ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমেরিকা-তালেবান চুক্তির কাছাকাছি

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২৮ আগস্ট ২০১৯

আমেরিকা-তালেবান চুক্তির কাছাকাছি

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে যাবে। কিভাবে সরবে এবং তারপর কি হবে এ নিয়ে মার্কিন-তালেবান আলোচনা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে কাতারের রাজধানী দোহাতে। গত ১২ আগস্ট দু’পক্ষের মধ্যে অষ্টম দফা আলোচনা শেষ হয়েছে। জানা গেছে দু’পক্ষ একটা চুক্তির কাছাকাছি উপনীত হয়েছে। আফগান শান্তি আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধি জালমে খলিলজাদ অবশ্য এমন কিছু পরিষ্কার করে বলেননি। তবে বলেছেন আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে এবং দু’পক্ষ এখন খুঁটিনাটি বিষয় নির্ধারণ করছে। এই পর্যায়ে আসতে এক বছর ধরে বেশ কয়েক দফা আনুষ্ঠানিক বৈঠক করতে হয়েছে এবং তার আগে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও কম হয়নি। আনুষ্ঠানিক বৈঠকগুলোতে অপেক্ষাকৃত সরাসরি দরকষাকষি হয়েছে। আমেরিকা তার ১৪ হাজার সৈন্যকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করবে। বিনিময়ে তালেবানরা এই অঙ্গীকার করবে যে আফগান ভূখ-কে আল কায়েদা ও অঙ্গীকার করবে যে আফগান ভূখ-কে আল কায়েদা ও আইসের মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। খলিলজাদ এক টুইটারে আশা প্রকাশ করেন যে যুদ্ধরত আফগানিস্তানে এটাই হলো শেষ ঈদ। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফরের সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত লরেল মিলার অতটা আশাবাদী নয়। তিনি বলেন বর্তমানে যেসব বিষয়ে আলোচনা চলছে তা হচ্ছে আফগান সঙ্কটের সবেচেয় সহজ অংশ। খলিলজাদের দাবি তালেবানদের একটা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে। তিনি চান তালেবানরা রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে অন্য আফগানের সঙ্গে কথা বলুক এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই চুক্তি সম্পাদনের পথে একটা শিথিল রোডম্যাপ নিয়ে একমত হোক। আফগানদের অনেকের বিশেষত আজ যারা ক্ষমতায় আছে তাদের আশঙ্কা আফগানিস্তান থেকে তাড়াহুড়ো করে প্রস্থান করতে গিয়ে আমেরিকা তালেবানদের বড় ধরনের ছাড় দিতে পারে। দৃষ্টান্তস্বরূপ আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির চাইতে তারা সহিংসতায় ছেদ টানা চাইতে পারে। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে জানা গেছে আমেরিকা আফগানিস্তানে তার সৈন্যসংখ্যা গোড়াতে ৫ থেকে ৬ হাজার কমাবে। একটি সূত্রে বলা হয় গ্রীষ্ম শেষ হওয়ার আগেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে চলছে। মার্কিন-তালেবান চুক্তি সম্পাদনের জরুরী তাগিদ সৃষ্টির অংশত উদ্দেশ্য হলো এমন একটা ভাব বজায় রাখা যে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের প্রথম পর্বটা হলো এ চুক্তির পরিণতি। চুক্তি অর্জিত হয়ে গেলে বাদবাকি সৈন্যদের সম্ভবত ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার করা হবে। অন্যদিকে ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা ও সাংবিধানিক পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আফগানদের পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আফগানদের নিজেদের মধ্যে দরকষাকষি তখনও চলতে থাকবে। একটা সমস্যা হলো আমেরিকা সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সূচী ঘোষণা না করা পর্যন্ত অন্য আফগানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জায়িয়েছে। আমেরিকা যদি সেই সময়সূচী ঘোষণা করেও বা সেক্ষেত্রে তালেবানরা আফগান সরকারের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনায় বসবে কি না তা পরিষ্কার নয়। উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আফগান সরকারকে তালেবানরা পুতুল সরকার কিংবা আফগান রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের একটি অংশ বলে মনে করে। সরকারী কর্মকর্তা, বিরোধীদলীয় নেতা, সুশীল সমাজের সদস্য ও সাংবাদিকসহ আফগানদের এমনি একটি গোষ্ঠী গত ৭ ও ৮ জুলাই দোহায় জার্মানি এবং কাতার আয়োজিত একটি আন্তঃআফগান সম্মেলনে ১৭ জন তালেবান সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। সেই আফগান গ্রুপে ১১ জন মহিলাও ছিলেন। সকল পক্ষ আফগানদের সকলের অংশগ্রহণমূলক আলোচনার একটা অস্পষ্ট ফর্মুলার ব্যাপারে একমত হন। সমস্যা হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের সবাই ব্যক্তিগত ক্ষমতায় উপস্থিত ছিলেন। এ থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে যে আফগান সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিত্ব কে করতে পারে। আফগানিস্তান থেকে সরে যেতে আমেরিকার ব্যগ্রতা আফগান সরকারের আলোচকদের তালেবানদের সঙ্গে যে কোন আলোচনায় অসুবিধাজনক অবস্থায় ফেলবে। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন যে সৈন্য প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণা হিতে বিপরীত হবে। এখন তিনিই নাকি উপদেষ্টাদের বলেছেন যে ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই তিনি আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য সরিয়ে নিতে চান। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×