ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব জায়গা থেকে কবি -মৌসুমী হামিদ

প্রকাশিত: ১২:৫২, ২৯ আগস্ট ২০১৯

প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব জায়গা থেকে কবি -মৌসুমী হামিদ

ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা দর্শক প্রিয় অভিনয় শিল্পীর নাম মৌসুমী হামিদ। গেল কোরবানির ঈদে তার অভিনীত ১৩টি নাটক টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে। শুরুতে কেমন সাড়া পেলেন জানতে চাইলে মৌসুমী বলেন, ভালই সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে, শহিদ উন নবীর ‘কোরবানি ও আই প্রমিজ ইউ’, মনজুরুল আলমের ‘হৃদয় ডানার প্রজাপতি’, নাটকগুলো থেকে। কোরবানির ঈদে প্রচারিত নাটক নিয়ে দেশের বরণ্যে নাট্য ব্যক্তিত্বরা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। সত্যি কি ইতিবাচক মন্তব্য করার মতো কোন নাটক হয়নি? মৌসুমী হামিদ; যেসব নাটকগুলো আলোচনায় এসেছে দেশের বরণ্যে নাট্য ব্যক্তিত্বরা ওইসব নাটক নিয়েই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। দর্শক সব নাটক দেখে না। দর্শক এখন নির্দিষ্ট কিছু শিল্পীর নাটক দেখে। নির্দিষ্ট শিল্পী ছাড়া দর্শক নাটক দেখা ছেড়ে দিয়েছে। পরিচালকরা যেসব শিল্পীদের উপস্থাপন বেশি করেছে দর্শক সেসব নাটক বেশি দেখেছে। আমার মনে হয় সেগুলো নিয়েই মন্তব্য করেছে তারা। আমি যেসব নাটকে অভিনয় করেছি সেগুলো সব আলোচনার নয়। সব নাটক আলোচনায় আসে না। ঈদের দিন আমার অভিনীত একটি নাটক প্রচার হয়েছে রেজানুর রহমান পরিচালিত ‘আসেন মিষ্টিমুখ করি’। এগুলো দর্শক দেখবে না। এগুলো নিয়ে কেউ মন্তব্যও করবে না। আমি বলব ভাল নাটক হচ্ছে। আমি নিজেও দেখেছি এবারের ঈদে অনেক ভালো নাটক হয়েছে। সব নাটক নিয়ে তারা বলেননি। অবশ্যই কিছু নাটক ভাল হয়েছে। নিজের অভিনীত ছাড়া সহশিল্পীদের নাটক দেখা হয়েছে? হ্যাঁ কয়েকটি নাটক দেখেছি। তার মধ্যে থেকে ভাল লেগেছে মিজানুর রহমান আরিয়ানের সাবলেট, শহিদ উন নবীর আগুনের দিন শেষ হবে একদিন ও আশফাক নিপুণের এই শহরে নাটকগুলো অনেক ভাল লেগেছে। বরাবরই গল্পভিত্তিক কাজ করতে পছন্দ করি। কুতুকুতু গল্পের নাটক পছন্দ করি না, দেখিও না। সত্যি কথা বলতে এসব গল্পে কাজ করতে কেউ নেয়ও না। প্রতিষ্ঠিত অভিনয় শিল্পী ছাড়া তরুণদের এই সেক্টরে সার্ভাইভ করা কতটুকু সম্ভব? বুদ্ধিমান যারা, যাদের অভিনয় করার মন-মানসিকতা আছে এবং অভিনয় করতে চায় অনেক পরিশ্রমী। তারা অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে। সিনেমা এবং নাটকে অভিনয় করছেন তুলনামূলক কোন সেক্টরের অবস্থা ভাল বলে মনে করেন? আমি মনে করি দুটি সেক্টরই ভাল অবস্থানে আছে। এখন প্রচুর ভাল নাটক-সিনেমা হচ্ছে। তাছাড়া একজন শিল্পী হিসেবে আমার কাজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। ২৭ আগস্ট ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। একজন তরুণ সচেতন অভিনয় শিল্পী হিসেবে জাতীয় কবির চেতনাকে (অসাম্প্রদায়িক সত্য প্রতিষ্ঠিার নির্ভীক যোদ্ধা) বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় কতটুকু উপলব্ধি করেন। অনেকেই আছেন যাদের কাছে কাজী নজরুলের কবিতা জানতে চাইলে বলতে পারবে না। খুব কম লোকই তার কবিতা বলতে পারবে। তবে কারও ওপর জোর করে নজরুল চাপিয়ে দিতে পারবেন না। নজরুল সম্পর্কে জানতে নিজ থেকে আসতে হবে। নজরুলকে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। এটি যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি নজরুলকে পছন্দ করি। নজরুলের একটি কাজও করেছি। তরুণ প্রজন্মের মনোরাজ্যে কবিসত্তার উপস্থতি কেমন বলে আপনি মনে করেন? সবার কবি হবার দরকার নেই। সবাইকে কবি হতেও হবে না। যে কবি তার কবিসত্তার দরকার আছে। প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব জায়গা থেকে কবি। সম্প্রতি ‘বাদল ও বরিষণে’র ছায়া অবলম্বনে ‘কালো হরিণ চোখ’ নাটকে আপনি অভিনয় করেছেন। নাটকে আপনার অভিনীত চরিত্র ‘কাজরী’ সম্পর্কে বলুন। গল্পটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। কাজটি করে সন্তুষ্ট। মাছরাঙ্গা টিভিতে ‘কালো হরিণ চোখ’ নাটকটি প্রচারিত হয়েছে। পরিচালক সীমান্ত সজলের ডেডিকেশন থেকে আমি মুগ্ধ। এ সময়ে নজরুল নিয়ে ডেডিকেটেড কাজ করতে পারে আমার ধারণা ছিল না। খুবই অবাক হয়েছি তার শূটিংয়ে গিয়ে। আমি খুবই মুগ্ধ। তাছাড়া সাহিত্যনির্ভর চরিত্রে অভিনয় করা চ্যালেঞ্জের। এর জন্য পড়াশোনা করতে হয়। স্যাটেলাইটের কল্যাণে দেশে চ্যানেল বাড়ছে। নাটকের সংখ্যা বাড়ছে। নিত্যনতুন প্রযুক্তি বাড়ছে। তারপরও নাটকের ওপর থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কেন? অতিরিক্ত চ্যানেল হলে দর্শক তো মুখ ফিরিয়েই নেবে। আগে চ্যানেল ছিল হাতেগোনা। এখন অনেকগুলো চ্যানেল। কম চ্যানেল হলে কাজের মান নির্ণয় করা যেত। এখন নির্ণয়ের সুযোগ নেই। দেখা গেছে সব চ্যানেলে এক সঙ্গে অনেকগুলো নাটক প্রচার হচ্ছে। দর্শক তখন কোনটা রেখে কোনটা দেখবে। দর্শক সব নাটক দেখতে পারছে না। যার কারণে মান নির্ণয়ও করতে পারেন না। কারণ ৩৭৪টি চ্যানেল বানিয়ে রেখেছে কখন কি হচ্ছে কেউ জানে না। যার কারণে কেউ দেখছেও না। আর এখন হয়েছে ইউটিউব চ্যানেল। সবাই ভিউ নিয়ে লাফাচ্ছে। একটি চ্যানেল খুলতে কিছুই লাগে না। যে কেউই একটি চ্যানেল খুলে বসে থাকে। ইউটিউবের জন্য ডজন খানেক শিল্পী নিয়ে কাজ করে আপলেড করে দিচ্ছে। আর যারা ভাল কাজ করছে সেগুলো হাইলাইট হচ্ছে না। ক্রিয়েটিভ লোকগুলো ভুগছে। এগুলো আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য খারাপ। এত কিছুর দরকার নেই। টিভি নাটক ছাড়া মৌসুমী হামিদের অভিনীতি আলোচিত সিনেমা ‘জালালের গল্প’, ‘ব্ল্যাক মেইল’ ও পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২’ সহ একাধিক চলচ্চিত্রে দর্শক নন্দিত অভিনয় করেছেন। মুক্তির অপেক্ষায় আছে দুটি চলচ্চিত্র। গাজী রাকায়েতের ‘গোর’ ও আরিফুর জামান আরিফের ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’। ‘গোর’ ছবিটি চলতি বছরই মুক্তি পাবে বলে মৌসুমী হামিদ জানিয়েছেন।
×