ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাড়তি ব্যয়ের বোঝা

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৩০ আগস্ট ২০১৯

বাড়তি ব্যয়ের বোঝা

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পর্যায়ক্রমিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফা উদ্যোগও ব্যর্থ হওয়ায় বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবতা হলো, নিতান্তই মানবিক কারণে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লক্ষাধিক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ জোরপূর্বক তাদের ফেরত পাঠাতে চায় না সেদেশে। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও নাগরিকত্বসহ চার দফা দাবি পূরণ না হলে প্রত্যাবাসনে অনিচ্ছুক। অন্যদিকে মিয়ানমার চীন-ভারত-জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলেও নানা নাটক ও কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে, যার পেছনে রয়েছে সে দেশের শক্তিশালী সেনাবাহিনী। অন্যদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকে অলস সময় ও অবসরের সুযোগে জড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় রাজনৈতিক দল-উপদলসহ নানা সংঘাত-সংঘর্ষ-অপকর্ম-ইয়াবা ও অস্ত্র পাচার ইত্যাদিতে। ভুয়া ও জাল পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে নানা অপরাধ-অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার খবরও আছে। বিপুল এই আশ্রিত জনগোষ্ঠীর পেছনে সরকারের প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে ৩০ কোটি ডলার বা আড়াই হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে বাৎসরিক খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়ে গেছে- ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থল তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। পাহাড় ও বনভূমি কেটে নির্মাণ করা হয়েছে এসব শরণার্থী ক্যাম্প। উজাড় হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার একর বনভূমি যা পরিবেশের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। সমূহ ক্ষতি হয়েছে জীবজন্তুসহ জীববৈচিত্র্যের। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় স্থায়ী আবাসস্থল নির্মাণেও নোয়াখালীর ভাসানচরে আবাসন প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ইতোমধ্যেই ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। সে তুলনায় রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘসহ বিদেশী ত্রাণসাহায্য ও অনুদানের পরিমাণ খুবই কম বা নগণ্য বলা চলে। বলাবাহুল্য, প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে জাতীয় বাজেট প্রণয়নে। এর বাইরেও চলতি বছর বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসন, রাজধানীসহ সারাদেশে মশক নিধনসহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দফায় দফায় বাড়তি ব্যয় করতে হয়েছে ও হচ্ছে সরকারকে। তবু আশার কথা এই যে, এতসব সমস্যা সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, স্বাধীনতা অর্জনের ৪৮ বছরে বাংলাদেশের সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক অর্থনীতির বিস্ময়কর রূপান্তর ঘটেছে। এর জন্য ইতোমধ্যে মিলেছে বিশ্ব স্বীকৃতিও। হংকং-সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের গবেষণা সেল এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের নিরিখে (জিডিপি) ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। বিস্ময়কর এই উত্থান ও উন্নয়নের পেছনে প্রায় ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে বর্তমানে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী ও মেধাবী প্রতিভা। যে কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে অভিহিত বহির্বিশ্বে। ২০২৪ সাল নাগাদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো সুবৃহৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে আরও কয়েক ধাপ। ২০২১ সালের মধ্যে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে যে কোন মূল্যে কমিয়ে আনতে হবে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক পুনর্বাসন এরই একটি অংশ, যার জন্য সরকারকে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে।
×