নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৯ আগষ্ট ॥ ঘাটাইল উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী ও পর্যটন সম্ভাবনাময় সাগরদীঘির সৌন্দর্য এখন ধ্বংসের মুখে। অবৈধ দখল, মাছ চাষ ও পুকুরের দুই পাড়ে পোল্ট্রি ফার্মসহ নানা অনিয়মের কবলে জরাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী সাগরদীঘি। এক সময় এই দীঘির যৌবনের আলোক ছটায় মুগ্ধ হতো প্রকৃতি প্রেমিক দর্শনার্থীরা। তখন দীঘির পাড় ঘেঁষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল সবুজের সমারোহ। দীঘির স্বচ্ছ পানির ঢেউয়ের শব্দ আর চিরসবুজ পত্র পল্লবের নান্দনিক পরিবেশে বিষণœ মনেও দোলা লাগতো চোখের পলকে। এক সময় গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদ্দুরে অচেনা পথিকের স্নানের প্রয়োজন ও পানির তৃষ্ণা দুই-ই মেটাতো এই দীঘি। তাছাড়াও দীঘিকে ঘিরে রয়েছে পাল রাজাদের নানা রূপকথা আর গল্পকাহিনী। তৎকালীন সাগর রাজার নামে দীঘিটির নামকরণ হয় সাগরদীঘি। সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকেরা বিশ্বাস করেন, সাগর রাজার প্রিয়তমা রানীর অতৃপ্ত আত্মা রাতের আঁধারে এখনও ঘুরে বেড়ায় দীঘির পাড়ে। তাই তারা রানীর আত্মাকে শান্ত রাখতে বিভিন্ন পূজা অর্চনা করে থাকে। উপজেলা সদর থেকে ৩০ কি:মি: পূর্বে এই দীঘির অবস্থান। পাড়সহ মোট ৩৬ একর জমিতে দীঘিটির অবস্থান। দীঘির পশ্চিম পাড়ের অর্ধেক জমিতে এলজিইডি’র অস্থায়ী অফিস, বাকি অর্ধেক জমিতে গড়ে উঠেছে পোল্ট্রিফার্ম, পূর্বপাড়ে সাগরদীঘি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। উত্তর পাড়ে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ পাড়ে দাখিল মাদ্রাসা। দীঘির দক্ষিণ-পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে আরেকটি পোল্ট্রি ফার্ম। স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারের কাছ থেকে দীঘিটি লিজ এনে প্রতিবছর মাছ চাষ করে। মাছ চাষ করার জন্য মাছের খাদ্য, পোল্ট্রির বিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যার প্রভাবে দীঘির প্রাণ ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ভরে যাচ্ছে দীঘির তলদেশ। দুই পাড়ের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেখানে উপভোগ করবে বিশুদ্ধ বাতাস আর প্রশান্তির নিশ্বাস সেখানে তাদের নাক বন্ধ করে চলতে হয়।
বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা দীঘির সুনাম শুনে ঘুরতে আসে এবং ফিরে যায় অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা নিয়ে।
দীঘির আগের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা খুব দ্রুতই দীঘির পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব। সাগরদীঘিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র করার প্রক্রিয়াও চলছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: