ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বস্তিতে মানববসতি

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৯ আগস্ট ২০১৯

বস্তিতে মানববসতি

বস্তি মানেই এক ঘরে রান্না-বান্না, খাওয়া, ঘুম। এখানে স্বামী সন্তানদের নিয়ে এক ঘরেই নিদারুণ কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের বসবাস করতে হয়। তাই পরিবার জীবন এখানে খুবই সংগ্রামের। সন্তানদের জন্য স্কুল নেই। নেই শিক্ষার আলো। অধিকাংশ বস্তিতে স্কুল নেই। স্কুল থাকলেও জীবিকার তাগিদে শিশুরাও আয়ের পথ হিসেবে বেছে নেয় ফুল বিক্রি কিংবা ভিক্ষা করা। কিছু কিছু বস্তিকে কেন্দ্র করে বেসরকারী কিছু স্কুল গড়ে উঠলেও নেই সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এই কষ্টের মধ্যেও কেউ কেউ তাদের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে চান। ফলস্বরূপ এখানে আছে নিরক্ষরতার কষ্ট। কোন রকমে নাম লিখতে পারে সামান্য কিছু মানুষ। তাই অশিক্ষা তাদের নিত্যসঙ্গী। এই জীবন তাদের কখনই কাক্সিক্ষত ছিল না। বস্তিবাসীদের জীবন এক ভিন্ন রকম জীবন। এই জীবনে মানুষের জীবন ও জীবিকার কোন কিছুরই নিশ্চয়তা নেই। আজ এখানে তো কাল ওখানে, সকালে এক রকম তো বিকেলে আরেক রকম, কখনও বৃষ্টি হলে যেমন তাদের জীবন হয়ে পড়ে উদ্বাস্তুর মতো আবার কখনও আগুন লেগে তাদের জীবন হয়ে পড়ে সহায়, সম্বলহীন। এভাবে যেন তেনোভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই সকল বস্তিবাসী নানা পেশার কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে। কেউ রিক্সা চালায়, কেউ ছোট দোকান, কেউ হকার তো কেউ শ্রমিক। কিন্তু এই সকল কাজেরও কোন ধারাবাহিকতা নেই। আজ কাজ আছে তো কাল নেই এই হলো তাদের প্রাত্যহিক জীবন। তাদের দিন এনে দিন খাওয়ার যে জীবন চক্র তা কোনভাবেই পরিবর্তিত হয় না। এক কথায় বস্তির মানুষের জীবিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গার্মেন্টস শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, হকার, ছোট দোকানদার, হোটেল শ্রমিক, গৃহশ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, ঠেলাগাড়ি চালক, রিক্সাওয়ালা, দোকান শ্রমিক, রং মিস্ত্রি, ওয়েলডিং কারখানার শ্রমিক, কুলি, গার্ড, ছোট চাকরিজীবী প্রমুখ। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর ১২ এর বস্তিতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় হাজারো ঘর। সর্বস্ব হারিয়ে পথে নামতে হয় বস্তিবাসীকে। ঢাকার বস্তিগুলোতে নানা কারণে প্রায়ই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এসব অগ্নিকা-ের নেপথ্যে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, গ্যাসের লিকেজ বা অসচেতনভাবে গ্যাসের লাইন থেকে আগুন ধরাসহ নানা কারণ দেখানো হয়; যদিও এর পেছনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় স্বার্থান্বেষীমহলের নানা চক্রান্ত। বস্তিতে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষকালে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা, চুরি ডাকাতি, বোমাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকা- চালায় সরকারবিরোধীরা। তারা সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে রীতিমতো বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে থাকে। বস্তিকেন্দ্রিক এনজিও, স্থানীয় প্রভাবশালী, মাদক ব্যবসায়ী ও আত্মগোপনে থাকা অপরাধীরা নানাভাবেই বস্তি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে থাকে। এর জন্য যা যা করা দরকার তার সবাই করায় তারা। আর তাই বস্তি মানেই অনিরাপদ জীবন। আপাতত এটি একটি কারণ হলেও উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হল, বস্তিতে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মাদকসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম। কিন্তু সে বিষয়গুলো দেখার কেউ নেই। দেশের প্রায় বস্তিতেই স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বিদ্যুত এবং বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা নেই। আর আমাদের ঢাকার বস্তিবাসীদের নানা সমস্যার পাশাপাশি উচ্ছেদ আতঙ্কও কাজ করে। স্বীকার করতে হবে বর্তমান সভ্যতার একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হলো এই শহুরে বস্তি জীবন। যে জীবনের দায় অনেকাংশ বর্তায় উন্নত বিশ্বের উপর। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতায় তারা আজ এই বস্তির জীবনযাপন করছে। এই জীবন থেকে মানুষকে উন্নত জীবনের পথ খুঁজে দেয়া একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা খেকে
×