ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২৯ আগস্ট ২০১৯

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৮ আগস্ট ॥ তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ৪২শ’ পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি গৃহপুনর্বাসন প্রকল্পের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। মঙ্গলবার দুপুরে লালুয়ার মেরাউপাড়া গ্রামে পায়রা পুনর্বাসন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে প্রকল্পের এক, দুই ও তিন প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। এখানে প্যাকেজ দুই নম্বরে এ টাইপ ৮৮টি এবং বি টাইপ ২২৪টি পাকাঘর নির্মাণ কাজ চলছে। একটি মসজিদ, পুকুর নির্মাণ এখন দৃশ্যমান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ক এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড কোম্পানি এ কাজটি করছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে। যা শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। একইভাবে অপর একটি প্যাকেজে এ টাইপ ১৩২টি ঘর। বি টাইপ ১৯২টি ঘর। একটি স্কুল, একটি মসজিদ, গভীর নলকূপ ও পুকুর নির্মাণ করা হচ্ছে। লালুয়ার মেরাউপাড়া ছাড়াও মহল্লাপাড়া, চান্দুপাড়া (উত্তর), চান্দুপাড়া (দক্ষিণ), লেমুপাড়া, ধুলাসার এবং লোন্দা মৌজার সাইটে ৩৫০০ পরিবারকে পুনর্বাসনে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। পায়রাবন্দর চেয়ারম্যান কমডোর মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ৭১৬ বর্গফুটের এ টাইপের পাকা বাড়িতে ১১৬৫টি এবং ৬৩২ বর্গফুটের বি টাইপের পাকা একতলা বাড়িতে প্রথম পর্যায় ২২৫৮ পরিবারকে গৃহপুনর্বাসন করা হবে। প্রকল্প এরিয়ায় ২৫টি পুকুর, আটটি মসজিদ, ছয়টি স্কুল, ছয়টি কমিউনিটি ক্লিনিক, সাতটি বাজার নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ করা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও থাকছে। সাতটি স্পটে ১৪টি প্যাকেজে এসব পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ দ্রুতালয়ে এগিয়ে চলছে। পায়রাবন্দর নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের নিমিত্তে প্রায় ছয় হাজার পাঁচ শ’ একর জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম হিসেবে ইতোমধ্যে ২৩৭৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। শুধু ক্ষতিগ্রস্ত জমিহারা মানুষদের গৃহপুনর্বাসন নয়। এদের প্রত্যেক পরিবারের একজন সদস্যকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতার উন্নয়ন ও কর্মক্ষম করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী সচিব (সমন্বয়) সাজিদুল ইসলাম সবুজ জানান, ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন অব দ্য রুরাল পূয়র (ডরপ) এ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করছে। মোট ১৫৫টি কোর্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করা হবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একজন করে সদস্যকে। ইতোমধ্যে ১০টি ট্রেডে ১১৩৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারপূর্বক পারিবারিক পরিম-লে গাভী পালন ১৫০ জন। হাঁস-মুরগি পালন ও হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরির ওপর ২০০ জন, গরু মোটাতাজাকরণ ১০০ জন, পশুপাখির খাদ্য প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণ ৫০ জন, বয়লার ককরেল টার্কি পালন ২০০ জন, মৎস্য চাষ ও প্রযুক্তিতে মৎস্য আহরণে ১৫০ জন, বসতবাড়িতে সবজি ও ফল চাষ ১৫০ জন, কম্পিউটার বেসিক ৫০ জন, ড্রাইভিং ৪৯ জন ও রাজমিস্ত্রি ৩৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এদের প্রশিক্ষণ পরবর্তী সনদও প্রদান করা হয়েছে। এরা অনেকে এখনই পায়রা বন্দর নির্মাণের কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন। কেউ বাইরে গিয়েও নতুন এ পেশায় অংশ গ্রহণ করেছে। ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলাপাড়ার রাবনাবাদ চ্যানেল ঘেঁষা আন্ধারমানিক নদীরপারে টিয়াখালীতে দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে নদীপথে পণ্য খালাশের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করেন। এ পর্যন্ত ২৬টি জাহাজের পণ্য খালাশের মধ্য দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া বন্দরকর্তৃপক্ষ জাহাজ থেকে তিন কোটি ৩৬ লাখ টাকা আয় করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে তিনটি ধাপে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় পায়রা বন্দর প্রকল্পটি ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে পায়রা বন্দর নির্মাণ ঘিরে লালুয়াসহ গোটা প্রকল্প এলাকা কর্মমুখর রয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক মানুষ (যারা এ ঘর পাবেন) গৃহপুনর্বাসন প্রকল্পের ভবন তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। নিম্নমানের পাথর, বালুর ব্যবহার। যথাযথ মানের রড ব্যবহার না করার কথাও বলেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি’র বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন মানুষ। পায়রা পুনর্বাসন প্রকল্পের এক, দুই ও তিন প্যাকেজে এমন সব অনিয়মের কথা বলেন মানুষ। তারা দাবি করেন, পাইলিংয়ে রড ব্যবহার নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন। পাকা এ ঘরগুলোর মাটি থেকে ফ্লোরের উচ্চতা রাখা হয়েছে মাত্র এক ফুট। লোনা পানির মিশ্রণে নির্মিত স্থানীয় নিম্নমানের ইট ব্যবহার করার কথাও কেউ কেউ বলেন। প্রকল্প সাইটে বিস্তারিত কোন সাইনবোর্ড নেই। বালু ব্যবহার চলছে নিম্নমানের। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাদুর রহমান বলেন, যথাযথভাবে কাজ চলছে। কোন অনিয়ম নেই।
×