ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ্র ঘোষ

নগরায়ন ও আবাসন

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২৯ আগস্ট ২০১৯

নগরায়ন ও আবাসন

ভারতের প্রখ্যাত লেখক অরুন্ধতী রায় তার একটি লেখায় লিখেছিলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে মানুষের জীবনমান যদি উন্নত করা না হয়, যদি তাহারা জীবনযাত্রায় বিস্তর ব্যবধান লইয়া পশ্চাতে পড়িয়া থাকে, তাহা হইলে তাহারা শহরে ছুটিয়া আসিবে। গড়িয়া উঠিবে একের পর এক বস্তি। ওভারব্রিজের নিচে, ফুটপাথে, সরকারী দফতরের বারান্দায় আশ্রয় লইবে। এমনকি একসময় শহরের উঁচু ভবন দখল করিয়া লইলেও বিস্ময়ের কিছু থাকিবে না। তাহারা অবকাঠামো উন্নয়নকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইবে। ইহা তাহাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার।’ বাংলাদেশে যে হারে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছে তাতে অরুন্ধতীর কথাই স্মরণ করতে হয়। সহযোগী একটি দৈনিক শহর এলাকায় আবাসন সমস্যার যে বর্ণনা দিয়েছে তাতে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। তারা সরকারী সংস্থার প্রক্ষেপণ উল্লেখ করে বলেছে, ২০২১ সাল নাগাদ দেশে শহুরে জনসংখ্যা ৬ কোটিতে উপনীত হবে। আর এই বিপুল জনগোষ্ঠীর মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরিতে প্রয়োজন হবে ৮৫ লাখ আবাসন। দেশে যে শহুরে জনগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, তার ৫৫ ভাগ বসবাস করে বস্তিতে। শুধু ঢাকায় গড়ে উঠেছে ৪ হাজার বস্তি। এই সঙ্কট দিনে দিনে আরো তীব্র হয়ে উঠছে। উল্লেখ্য, ফুটপাথে ও বস্তিতে বসবাসকারী জনগণের অংশটি একদিকে যেমন নাগরিক সুবিধাদি হতে বঞ্চিত, অন্যদিকে তারা নাগরিক কোন দায়ও অনুভব করে না। ফলে শহরগুলো কিম্ভূতকিমাকার রূপ নিচ্ছে। আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে আবাসন প্রকল্প রয়েছে অনেক। সরকার নগরায়নের কথা মাথায় রেখে নানা পেশা-শ্রেণির জন্য নানাবিধ আবাসিক প্রকল্পে হাত দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটাতে লাভ কী হবে? আরও মানুষ এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে। প্রকল্পগুলো নিয়ে আছে বহু জটিলতা, এটা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু কৃষিনির্ভর এই দেশে যদি মানুষ দৌড়িয়ে শহরে চলে আসে, তা হলে গ্রামবাংলার সম্পদ ও অর্থনীতির কী হবে? কত আবাসনব্যবস্থাই-বা করা যাবে? অন্যদিকে শুধু বসবাসের স্থান তৈরি করলেই হয় না, সেই সঙ্গে স্যানিটেশন, পয়োনিষ্কাশন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রশ্নটিও জড়িয়ে আছে। সেই ব্যবস্থাও কি আমাদের শহরগুলোর আছে? সেই সঙ্গে রয়েছে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রশ্ন। সুতরাং এই আসন্ন সঙ্কট হতে রক্ষা পেতে এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে গ্রামের জনগোষ্ঠী শহরের দিকে ছুটে আসাকে পেটের দায় না ভাবতে পারে। এ ক্ষেত্রে চীনের উদাহরণ আমরা গ্রহণ করতে পারি। চীন তার শিল্পায়নের কারণে দেখ পেল যে সব মানুষ শহরাভিমুখে ছুটে আসছে। তাই চীন গ্রামাঞ্চলে অবকাঠামো, কৃষিশিল্প ও আবাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তারা গ্রামাঞ্চলের ভূমির কোথায় আবাসন হবে, কোথায় শিল্প হবে, কোথায় কৃষিকাজ হবে তা নির্ধারণের জন্য কাজ করছে। কলকলিয়াপাড়া, মাগুরা থেকে
×