাট্য উৎসব হচ্ছে। দর্শক ফিরছে। যারা দলকে সময় দিতে পারছিলেন না নিয়মিতভাবে, তাদের অনেকেই ফেরার ভাবনাটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছেন। ফিরছেনও কেউ কেউ। থিয়েটার আবারও জেগে উঠছে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত নাট্যদল রয়েছে দুই শ’ ২০টিরও বেশি। এরমধ্যে ঢাকায়ই রয়েছে ৬৬টির বেশি। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের এ পর্যন্ত সাধারণ হিসাব অনুযায়ী আশিটির বেশি নতুন নাটক মঞ্চে এসেছে। ২০১৮ সালে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে ঢাকা পদাতিকের ট্রায়াল অব সূর্যসেন, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের ওপেন ক্যাপল, থিয়েটারের দ্রৌপদী পরম্পরা, প্রাঙ্গণেমোরের হাসন জানের রাজা, পালাকারের উজানে মৃত্যু, চট্টগ্রামের নান্দীমুখের আমার আমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফর্মিং স্টাডিজের পাঁজরে চন্দ্রবান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের দ্য আলকেমিস্ট, মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের শ্রাবণ ট্র্যাজেডি, নাট্যম রেপার্টরীর ডিয়ার লায়ার, শিল্পকলা একাডেমির মহাস্থান, লোকনাট্যদলের(বনানী) ঠিকানা, উদীচীর বিয়াল্লিশের বিপ্লব, ঢাকা থিয়েটারের পুত্রসহ অনেক নাটক। ২০১৯ সালে আলোচনায় এসেছে এবং দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে স্পর্ধার জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের স্তালিন, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের অনুদ্ধারণীয়, সিলেটের মনীহরি থিয়েটারের হ্যাপি ডেইজ, পালাকারের রং লেগেছে, ব নাটুয়ার নিশিকাব্য, বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় ‘জলকুমারী’, প্রাচ্যনাট স্কুল অব এ্যাক্টিং এ্যান্ড ডিজাইনের ৩৩তম ব্যাচের সমাপনী নাটক ‘নৈশভোজ’, থিয়েটারের বেহুলা আমি এবং সতিত্ব, নাট্যচক্রের একা এক নারী, নতুন নাট্যদল তাড়ুয়ার লেট মি আউট, অপস্টেজের রাত ভরে বৃষ্টি, থিয়েটার ফ্যাক্টরির আষাঢ়ষ্য প্রথম দিবসে, ইউনিভার্সাল থিয়েটারের রেনুলতা, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের সুতায় সুতায় হানা ও শাপলা, মেঠোপথের পুতুলটিকে দেখে রেখ, বাতিঘরের হিমুর কল্পিত ডায়েরি। এছাড়া মঞ্চায়নের অপেক্ষায় নাগরিক নাট্যাঙ্গনের (অনসম্বল) ইউরিভাইস, থিয়েটারের স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা, চন্দ্রকলার শেখ সাদী, ওপেন স্পেস থিয়েটারের এলিট টেস্টমেন্ট অব রোমিও, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের আইনস্টাইন’সহ বেশ কিছু নতুন নাটক। প্রতি সন্ধ্যায় শিল্পকলা কিংবা মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মঞ্চে নাট্যামোদী দর্শকের ভিড় জমে, আর নতুন নাটক হলে অনেকেই টিকেট না পেয়ে ফিরে যান। নাট্যবিশ্লেষকদের মতে, মানের দিক থেকে সব নাটকই যে ভাল কিংবা অভিনয়শৈলী তাৎপর্যপূর্ণ তা নয়, তবুও নাটক হচ্ছে, দর্শক আসছেন, সব মিলিয়ে বলা যায় দেশের থিয়েটার এগোচ্ছে। কিন্তু ঢাকার প্রেক্ষাপট দিয়ে সারা দেশের থিয়েটারকে বিচার করা ঠিক হবে না। নাট্যসংশ্লিষ্টদের মতে থিয়েটারের অগ্রগতির প্রথম ও প্রধান অন্তরায় হচ্ছে অভিনয়োপযোগী মিলনায়তন সঙ্কট। ঢাকায় শুধু শিল্পকলা একাডেমি ও মহিলা সমিতির মঞ্চ এবং চট্টগ্রামের একটি মঞ্চ ছাড়া দেশে নাটক করার মতো আর কোন মঞ্চ নেই। বর্তমানে যানজটের ঘানি টেনে মিরপুর কিংবা উত্তরা থেকে শিল্পকলা কিংবা মহিলা সমিতিতে নাটক দেখতে আসার মানসিকতা খুব কম লোকেরই আছে। এ প্রসঙ্গে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, মঞ্চে নতুন নতুন নাটক ও নতুন দল আসছে এটা খুবই আশাপ্রদ। অন্যবারের চেয়ে এবারে বিভিন্ন ধরনের নতুন নাটকের সংখ্যা বেশি। কিন্তু মঞ্চ নাটককে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে অভিনয় উপযোগী হলের অভাব। ঢাকাতে শুধু শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক হয়। মিরপুর, গুলশান, বনানী কিংবা উত্তরা থেকে ওখানে যাওয়াটা খুব কঠিন ব্যাপার। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে অভিনয় করার মতো জায়গা দরকার। যাতে দলগুলো সেখানে গিয়ে নাটক মঞ্চায়ন করতে পারে, স্থানীয়রা সেগুলো দেখতে পারে। আমরা তো এজন্য চিৎকার দিয়েই যাচ্ছি। এখন সরকার কি করে দেখা যাক। নতুন হল হওয়ার তৎপরতার দৃশ্যমান কিছুই এখনও নেই। দর্শকের আগ্রহ থাকে নতুন নাটক হলে। এবং সেটা যদি মুখে মুখে প্রচারিত হয় যে এটা ভাল নাটক তাহলে স্বাভাবিকভাবে দর্শক ভিড় করে। থিয়েটার ক্রিটিসিজম যেটা সত্যিকার অর্থে নাট্য সমালোচনা। সেটা খুব দুর্বল আমাদের দেশে। পত্রিকায় প্রতিদিন বিনোদনের জন্য একটা পাতা ভর্তি থাকে। সেখানে কোন সিরিয়াস সমালোচনা হয় না। এটা খুবই দুঃখের এবং এই জায়গাটা পূরণ করা দরকার। এই সমালোচনার গুরুত্ব দেখে দর্শক আরও আসত। এছাড়া ইন্ডিয়াকে যদি অনুসরণ করে আমাদের সরকার, যেমন সেখানে বিভিন্ন গ্রুপ সিলেক্ট করে একটা স্যালারি দেয়। সারা ভারতে কয়েক হাজার দল পায়। এটা ধীরে ধীরে দলের কার্যক্রম অনুযায়ী বাড়ে। আমাদের দেশেও যদি ছোট করে শুরু করা যেত তাহলে ভাল হতো। আমাদের দেশে মঞ্চ নাটক করে জীবিকা নির্বাহ করা যাবে না। থিয়েটারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে করণীয় কি? এমন প্রশ্নের জবাবে নাট্যজন আলী যাকের বলেন, থিয়েটারকে এগিয়ে নিতে অর্থের প্রয়োজন আছে। অর্থের সাবসিডিটা না পেলে এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল। আমরা তো সারাজীবন পকেটের পয়সা দিয়ে থিয়েটার করে আসছি। এখন পর্যন্ত আমরা প্রপার মঞ্চ সুবিধাজনক ভাড়ায় পেলাম না। শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষা ও প্রধান মঞ্চ হচ্ছে একমাত্র জায়গা। সেখানেও নানারকম এক্সপেরিমেন্ট করা যায় না। কারণ, সকাল-সন্ধ্যা শো থাকে। সেখানে কোন পার্মানেন্ট স্ট্রাকচার করা সম্ভব নয়। এসব অভাব তো চিরন্তন-শাশ্বত, অনেক দিনের। সেই কারণে নাটকের অগ্রগতিটা তেমনভাবে হচ্ছে না। তবে নাটকের বিষয়বস্তুতে আমরা বেশ এগিয়ে গিয়েছি। আমাদের সমাজ যতটা এগিয়েছে তার তুলনায় থিয়েটারের ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষা অনেক বেশি এগিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নাট্যকলা বিভাগ হওয়ায় (চট্টগ্রাম পরবর্তিতে ঢাকায়) এখান থেকে যারা বেরিয়ে আসছে তারা নতুন নতুন নিজস্ব আইডিয়া নিয়ে আসছে। এবং সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে তারা নাটক করার চেষ্টা করছে। আমি বলব যে হতাসার কিছু নেই। একটা সমাজ যেমনভাবে চলে, একটা সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা যা হয় তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই থিয়েটার এগিয়ে যাবে, এটাই সাভাবিক। তা সত্ত্বেও আমি বলব থিয়েটারে অনেক মেধাসম্পন্ন কাজ এখন হচ্ছে। তরুণ যারা থিয়েটারে আগ্রহী হচ্ছে এটা খুব সামান্য। যারা চাইছে অল্প পরিশ্রমে আমি এগিয়ে যাব, তাদের দ্বারা কিছু হবে না। এরমধ্যে দশ পার্সেন্ট চাইছে থিয়েটারকে এগিয়ে নিতে। আমাদের এখানে দর্শক ভাল। নাট্যজন শিশির কুমার ভাঁদুড়ি বলতেন দর্শক লক্ষ্মী। তারা আসে নাটক দেখে, এনজয় করে, তারাই আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে। যে কোন শুক্রবার মহিলা সমিতি বা শিল্পকলায় গেলে দেখা যায় দর্শকের একটা ভিড় থাকে। চিন্তা করে দেখেন যে লোকটি বা ফ্যামিলি মোহাম্মদপুর, গে-ারিয়া, উত্তরা বা মিরপুর থাকে তারা শহরের মাঝখানে আসে নাটক দেখতে, এটা একটা বিরাট ব্যাপার। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, এরশাদ যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন নূর মোহাম্মদ খান নামে একজন সংস্কৃতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি এক সময় বাম রাজনীতি করতেন। আমি তার কাছে লিখিতভাবে দিয়েছিলাম যে নাটকের কাছে দর্শককে নিয়ে আসা বড় কষ্টসাধ্য হবে। এখানকার জ্যাম, পরিবহন ও অর্থের অভাব, সমস্যা আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম সেই আইয়ুব আমলের কমিউনিটি সেন্টার আছে, সেগুলোকে থিয়েটারে কনভার্ট করা যায়। আমরা যদি সপ্তাহে একদিন আজিমপুর অথবা গে-ারিয়ায়, একদিন উত্তরায় নাটক করতে পারি তাহলে নাটকটাকে দর্শকের কাছে নিয়ে যাওয়া যাবে। এতে করে দর্শকের সংখ্যা বাড়বে, পাশাপাশি আগ্রহও তৈরি হবে। এবং খরচও কমবে। নাটকের মানের ব্যাপারে তিনি বলেন, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিম আলদীন তো খুব সহজে আসে না। নাটক লেখা হচ্ছে, ওই মানের নাটক খুব একটা হচ্ছে না। কিন্তু নাটক লেখা হচ্ছে। আমি নিশ্চিত এখন যারা লিখছে চান্স পেলে এরাই একদিন সৈয়দ হক কিংবা সেলিম আলদীন হয়ে উঠবে। একই কথার রেশ ধরে নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ বললেন, যদি মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, গুলশান, বনানী, ধানম-ি এসব জায়গায় থিয়েটার হল না হয় তাহলে থিয়েটার মুভমেন্ট আর বাড়বে না। যতটুকু আছে এখানেই আটকে থাকবে। এই কথাটা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে না। মঞ্চ নাটকের মান ভালই হচ্ছে। অনেক ডেডিকেটেড কর্মীও আছে নাটকে। কিন্তু অভিনয়টা করব কোথায়? মনে কর, আমরা যারা অভিজ্ঞ সত্তর পার হয়ে গেছি, তারা সারা মাসে শিল্পকলায় দুটা হল পেলে এতে কি হয়? ইয়াং ছেলেপেলে যখন দেখছে থিয়েটারে অভিনয় করতে পারছে না তখন তারা ভিডিও কিংবা টেলিভিশনে চলে যাচ্ছে। এখান থেকে কোন টাকাপয়সা দিতে পারছি না আমরা, সেটাও একটা কারণ। এজন্য বহুবার বলছি এটাকে প্রফেশনালি নেয়ার জন্য সরকারের একটা বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। মঞ্চসারথী আতাউর রহমান বললেন, মাঝখানে একটু খরা গিয়েছিল থিয়েটারে, এখন সরব। আমি নতুন কাজে বিশ্বাসী। নুতনরা অনেক কিছু এক্সপেরিমেন্ট করছে ভাল। যেমন বুদ্ধদেব বসুর ‘রাতভর বৃষ্টি’ তারপর তনিমা হামিদের একক অভিনয় ‘একা এক নারী’। অনেকে অনেক কিছুই করছে। কেউ কেউ মনোড্রামা করছে, দুজনের অভিনয় করছে, মন্দনা। আমি অন্তত পাঁচ/ছয়টা ঢাকা ইউনির্ভাসিটি নাটম-লে যে কয়টিই দেখেছি আমার মনে হয়েছে একটা নতুনত্বের স্বাদ আছে। হয়ত সম্পূর্ণ পার্ফেক্ট না কিন্তু সব জায়গাতে উড ইউ সামথিং নিউ। এইটেই কিন্তু সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি। কিছু বড় ডিরেক্টরদের নাটক আমার ভালও লাগেনি। কিন্তু ইয়াং জেনারেশনের কাজ খুব ভাল লেগেছে। ওরা বসে নেই, খুবই এ্যাকটিভ। টেলিভিশন মিডিয়া দুর্বল হয়ে যাওয়াতে এটা আবার চাঙ্গা হচ্ছে। টেলিভিশন নাটক এখন কেউ দেখতে চায় না। তিনি বলেন, থিয়েটার হচ্ছে বিনোদন ও গণশিক্ষার একটা মাধ্যম। এটা দিয়ে মানুষ শেখে। সামাজকে চেনে, সমাজের ত্রুটিগুলো জানে, রাজনৈতিক, সামাজিক সব কিছুই থিয়েটারে আসে। সেক্সপিয়ার, রবীন্দ্রনাথের নাটকে রাজনীতি, প্রতীকের মাধ্যমে রাজনীতি আছে। যতদিন পর্যন্ত আমরা থিয়েটারে প্রফেশনাল হতে না পারছি ততদিন পর্যন্ত এটা চলবে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে সেটা সাকসেস হলে আরও উন্নত হবে। সেটা যদি হয় তাহলে আমরা বলতে পারব তুমি টেলিভিশনে যেওনা, মঞ্চে অভিনয় কর। একটা নাটকে অভিনয় করে তিন হাজার টাকা পায়।
×