ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ফের উর্ধমুখী, আরও ৩ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৩০ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ফের উর্ধমুখী, আরও ৩ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ফের উর্ধমুখী। বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয়েছে আরও তিন ডেঙ্গু রোগীর। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ খুব বেশি কমেনি। বৃহস্পতিবারও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৪১ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৪০১ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২৬০ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৭৭ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। রাজধানীর অন্য সব হাসপাতালেও একই অবস্থা। বৃষ্টি হলেই এডিস মশার প্রজনন আরও অনেকগুণ বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগেই এডিস মশার প্রজনন কার্যক্রম ব্যাহত করাসহ প্রত্যেক নগরবাসীর সচেতন হওয়ার বিষয়ের ওপরও জোর দিয়েছেন তারা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবারও মারা গেছেন আরও তিনজন। বুধবার রাতে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে এক সংবাদকর্মীর স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০) মারা যান। তিনি শরীয়তপুরের স্থানীয় ‘রুদ্রবার্তা’ পত্রিকার সাংবাদিক জাবেদ শেখের স্ত্রী। পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ধানুকা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন শারমিন। তাদের ছেলে তামজীদ (১০) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর বৃহস্পতিবার ভোরে রংপুর মেডিক্যালের আইসিইউতে মৃত্যু হয় ১২ বছরের শিশু মনিষার। একই দিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সজীব দাশ নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে আনা হয়েছিল। এভাবে সরকারী হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৫২ এবং বেসরকারী পরিসংখ্যানে তা দেড় শতাধিক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নতুন আক্রান্তের তুলনায় ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা অব্যাহত থাকে বৃহস্পতিবারও। গত এক সপ্তাহ ধরেই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা নি¤œগামী রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১,১৮৯ এবং ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১,৩৭৮ জন। সারাদেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট রোগীর ৯২ শতাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে ঢাকার বাইরে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি রয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় নতুন ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৫২৪ ও ৬১৯জন এবং ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৬৬৫ ও ৭৫৯ জন জন। সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ৫,০৩০ জন, যা আগের দিনের তুলনায় ৪ শতাংশ কম। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২,৭৮৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ২,২৪৫ জন। এ বছর জানুয়ারি থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৬৮,৪১০ জন ও ৬৩,২০০ জন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ১৮০টি মৃত্যুর তথ্য প্রেরিত হয়েছে। তাদের মধ্যে আইইডিসিআর ৮৮টি মৃত্যু পর্যালোচনা সমাপ্ত করে ৫২টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় ১৫৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলায় ২৯ জন, চট্টগ্রামের ১১টি জেলায় ৯৪ জন, খুলনা বিভাগের ১৮৪টি জেলায় ১৭৯ জন, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় ৬৯ জন, রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় ১৫ জন, বরিশালের ৬টি জেলায় ১০৬ জন এবং সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় ১৩ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। আর বর্তমানে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ৫০৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৮৫ জন, খুলনা বিভাগে ৫৯৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ২০০ জন, রংপুর বিভাগে ৬৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৩৪১ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭৬ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৮৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৩ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ জন, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ৩ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫৬ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৯ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪৪ জন, কুয়েট বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৪ জন ও পঙ্গু হাসপাতালে ২ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর থেকে জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে মনীষা আক্তার নামে (১২) এক শিশু মারা গেছে। গত ২৬ আগস্ট দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত মনীষা দিনাজপুরের বোঁচাগঞ্জ উপজেলার মকবুল হোসেনের মেয়ে। বৃহস্পতিবার সকালে রমেক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের মুখপাত্র মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ একেএম শাহেদুজ্জামান জানান, মৃত মনীষার বাবা ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত মনীষা। সেখানেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে তাকে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এনে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত ২৬ আগস্ট দিনাজপুর থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় মনীষাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন থেকে বুধবার রাত সোয়া ৩টার দিকে সে মারা যায়। এর আগে গত ৬ আগস্ট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে গাইবান্ধার পলাশবাড়ির রিয়ানা (৩) নামে এক শিশু ও ১১ আগস্ট মনিরুল ইসলাম (৩২) নামে লালমনিরহাটের এক কাপড় ব্যবসায়ী এবং ২৭ আগস্ট দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মাহাতাব উদ্দিন (২৪) নামে এক যুবকের মুত্যু হয়। তারা সকলেই ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রংপুরে আসে এবং রমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ নিয়ে রমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা দৌলতপুর কুষ্টিয়া থেকে জানায়, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ছাতারপাড়ার দাড়েরপাড়া নামক ছোট্ট একটি গ্রামে ৩৮ নারী-পুরুষ ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের পর সেখানে বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। গত দু’দিনে ওই গ্রামে নতুন করে আরও ২ ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে সেখানে মশা নিধন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ডেঙ্গু রোগী শনাক্তে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে টিম কাজ করছে। নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়েছে ছাতারপাড়াসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে। অস্থিরতা কাজ করছে অন্য গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝেও। তাদের দাবি শুধু ছাতারপাড়া গ্রামই নয়, আশপাশের গ্রামকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারিতে রাখা উচিত। তা না হলে যে কোন সময় অন্য গ্রামেরও একই চিত্রের আশঙ্কা রয়েছে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, নতুন করে আর কেউ যেন আক্রান্ত না হয় সে জন্য তার নেতৃত্বে উপজেলার সকল বিভাগের কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত টিম সেখানে সর্বক্ষণিক কাজ করছেন। তিনি বলেন, শুধু ছাতারপাড়া গ্রামই নয়, আশপাশের গ্রাম ও ইউনিয়নকেও বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে। ওইসব গ্রামেরও এডিস মশার বিস্তার রোধে স্প্রে ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×