ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাকি জঙ্গী সংগঠনের সহায়তায় রোহিঙ্গারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৩০ আগস্ট ২০১৯

পাকি জঙ্গী সংগঠনের সহায়তায় রোহিঙ্গারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে দিনকে দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) নামের উগ্রবাদী সংগঠনটি। আরও নতুন নতুন সংগঠন তৈরি করছে রোহিঙ্গারা। এসব উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে দেশী-বিদেশী জঙ্গী সংগঠনের যোগাযোগ আরও বাড়ছে। বিশেষ করে পাকিস্তানী জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোর সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে। পাকিস্তানে থাকা রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। মাদক, খুন, দখল থেকে শুরু করে নানা অপরাধ সংঘটিত করছে রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো। বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও দেশীয় জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে অদূূর ভবিষ্যতে রোহিঙ্গারাই দেশের অন্যতম বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়াও বিচিত্র নয়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। পুলিশ সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার শাসনামলে বাংলাদেশে আশ্রয় দেন। অথচ মিয়ানমারে ১২ শতক থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাস করছে বলে ইতিহাসবিদ ও রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর দাবি। জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের বর্তমান সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় চার লাখে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিজ দেশ মিয়ানমার ছাড়াও বিদেশে নানা অপরাধ কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ বহু পুরনো। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) কর্তৃক হামলার গুরুতর অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকেই সেখানে সেনাবাহিনী দমনপীড়ন শুরু করে। সেনাবাহিনীর মারাত্মক নিপীড়নে বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গারা নিজ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়। আশ্রয় পাওয়ার পর থেকেই তারা ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়াসহ মাদক ব্যবসা, বেনামে পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশ যাওয়া, খুন, দখলসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়তে থাকে। রোহিঙ্গাদের কারণে এইচআইভি ভাইরাস ও কলেরা রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা প্রায় আটশ’ একর পাহাড়ী বন কেটে বসতি গড়ে তুলেছে। নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের বাঙালীদের সঙ্গে মিশে যাওয়া ঠেকাতে পুলিশ সদর দফতরের তরফ থেকে একটি বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে শরণার্থী শিবির ব্যতীত রোহিঙ্গারা অন্য কোথাও বসবাস করতে পারবে না। রোহিঙ্গাদের কোন প্রকার আশ্রয়-প্রশ্রয়, বাসা ভাড়া, বিয়ে করা, চাকরি, বসবাসের ব্যবস্থা, অন্যত্র চলে যেতে সহায়তা করা যাবে না। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টাকারী রোহিঙ্গাদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেয়া হয়। সে মোতাবেক দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে বাড়তি তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। নানা অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গাদের গ্রেফতারে এবং পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের আটক করতে চলমান অভিযানে প্রায় চারশ’ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। আর অভিযানকালে গোলাগুলিতে নিহত হয় দশ রোহিঙ্গা। প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনের চেষ্টাকালে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। এত কিছুর পরেও রোহিঙ্গাদের পলায়ন এবং নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না।
×