ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু হত্যায় মদদ ছিল জিয়ার ॥ গণপূর্তমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২৯ আগস্ট ২০১৯

বঙ্গবন্ধু হত্যায় মদদ ছিল জিয়ার ॥ গণপূর্তমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতাবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীলরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। আর জিয়াউর রহমান নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যার উপকারভোগী এবং মদদদাতা। পরবর্তী অগণতান্ত্রিক সরকার ও খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুনর্বাসন করেছেন বলে দাবি করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বুধবার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অডিটরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজউক আয়োজিত জাতির পিতার জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) সাঈদ নূর আলম, মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার বক্তব্য দেন। এছাড়া স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির ও রাজউক কর্মচারী শ্রমিক লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক মিয়া। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশের বাইরে পুনর্বাসন করেছেন। আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার না করে তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে সংবিধানের অংশে পরিণত করেছেন। এরপর এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সরাসরি রাজনীতিতে পুনর্বাসন ও প্রটেকশন দিয়েছেন। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিভিন্ন মিশনে চাকরি ও পদোন্নতি দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া একইরূপে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীদের ধ্বংস করতে সহায়তা করেছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে,বাঙালী সত্তাকে, একাত্তরের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য আগস্ট মাসেই বড় অভিযান চালিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল দেশীয় ও বিদেশী চক্র। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালে যারা পরাজিত হয়েছিল, তারা পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে এবং তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর, নৃশংস ও বর্বরভাবে হত্যা করে। এরপর ৩ নবেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তারপরও তারা শঙ্কামুক্ত হতে পারেনি বলে আবার ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আঘাত হানে শেখ হাসিনাসহ গোটা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য। ’৭১, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ও ৩ নবেম্বর ২০০৪ এর ২১ আগস্টের আঘাতকারীরা এবং অন্তত ১৯ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টাকারীরা একইসূত্রে গ্রোথিত। ১৭৫৭ সালে এসেছিল মীর জাফর নামে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী ওই জাতীয় বিশ্বাসঘাতকরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের দোসর হিসেবে, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট মোস্তাক-জিয়া নামে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এসেছে খালেদা জিয়া, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, তারেক রহমানের নামে। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা, বাঙালিত্বকে হত্যা করা, ৩০ লাখ শহীদের প্রত্যাশা ও স্বপ্নকে হত্যা করা। বাংলাদেশের সমস্ত উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দুটি বাধা। তার একটি হলো স্বাধীনতাবিরোধী, আরেকটি হলো প্রতিক্রিয়াশীল, যারা তত্ত্ব কথা বলেন সব সময়। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তাদের কোন ভূমিকা নেই। শ ম রেজাউল করিম বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে খুনীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিলেন। তার খুনের বিচার হয়নি বাংলাদেশে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকেও স্বামী হত্যাকা-ের বিচার করেননি। এমনকি তিনি খুনীদের পুনর্বাসন করেছেন, সংসদে নিয়ে এসেছেন। তিনিও আজ এতিমের টাকা অত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে রয়েছেন। ২১ আগস্টের খুনের দায়ে, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, মনোনয়ন বাণিজ্য করে টাকা আয় করেছেন। অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি শেখ হাসিনা সকল দেশী-বিদেশী চাপ ঝুঁকি ও ভয় উপেক্ষা করে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের বিচার করে এবং বিচারের রায় কার্যকর করে বাঙালী জাতিকে ১৯৭১ সালের কলঙ্কের দায় থেকে মুক্ত করেছেন। খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে অপরাধ করে অপরাধীর দায়মুক্তি চলবে না। শ ম রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামী লীগ না করলেও যে দলই করুন না কেন মনে রাখবেন, আমাদের অস্তিত্বের উৎস মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। যেখানে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য থাকবে না, যেখানে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এই বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা পৌঁছেছি। এটাকে ধরে রাখতে সততার সঙ্গে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং খুনী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে কখনো বিচ্যুত হবেন না। আমি চাই আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহি আরও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আপনারা কাজ করবেন। একজন মানুষও যেন সেবা নিতে এসে রাজউক থেকে কষ্ট নিয়ে বেরিয়ে না যায়। আসুন রাজউক পরিবারকে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী, জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করি।
×