ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক খাতের ক্রেতারা কঠোর অবস্থানে

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২৮ আগস্ট ২০১৯

পোশাক খাতের ক্রেতারা কঠোর অবস্থানে

এম শাহজাহান ॥ নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে পোশাক খাতের ক্রেতারা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এমনকি তৈরি পোশাকের নতুন ক্রেতাদেশগুলোও সহায়ক কর্মপরিবেশ তৈরি ইস্যুতে ছাড় দিতে রাজি নয়। কারখানা শতভাগ কমপ্লায়েন্স না হলে পোশাক আমদানি না করার বিষয়ে ক্রেতাদের হুঁশিয়ারি রয়েছে। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ বুধবার এ সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে গঠিত ‘সোস্যাল কমপ্লায়েন্স ফোরাম ফর আরএমজি’ কমিটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবে। জানা গেছে, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকার পর গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পোশাক রফতানি করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু পোশাক খাতের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার রক্ষার বিষয়ে ক্রেতাদেশগুলোর শতভাগ সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনি এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। এ কারণে দেশের প্রধান এই রফতানি খাতটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ রয়েছে। পোশাক রফতানিকে নতুন করে উঠে আসছে ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও আফ্রিকা মহাদেশের নাম। ইতোমধ্যে এসব দেশের রফতানি বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার মতো বিষয়টি রফতানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপের দেশগুলো শতভাগ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার কথা বলছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, একটি উৎপাদনমুখী তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন, নির্মাণ, উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয়, পরিচালন, নীতি প্রণয়ন, বাণিজ্য সম্পর্ক, সামাজিকীকরণÑ অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দিক যেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল রাষ্ট্রীয় আইন, সংশ্লিষ্ট ক্রেতার আচরণবিধি (কোড অব কনডাক্ট) ও নৈতিকতার মানদ- মেনে ব্যবসা করে, সেটাই হলো কমপ্লায়েন্স। এর মধ্যে অগ্নিনিরাপত্তা, শ্রম অধিকার এবং অবকাঠামোগত কিছু বিষয়ের যথেষ্ট উন্নতি রয়েছে পোশাক খাতের। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে ক্রেতাদেশগুলোর বেশিরভাগ শর্ত মেনে চলছে বাংলাদেশ। কমপ্লায়েন্সের অগ্রগতি রয়েছে। তবে এখনও কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা রয়েছে, সেগুলো দ্রুত সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সোস্যাল কমপ্লায়েন্স ফোরাম, ক্রাইসেস ম্যানেজমেন্ট কমিটি, বিজিএমইএ এবং অন্য কমিটিগুলো কাজ করছে। এতে রানা প্লাজা ট্রাডেজির পর আর দেশে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আশা করছি, ওই সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। জানা গেছে, বেশির ভাগ পোশাক কারখানার মালিকরা তাদের শ্রমিকদের নির্ধারিত আট ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে শ্রমিকদের। অনেক সময় শ্রমিকরা নিয়োগপত্র ও মালিকদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র পান না। অনেক কারখানায় নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় সময় মতো মজুরি দেয়া হয় না। সাপ্তাহিক ছুটি, গুরুতর অসুস্থ হলেও ছুটি, বার্ষিক ছুটিও মিলে না অনেক কারখানায়। এছাড়া কমপ্লায়েন্স শর্ত অনুযায়ী কারখানায় শ্রমিকদের একটি ওয়েলফেয়ার কমিটি থাকার কথা। বেশির ভাগ কারখানায় এ কমিটির কোন অস্তিত্ব নেই। পার্টিসিপেশন কমিটির ব্যাপারে মালিকদের অনাগ্রহ রয়েছে। এছাড়া অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ও ভবনে নিরাপত্তা সিঁড়ি না থাকার বিষয়টিও ক্রেতাদের নজরে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, পোশাক কারখানাগুলো এখনও শতভাগ কমপ্লায়েন্স হয়নি। তবে এ বিষয়ে বিজিএমইএ থেকে নিয়মিত খোঁজ-খবর ও তদারকি করা হয়। তিনি বলেন, বেশ কিছু কারখানা আবার আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের রফতানিও ভাল। এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ভাল রিপোর্ট করেছে। তবে বিজিএমইএ’র সদস্য নয়, এমন অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও পোশাক রফতানির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। নতুন মার্কেটে রফতানি ভাল ॥ ইউরোপ ও আমেরিকার মতো বড় বাজারের চেয়ে নতুন দেশগুলোতে পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধি ভাল অবস্থায় রয়েছে। গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) নতুন বাজারে রফতানি বেড়েছে ২২ শতাংশ। এই বৃদ্ধি প্রচলিত বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে প্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর বাইরের সম্ভাবনাময় দেশগুলোই অপ্রচলিত বা নতুন বাজার। ২৫ দেশকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করেন উদ্যোক্তারা। গত অর্থবছর পর্যন্ত এসব বাজারে রফতানিতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা ছিল। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অতিরিক্ত আরও ১ শতাংশ নগদ সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ অপ্রচলিত বাজারে রফতানিতে নগদ সহায়তা এখন ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে সবচেয়ে বড় প্রচলিত বাজার ইইউর ২৮ দেশে রফতানি বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। একক রাষ্ট্র হিসেবে প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। কানাডায়ও ২২ শতাংশ রফতানি বেড়েছে। এ সময় পোশাকের সার্বিক রফতানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এদিকে, গত অর্থবছরে প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক হতে রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার যা মোট রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশ। এই খাতে প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ১১ শতাংশ। এছাড়া ওভেন খাতে রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার এবং নিট খাতে ১৭ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হয়েছে। রফতানি আয়ের এই রেকর্ড অর্জন করায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নতি ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থার কারণেই এ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে জাতীয় রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যমান রফতানি প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা যাবে।
×