ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিলায়েন্স পাওয়ারের সঙ্গে ৭৫০ মেও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৩০ আগস্ট ২০১৯

রিলায়েন্স পাওয়ারের সঙ্গে ৭৫০ মেও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ারের সঙ্গে একটি ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি করতে যাচ্ছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। মেঘনাঘাটে কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে রিলায়েন্স পাওয়ার। শুরুতে রিলায়েন্স নিজস্ব এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করার কথা বললেও এখন পেট্রোবাংলা থেকেই গ্যাস নিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রটির জ¦ালানি চাহিদা মেটানো হবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে অপ্রয়োজনীয় বলছেন। জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালিদ মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের চুক্তি করা হবে। কেন্দ্রটি রিলায়েন্স নির্মাণ এবং পরিচালনা করবে। এখান থেকে পিডিবি শুধু বিদ্যুত কিনবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রটির জন্য পেট্রোবাংলাই গ্যাস সরবরাহ করবে। এজন্য রিলায়েন্স তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে জ¦ালানি সরবরাহ চুক্তি করছে। ভারতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স পাওয়ার অনেকদিন থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় দেশটির রিলায়েন্স এবং আদানিকে বাংলাদেশের বিদ্যুতখাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। তখনকার প্রেক্ষিতে দেশের সঙ্কট বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্র নির্মাণের যৌক্তিকতা থাকলেও কেন এখন বিদ্যুত কেন্দ্র বসে থাকার পরও এই চুক্তি করা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শুরুতে রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশে একটি এলএনজি টার্মিনালের সঙ্গে ৭৫০ মেগাওয়াট করে চারটি কেন্দ্র নির্মাণ করার প্রস্তাব নিয়ে আসে। সঙ্গে একটি এলএনজি টার্মিনালও নির্মাণ করতে চায় তারা। ঠিক করা হয় রিলায়েন্সের বেঁচে যাওয়া এলএনজি টার্মিনালের অবশিষ্টাংশ পেট্রোবাংলা কিনে নেবে। রিলায়েন্স মহেশখালীতে এলএনজি দেবে আর এর বিপরীতে তাদের মেঘনাঘাট থেকে গ্যাস দিতে হবে। কিন্তু মেঘনাঘাটে গ্যাসের সরবরাহ না বাড়িয়ে রিলায়েন্সকে গ্যাস দেয়া হলে ঢাকা অচল হয়ে যাবে। এজন্য শুরু থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছিল পেট্রোবাংলা। পিডিবি সূত্র বলছে, ২০১৫ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে আসছে রিলায়েন্স। দেখতে দেখতে ৫ বছর কেটে গেছে। এখন এই পর্যায়ে দেশে গ্যাস সরবরাহ ক্ষমতা যেমন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে তেমনি বিদ্যুত কেন্দ্রও রয়েছে চাহিদার অতিরিক্ত আট হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু ৫ বছর আগে এই চিত্র ছিল না। তখন বিদ্যুত সঙ্কটের পাশাপাশি বিদ্যুতখাতে বিনিয়োগ সঙ্কটও ছিল। ওই পরিস্থিতিতে রিলায়েন্সের সঙ্গে চুক্তির যৌক্তিকতা থাকলেও এখন প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার এক দিকে বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রেখেছে। এখন বলা হচ্ছে আমরা নেপাল এবং ভারতে বিদ্যুত রফতানি করতে চাই। অন্যদিকে আবার নতুন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি করছে। রিলায়েন্স কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করতেই ৫ বছর সময় নিয়েছে। সেখানে এই কেন্দ্র নির্মাণ করতে কম করে হলেও আরও ৪ বছর সময় প্রয়োজন হবে। আগামী চার বছরের মধ্যে দেশে আরও মেগা পাওয়ার প্লান্ট আসবে। সঙ্গত কারণে আরও বেশি কেন্দ্র অলস বসে থাকবে বলে মনে করা হয়। সম্প্রতি ব্যবসায়ী নূর আলীর মালিকানাধীন ইউনিক হোটেল এ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড বাংলাদেশের বিদ্যুত বাণিজ্যে নিজেদের নাম লিখিয়েছে। তারাও মেঘনাঘাটে একটি ৭৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করেছে। হোটেল- রিসোর্ট, ম্যানপাওয়ার, আবাসন এবং মিডিয়া বাণিজ্যের সঙ্গে নূর আলী অংশীদার হিসেবে মার্কিন কোম্পানি জেনারেল ইলেক্ট্রিক গ্লোবাল এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট এবং স্ট্রাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেডকে সঙ্গে নিয়েছে। এই কেন্দ্রটিরও ২০২২ সালে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পিত উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে তা ভোগাবে সকলকে। যত বেশি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে তত বেশি বিদ্যুত কেন্দ্র বসে থাকবে। এতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেলে আমাদের দামী বিদ্যুত কেউ কিনতে চাইবে না এটি স্বাভাবিক। জানতে চাইলে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, পাঁচ বছর আগে যে বাস্তবতায় এই চুক্তির কথা এসেছিল এখন কি তা আদৌ আছে কি না বিবেচনা করতে হবে। সরকার একদিকে বলছে বিদ্যুত রফতানি করবে তার অর্থ হচ্ছে বিদ্যুত প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রয়েছে। অন্যদিকে তারা কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করছে। কিন্তু কেন? কেন্দ্র যদি বসে থাকে তাহলে আরও কেন্দ্র বানিয়েও তো বসিয়ে রাখতে হবে। এতে ব্যয় বাড়বে। এই ব্যয়ের ভার আমাদের অর্থনীতি কী নিতে পারবে সেটি বিবেচনা করা দরকার।
×