ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাওনা টাকা চাওয়ায় না’গঞ্জে গলাকেটে ইমামকে হত্যা করে বন্ধু

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২৯ আগস্ট ২০১৯

পাওনা টাকা চাওয়ায় না’গঞ্জে গলাকেটে ইমামকে হত্যা করে বন্ধু

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ জেলার সোনারগাঁয়ে মসজিদের ভেতরে ইমাম দিদারুল ইসলাম (২৬) কে গলাকেটে হত্যা করার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে ইমাম দিদারুল ইসলামকে ২১ আগস্ট গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে তারই বন্ধু ও আরেক মসজিদের ইমাম ওহিদুর জামান (২৮)। ঘাতক তাকে শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে নিহতের পিঠের ওপর রেখে দেয়। ইমাম দিদারুল ইসলাম হত্যা মামলার মূল আসামি ওহিদুর জামানকে বুধবার ভোরে মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতিসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়। বুধবার বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃত ওহিদুর রহমান নড়াইল জেলার নড়াগাথি থানার কলাবাড়িয়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। পুলিশ সুপার জানান, মূলত ঘাতক ওহিদুর পাওনা টাকা ফেরত না দেয়ার জন্যেই পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ইমাম দিদারুল ইসলামকে গলাকেটে হত্যা করে। হত্যাকান্ডটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাওহীদের নামও ব্যবহার করে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, স্বর্ণেরবার কিনে দেয়ার কথা বলে ওহিদুর বেশ কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন দিদারুলের কাছ থেকে। পরে স্বর্ণের বার না দেয়ায় দিদারুল তার টাকা ফেরত চেয়ে চাপ প্রয়োগ করলে এ নিয়ে দুই ইমামের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এরই জের ধরে ওহিদুর দিদারুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। শিবচর এলাকা থেকে তিনি একটি চাপাতিও কেনেন। পরে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে গত ২১ আগস্ট মধ্যরাতে সোনারগাঁও উপজেলার মল্লিকপাড়া এলাকার নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল জামে মসজিদের ইমাম দিদারুলের সঙ্গে দেখা করেন ওহিদুর। এক পর্যায়ে তিনি ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত কোকা-কোলা খাইয়ে দিদারুলকে অচেতন করে সঙ্গে থাকা চাপাতি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করেন। পরে নিজের রক্তমাখা জামাকাপড় খুলে পাশের পুকুরে ফেলে মসজিদের ওজুখানায় গোসল করে ঢাকার মিরপুর হয়ে মাদারীপুর পালিয়ে যান। সকালে খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ মসজিদের ভেতর থেকে দিদারুল ইসলামের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত ইমাম দিদারুলের ভাই মিজানুর রহমান সোনারগাঁ থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। পরে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। মসজিদের পাশের পুকুর থেকে রক্তমাখা পোশাক ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার হলে পুলিশ হত্যাকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোরে শিবচর থেকে ওহিদুরকে গ্রেফতার করা হলে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দিদারুলকে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন। তিনি আরও জানান, হত্যার পরে দিদারুল ইসলামের ব্যবহৃত খাতায় ‘হিযবুত তাওহীদের সদস্য, সে আমাদের দল থেকে অস্ত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে এসেছে তাই তাকে আমরা মেরে ফেলেছি’ এ ধরনের আরও কিছু লিখে যায়। এর আগে বুধবার দুপুরে তার স্বীকারোক্তিতে ঘটনাস্থল নারায়ণদিয়া এলাকার বায়তুল জালাল জামে মসজিদের পাশের একটি পুকুর থেকে দুটি কোমল পানীয় কোকের বোতল ও একটি লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়।
×