ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্টিক অঞ্চলে সক্রিয় রাশিয়ানরা

প্রকাশিত: ১২:২৪, ২৮ আগস্ট ২০১৯

বাল্টিক অঞ্চলে সক্রিয় রাশিয়ানরা

তিন বাল্টিক রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া ও লাটভিয়া আজ অন্য এক ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় ব্যস্ত। তারা নিজ নিজ ভূখ-ে রাশিয়ার এজেন্টদের সম্ভাব্য নাশকতার চেষ্টা নস্যাত করার জন্য আত্মরক্ষামূলক উদ্যোগ বাড়িয়ে তুলেছে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল এবং ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা শুরু করার পর থেকে তাদের এই উদ্যোগ দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি ঘটার বেশ আগে যখন দু’দেশের সম্পর্ক ভাল ছিল তখন থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও বিশেষ বাহিনী ইউক্রেনের রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে তাদের সমর্থকদের অনুপ্রবেশ ঘটায় যারা পরে রাশিয়ার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এদের মধ্যে কিয়েভে ইউক্রেনের সামরিক আমলাতন্ত্রে ঘাপটি মেরে থাকা রাশিয়ার এজেন্টরা বিশেষভাবে সফল প্রমাণিত হয়। ইউক্রেন যখন রুশ এজেন্টদের এসব তৎপরতা টের পায় ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। তারা ইউক্রেনের ভুলত্রুটি পরিহার করতে অতীব আগ্রহী। রাশিয়ার তৎপরতায় তারা শঙ্কিত বোধ করছে। রাশিয়ার কর্মকর্তাদের এবং ক্রেমলিন মুখপাত্রগুলোর সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য তাদের আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রচারণার অংশ সেই মন্তব্যগুলো হচ্ছে লিথুয়ানিয়ার কিছু কিছু অংশ সোভিয়েত যুগে মস্কোর তরফ থেকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছিল এবং সেই কারণে ওই ভূখ-গুলো ন্যায়সঙ্গতভাবে রাশিয়ার। সমস্যা হচ্ছে ক্রিমিয়া দখলের সময়ও রাশিয়া এই একই যুক্তি দিয়েছিল। বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো মনে করে যে সশস্ত্র হামলার সম্ভবত সহায়ক পটভূমি হিসেবে রাশিয়া ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বিনষ্টের অভিযান শুরু করতে পারে। সেই অভিযান নস্যাত করতে হলে তাদের আগে ক্রেমলিনের চর হিসেবে কারা সন্দেহভাজন তা নির্ণয় করতে হবে। তাই সেই অনুসন্ধান অভিযান শুরু হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে মস্কো থেকে সক্রিয় করে তোলা যেতে পারে এমন ‘সিøপার সেল’ খুঁজে বের করারও চেষ্টা চলছে। বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে অস্থিরতার পরিবেশ সৃষ্টি করে রুশ সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ বা অজুহাত নানাভাবেই তৈরি করা যেতে পারে। ধরা যাক এমন গুজব ছড়িয়ে গেল যে এস্তোনিয়ায় এক রুশ বালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেমলিনপন্থী একটি স্থানীয় মোটরসাইকেল গ্যাং তা-ব চালাল। পাল্টা জবাব দিল এস্তোনীয়রা। রাশিয়া তখন জাতিগতভাবে রুশ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য সেখানে সৈন্য পাঠাতে পারে। রাশিয়ার কমপক্ষে দুটি নিরাপত্তা সংস্থা বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরে কাজ করছে। তাদের এজেন্ট হিসেবে কর্মরত অধিকাংশ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে লিথুয়ানিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাগুলো শনাক্ত করেছে এদের কয়েক শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এক শ্রেণীর লোক গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি নানা বানোয়াট তথ্য অনলাইনে বিরামহীনভাবে পরিবেশন করতে পারে। যেমন গত এপ্রিলে এক ভুয়া খবরে জোর দিয়ে বলা হয় যে লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কারোবলিসকে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার উদ্দেশ্যে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। একটা বানোয়াট ছবিতে তিনি কারাগারে আছেন এমন দৃশ্যও দেখানো হয়। অন্য এক শ্রেণীর লোকের কাজ হলো কঠোরতর কোন পদক্ষেপ নেয়া যেমন লিথুনিয়ার গণতান্ত্রিক সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য দাঙ্গার মতো ঘটনা বাধিয়ে দেয়া। রাশিয়া এই উভয় শ্রেণীর লোকদের রিক্রুট করছে নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে যে বাল্টিক অঞ্চল রুশ প্রশাসনের অধীনে এলে তাদের আকর্ষণীয় পদ দেয়া হবে। তবে লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া ও লাটভিয়ার জনগণ রুশ শাসনের ঘোর বিরোধী। অতীতের রুশ আধিপত্যের অভিজ্ঞতা থেকে তারা রাশিয়াকে জানোয়ার হিসেবে জ্ঞান করে। রাশিয়ার এই ঘোরতর অজনপ্রিয়তা বাল্টিক অঞ্চলে তার হস্তক্ষেপের পথে এক বড় বাধা। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×