ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এরশাদের আসনে মনোনয়ন নিয়ে জাপায় বিভক্তি

প্রকাশিত: ১১:২৫, ২৯ আগস্ট ২০১৯

এরশাদের আসনে মনোনয়ন নিয়ে জাপায় বিভক্তি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-বিভক্ত দলটির সিনিয়র নেতারা। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন অন্তত চারজন। এর মধ্যে পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও এরশাদের সহধর্মিণী রওশন তার ছেলে শাদ এরশাদকে এই আসন থেকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু দলের অনেক সিনিয়র নেতা ও স্থানীয় জাপার নেতাকর্মীরা তা মানতে নারাজ। তারা চান রংপুরের তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী নির্বাচিত হোক। এতে দল আরও বেশি শক্তিশালী হবে। জাপার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুরে দলে নিজেদের অবস্থান আরও বেগবান হবে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতারা। এদিকে রংপুর-৩ আসনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে গত শনিবার গঠিত পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তারা বলছেন, দলের গঠনতন্ত্রে বিভাগ অনুযায়ী সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বোর্ড গঠন করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। তাছাড়া এরশাদের ছোট ছেলে এরিক এরশাদকে নিয়ে দলের মনোনয়ন সংগ্রহ করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া দল এখন সার্কাসে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, দলীয় চেয়ারম্যানের একমাত্র উত্তরসূরি প্রতিবন্ধী সন্তানকেও এখন রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতির কাছে আমার প্রশ্ন, যারা এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের বিবেক বুদ্ধি কি সব লোপ পেয়ে গেছে? জানা যায়, এরশাদ পরিবারই এখনও রংপুর-৩ আসনে মনোনয়নের বিষয়ে একমত হতে পারেনি। পরিবার থেকে মনোনয়ন দৌড়ে এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ ছাড়াও ভাতিজা- সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার, ভাতিজা (মামাত ভাইয়ের ছেলে) মেজর (অব) খালেদ আখতার, ভাগনি (মেরিনা রহমানের মেয়ে) মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পাও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। পরিবারের বাইরে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যে আল্টিমেটাম দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলের দুর্গখ্যাত এ আসনে মনোনয়ন পেলেই বিজয়ী হবেন এমনটা চিন্তা থেকেই লবিং-তদবির বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রার্থীরা। অনেকেই পার্টির চেয়ারম্যান মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার আগ্রহ রয়েছে প্রয়াত এরশাদের সহোদর ও পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। সেক্ষেত্রে এ আসনে অনেক হিসেব-নিকেশ করে মনোনয়ন দিতে চান তিনি। জানা যায়, গত ২০ আগস্ট মঙ্গলবার রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে যান জিএম কাদের। এ সময় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের নেতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সমাঝোতা হয়। কিন্তু শনিবার হঠাৎ করেই জ্যেষ্ঠতা না মেনে পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করায় সে সমাঝোতা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বোর্ডে যাদের রাখা হয়েছে তাদের অনেকেই পার্টিতে নবীন। যাদের নাম রাখা হয়েছে তাদের সিংহভাগই সর্বশেষ প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের যৌথসভায় জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যানের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতা বানানোরও দাবি জানান। জানতে চাইলে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য একটি বোর্ড গঠন করে দিয়েছি। তারাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। বোর্ড গঠনে পার্টির গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী সিনিয়রিটি মানা হয়নি এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, সিনিয়রদের নিয়েই করতে হবে এমনটি অত্যাবশ্যকীয় নয়। প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রও পরিবর্তন হতে পারে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, দলের যৌথ সভায় আলোচনা হয়েছে। তৃণমূল থেকে চারটি নাম চাওয়া হয়েছে। চারটি নাম থেকেই পার্লামেন্টারি বোর্ড একজনকে চূড়ান্ত করবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, এরশাদ পরিবার বা পরিবারের বাইরে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক না কেন রংপুরের তৃণমূলের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। এ বিষয়ে রংপুর মহানগর জাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, রংপুরের মানুষ এরশাদের পরে তার পরিবারে জিএম কাদের ছাড়া আমরা চিন্তা করতে পারি না। একাদশ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এরশাদ গত ১৪ জুলাই মারা যান। এরপর রংপুর-৩ আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। আগামী ১ সেপ্টেম্বর এই আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এই আসনে ভোট হবে পুরোপুরি ইভিএমে। উপনির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে জাপা। রংপুর উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছে জাতীয় পার্টি।
×