ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্বিষহ জীবন বদলাতে

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৯ আগস্ট ২০১৯

দুর্বিষহ জীবন বদলাতে

দেশের প্রতিটি শহরেই বস্তি রয়েছে- তবে খোদ রাজধানী ঢাকা শহরে বসবাসকারী বস্তিবাসীর সংখ্যা অন্যান্য স্থানে বসবাসকারীদের চেয়ে অনেক বেশি। বস্তিবাসীদের দুর্বিষহ জীবনের চিত্র তুলে ধরলে দেখা যায় সেখানে সদা সর্বদা অশান্তি লেগেই আছে আর এই অশান্তির কারণ একাধিক। বস্তিতে স্বল্প আয়ের লোকদের সংখ্যা অনেক বেশি আর এদের অধিকাংশই দিন আনে দিন খায়। মাসিক বাড়ি ভাড়া মিটিয়ে যা থাকে তা দিয়েই তারা দিন চালায়। এদের অনেকেরই নুন আনতে পানতা ফুরায়। তবে এখন দিন বদলিয়েছে এদের আয়-রোজগারও বেড়েছে- এতে তাদের আর্থিক অবস্থা অনেকটা বেড়েছে। আগে বস্তিতে বসবাসকারী কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, মুটে, কুলি ইত্যাদি শ্রেণীর লোকদের আয়-রোজগার কম ছিল, এখন এদের আয়-রোজগার অনেক বেড়েছে আর তাতে এরা অনেকটা সচ্ছল জীবনযাপন করছে। তবে আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের মধ্যে নেশা করার প্রবণতাও বাড়ছে আর এতে করে এরা নিজেদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। বস্তিবাসীদের জীবন নিরাপদ নয়, বিভিন্ন পেশার লোকজন অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এরা কখনও কখনও অগ্নিকা-ের ফলে সবকিছু হারিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ায় আবার অনেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়। এদের এই অভিশপ্ত জীবনের হাত থেকে বাঁচার উপায় কি আছে ভেবে দেখার সময় এসেছে এখন। মদ, গাঁজা, হেরোইন এদের অনেকের জীবনে নিত্যসঙ্গী- ঝগড়া কলহ তো লেগেই আছে। বস্তিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোক বাস করে। আমাদের মনে রাখতে হবে এরাও মানুষ, তাই এদের প্রতি সমাজেরও অনেক দায়-দায়িত্ব রয়েছে যদিও এদের অনেকেই অনেক ধরনের কর্মকা-ের সঙ্গে লিপ্ত। এখন দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে- সঙ্গে সঙ্গে দেশের শহরগুলোতে বস্তির সংখ্যা ইদানীং কিছুটা হলেও কমেছে। সরকার এদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করছে যেমনিভাবে গ্রামাঞ্চলেও ভূমিহীনদের ভূমি দিচ্ছে আর তাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করছে। শহরাঞ্চলেও রাজধানী ঢাকা শহর, বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশালসহ ময়মনসিংহে শহরে বসবাসকারাী বস্তিবাসীদের জন্য বাসস্থান নির্মাণে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শহরে তাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এটা সত্যিকারেই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দেশের ধনী শ্রেণীর উচিত সরকারের এই শুভ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। ধনীদের উচিত রোগ-শোক, অভাব-অনটনে অসহায় গরিব বাসস্থানহীন বস্তিবাসীদের পাশে এসে দাঁড়ানো। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন; ‘সকল অঙ্গকে প্রতারণা করে কেবল মুখেই যদি রক্ত সঞ্চালন করা হয় তাকে যেমন স্বাস্থ্য বলা চলে না- নাগরিক সভ্যতা তাই তেমনি স্বাস্থ্যহীন’। বস্তিতে বিভিন্ন জাত-পাত, শ্রেণী পেশার মানুষ বসবাস করে। এদের অবজ্ঞা না করে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের উচিত সুখে-দুঃখে এদের পাশে এসে দাঁড়ানো। এই কাজে শুধু সরকারকে সক্রিয় হলে চলবে না, বরং সমাজের প্রতিটি মানুষকে বস্তিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে এগিয়ে আসতে হবে। কলাবাগান, ঢাকা থেকে
×