ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ১১:২৪, ২৯ আগস্ট ২০১৯

খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্পট মার্কেট তথা খোলাবাজার থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করা হবে। আগামী তিন বছরের জন্য বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটনের প্রধান কার্যালয়ে বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন, সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। ছয় বছরের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগ করা হবে। খেলাপী ঋণ আরও কমিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। অন্যদিকে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দরে টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগ করার বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়। এরপরই এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এলএনজি আমদানির জন্য বেশকিছু দেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি রয়েছে। তবে আমরা স্বল্প সময়ে তাৎক্ষণিকভাবেও এলএনজি আমদানি করতে চাই। এ কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মাস্টার সেল এ্যান্ড পার্চেজ এগ্রিমেন্টের (এমএসপিএ) ভিত্তিতে এলএনজি আমদানির জন্য সরবরাহকারীদের একটি শর্টলিস্ট করা হয়েছে। ফলে দ্রুত সময়ে এলএনজি আমদানি সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য সরকার এলএনজি আমদানি করছে। বর্তমানে কাতার গ্যাস এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে এলএনজির মূল্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির এলএনজি মূল্য থেকে কম থাকে। এছাড়া, বছরের কোন সময়ে গ্যাসের চাহিদা কমে গেলে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি অনুযায়ী এলএনজি সরবরাহ গ্রহণ না করলেও মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এ বিবেচনায় এলএনজি আমদানিকারক দেশগুলো প্রয়োজনের কমবেশি ২৫ শতাংশ এলএনজি স্পট মার্কেট ক্রয় করে থাকে। এজন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। এলএনজি বিষয়ে প্রাপ্ত সব প্রস্তাব বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ এর ৫,৬ ও ৭ ধারার বিধান অনুসারে নেগোশিয়েশনের জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে সাধারণ প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি (পিপিসি) গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ওই কমিটির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী ক্রয় চুক্তির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি কার্যক্রম সম্পাদিত হবে মর্মে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগ ॥ চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ বছরের জন্য সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানান, ক্রয় সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাব দুটিতে মোট ব্যয় হবে ৩৪২ কোটি ৪৬ লাখ ৫২ হাজার ৬১৯ টাকা। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) এলাকায় কন্টেনার ও কন্টেনরজাত কার্গো হ্যান্ডলিং কাজটি জটিল প্রকৃতির বিধায় পিপিআর ২০০৮ অনুসরণপূর্বক সিঙ্গেল স্টেজ টু ইনভেলাপ পদ্ধতিতে ৬ বছরের জন্য টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমেদন দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪০ টাকা। প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রী আরও জানান, অপারেটর নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করে এবং একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। টিইসি কর্তৃক মূল্যায়িত ও সুপারিশকৃত সাপ্লিমেন্টারি রেস্পনসিভ হিসেবে প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডকে ৬ বছরের জন্য টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের কাজ সর্বসম্মতিক্রমে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে তবে আরও সোর্স খুঁজে বের করা কিংবা সরকার নিজেই এ কাজটি করতে পারে কি না সেটা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। কারণ একমাত্র সোর্স থেকে সেবা গ্রহণ করায় অনেক সময় ঝুঁকি থাকে। সভায় অনুমোদিত অপর প্রস্তাবটি হলো ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এর আওতায় কনসালটেন্সি সার্ভিস ফর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর সাসটেইনেবিলিটি কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির বিস্তারিত নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্প গত মে মাসের ২৪ তারিখে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এদিকে, অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপী ঋণের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে খেলাপী ঋণ কমে আসবে। এছাড়া সম্প্রতি ১১ ব্যবসায়ীকে শর্ত ভেঙ্গে ঋণ রিসিডিউলের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমিও এ বিষয়টি পত্রিকায় দেখেছি। আমার কাছ থেকে এ বিষয়ে কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। তবে আমি এ বিষয় খোঁজ নেব। তিনি বলেন, আমি এখনও জানিনা কোন বিবেচনায় তাদের এ সুযোগ দেয়া হলো। আগে কি শর্ত ছিল সেগুলো আমাদের দেখতে হবে। দিচ্ছে কি না তাও জানিনা।
×