ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাজের আগেই প্লাস্টিক শিল্পনগরীর ব্যয় বাড়ছে ৬ গুণ

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ২৯ আগস্ট ২০১৯

কাজের আগেই প্লাস্টিক শিল্পনগরীর ব্যয় বাড়ছে ৬ গুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোনো দুর্ঘটনার পর সরকারী দফতর থেকে শুরু করে এনজিওসহ গণমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে। শুরু হয় নানা রকম তোড়জোড়। কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলে আর খোঁজখবর থাকে না। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলী ট্র্যাজেডিতে ১২৪টি তাজা প্রাণ ঝরে যায়। এরপর চলতি বছরের ২০ ফেরুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় একইভাবে অগ্নিকা-ের ঘটনায় প্রাণ হারান আরও ৭৮ জন। এই দুই ট্র্যাজেডির মূল অনুঘটক দাহ্য পদার্থ প্লাস্টিক। নিমতলী ট্র্যাজেডির পর দাবি উঠেছিল পুরান ঢাকা থেকে প্লাস্টিক পল্লী সুবিধাজনক জায়গায় স্থানান্তর করতে হবে। সেই লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী নামে একনেক সভায় একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩৩ কোটি টাকা। যার ৬০ শতাংশ সহায়তার মাধ্যমে আর ৪০ শতাংশ সরকারী অর্থায়নে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। মেয়াদ শেষ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ সার্বিক অগ্রগতি কাগজে দেখানো হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৫০ একর জমির ওপর এই প্লাস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার কথা। যেখানে থাকবে ৩৭০টি প্লট। সেখানে ৩৬০টি শিল্প ইউনিট কাজ করতে পারবে। এখানে ১৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে প্রকল্পে দেখানো হয়। মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বড়বর্ত্তা মৌজায় এই শিল্পনগরী গড়ে তোলার কথা। ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক বরাবর ১৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দূরে দ্বিতীয় ধলেশ্বরী সেতুসংলগ্ন এ শিল্প এলাকা। চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই প্রকল্পে এডিপি’র ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তারমধ্যে মূলধন ১৭ কোটি আর ৫০ লাখ রাজস্ব বাবদ। ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব ৩৩ লাখ এবং মূলধন ৪৯ কোটি ৬২ লাখ ১০ হাজার টাকা। নতুন করে ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে সংশোধিত এই প্রকল্প প্রি-একনেক সভায় উত্থাপন হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রস্তাবটি একনেক সভায় উত্থাপন করা হবে। প্রকল্পে জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৬১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আর ক্ষতিপূরণ বাবদ খরচ হবে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ভূমি বাবদ মোট খরচ ৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তারমধ্যে এখন পর্যন্ত শোধ করা হয়েছে ৪৯ কোটি ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এখনও বাকি রয়েছে ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান বলেন, একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। যখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল তখন জমির দাম ছিল দেড় গুণ এখন তিনগুণ দিতে হচ্ছে, যে কারণে খরচ বেড়ে গেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে জমি ভরাটের কাজ শুরু হয়ে যাবে। বিসিক প্লাস্টিক পল্লীর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিজাম উদ্দীন বলেন, ভূমির দাম তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যয়ও বেড়েছে। শীঘ্রই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়ে যাবে। আমাদের সংশোধিত প্রকল্প প্রি একনেক সভায় উত্থাপিত হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই চলছে এরপর একনেক সভায় অনুমোদনের পর কাজ শুরু হয়ে যাবে। সংশোধিত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ৪ বছরে কাজ হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, বাকি দুই বছরে কতটুকু কাজ শেষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী দেশে ৫ হাজারের উপরে প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে। যার অধিকাংশই বেসরকারী মালিকানাধীন। এরমধ্যে ৫০টি বড়, ১ হাজার ৪৮০টি মাঝারি এবং প্রায় ৩ হাজার ৩০টি ক্ষুদ্র প্লাটিক কারখানা। তারমধ্যে ৮০ শতাংশ কারখানাই ঢাকা কেন্দ্রিক এবং ক্ষুদ্র কারখানা ৯০ শতাংশই পুরান ঢাকার বিভিন্নস্থানে অবস্থিত।
×