ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার নীল অপরাজিতা ফুলের চা, পান করেছেন কি?

প্রকাশিত: ১১:১২, ২৮ আগস্ট ২০১৯

এবার নীল অপরাজিতা ফুলের চা, পান করেছেন কি?

মোরসালিন মিজান ॥ নীল অপরাজিতা ফুলে এবার, হ্যাঁ, চা হচ্ছে। সৌন্দর্য তো অনেক উপভোগ করা হলো। চা কেমন? একটু না হয় পান করে দেখুন। কোথায় পাওয়া যায়? খুব চেনা জায়গা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সবার চোখের সামনে বানানো হচ্ছে ব্লু টি। কেউ পান করছেন। কারও বা কৌতূহলী চোখ। দেখছেন শুধু। ছবি তোলা হচ্ছে ঘন ঘন। ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ফেসবুকে। এভাবে হারবাল চা ঘিরে বাড়ছে কৌতূহল। বেড়েই চলেছে। নীল অপরাজিতা বেশ চেনা। পরিচিত ফুল। অনেকের বাড়ির বারান্দায় দেখা যায়। লতানো গাছ। গ্রিল আঁকড়ে ধরে থাকে। যতদূর তথ্যÑ এসেছে ইন্দোনেশিয়ার মালাক্কা দ্বীপপুঞ্জ থেকে। ফ্যাবাসিয়াই প্রজাতির ফুল। বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। নীলকণ্ঠ নামেও ডাকা হয়। একটাই পাপড়ি। একলা ফুটে। আকারে খুব বড় নয়। ছোটও বলা যাবে না। দেখতে অনেকটা মেয়েদের কানের দোলের মতো। নিচের অংশ কিছুটা সাদা। ফুলটির গাঢ় নীল রং চায়ের কাপে দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। স্বচ্ছ কাঁচের কাপে চা ঢালা হলে যে কেউ ফিরে তাকাবেন। জানতে চাইবেন, ঘটনাটা আসলে কী? কী ঘটনা তা স্বচক্ষে দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে টিএসসিতে কিছু সময় দাঁড়াতে হলো। এখানে কয়েকটি চায়ের দোকান। অস্থায়ী দোকান ঘিরে প্রতিদিনের মতোই জমে উঠেছিল গল্প আড্ডা। প্রায় সবার হাতেই চায়ের কাপ। ‘রং চা’ বা ‘দুধ চা’ বলতে যা বোঝায়, সারা বছরই পাওয়া যায় এখানে। পাশাপাশি আছে বিচিত্র আয়োজন। এই যেমন তেঁতুল, মাল্টা, কাঁচা মরিচ, পুদিনা পাতা, আপেল ইত্যাদি দিয়ে চা বানানো হয়। একটু ভিন্নতা আশা করেন যারা, তারা এইসব চায়ে বহুদিন ধরেই চুমুক দিয়ে আসছেন। আর নতুন এসেছে নীল অপরাজিতা ফুলের চা। এই চায়ের স্বাদ নিতে একটি দোকানে বাড়তি ভিড় লক্ষ্য করা গেল। দোকানটি পরিচালনা করেন কণা নামের এক তরুণী। টিএসসির পরিচিত মুখ কণার অনুপস্থিতিতে চা বানাচ্ছিলেন তার ভাই শাহাবুদ্দীন। প্রক্রিয়াটি খুব সহজ বলেই হলো। প্রথমে একটি একটি করে ফুল তুলে নিয়ে বৃন্ত থেকে পাপড়ি আলাদা করছিলেন শাহাবুদ্দীন। পরে তা ভাল করে ধুয়ে গরম পানিতে জাল দেয়ার ব্যবস্থা করেন। চুলোয় বড় বড় কেতলির পাশে ছোট্ট মগ। মগের উপরিভাগে ভাসছিল নীল অপরাজিতা। দৃশ্যটা অদ্ভুতই বলতে হবে। পাপড়ি যত সেদ্ধ হচ্ছিল ততই ছড়িয়ে পড়ছিল রং। পরে ছেঁকে পাপড়ি ফেলে দিয়ে পানি ঢালা হয় চায়ের কাপে। হালকা নীল রঙের গরম পানি। তাতে চিনি মেশাতেই নীল অপরাজিতা ফুলের চা! কয়েক মিনিটেই প্রস্তুত। তবে হালকা নীল পানিতে লেবু চিপে দিলে রংটা আরও গাঢ় হয়। আকর্ষণীয় হয়। নীল অপরাজিতা ফুলের চা, সেটা বোঝা যায়। এ কারণে গাঢ় নীল রঙের চায়ে বেশি আগ্রহ। ভিন্নতার খুঁজে প্রতিদিন নীল অপরাজিতাকে চায়ের কাপে তুলে নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আড্ডাবাজ তরুণ-তরুণী। শিল্পী সংস্কৃতিকর্মীসহ ক্যাম্পাস ঘুরতে আসা মানুষের স্বাদ বোঝার চেষ্টা করছেন। টিএসসি কেন্দ্রিক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি মুনির বলছিলেন, চা-টার অনেক গুণ। টিএসসিতে দেখে ইউটিউবে সার্চ দিয়েছিলাম আমি। বেশ উপকারী। এখন বাসায় নিজে এই চা করেন বলেও জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী উর্মি লামিয়া মুমু ও মিম নীল চায়ের আড্ডায় মেতেছিলেন। সব কাপ একসঙ্গে করে ছবি তুলছিলেন তারা। কিন্তু স্বাদটা কেমন? জানতে চাইলে দুই দলে ভাগ হয়ে গেলেন তারা। এক অংশের মতে, স্বাদটা নতুন। খারাপ না। আরেক অংশ যেন দ্বিধায় পড়ে যায়। তাদের মত, তেমন কোন স্বাদ তো পেলাম না। লেবুর স্বাদটাই টের পাচ্ছি শুধু! মজার বিষয় হচ্ছে, দোকানিও চায়ের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারলেন না। কথা বলে বোঝা গেল, এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে আছেন তারা। গত প্রায় এক মাস ধরে এই চা বানাচ্ছেন। এরই মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সবার যে ভাল লাগছে তা নয়। এরপরও প্রতিদিন দেড় শ’ থেকে দুই শ’ কাপ চা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। প্রতি কাপ চায়ের দাম ১০টাকা। সমস্যা হচ্ছে, প্রচুর ফুলের প্রয়োজন হয়। প্রতি কাপ চায়ে দেয়া হচ্ছে পাঁচটির মতো ফুল। আরও বেশি দিতে পারলে রংটা বেশি ছড়ায়। কিন্তু এত ফুল পাওয়া মুশকিল। আপাতত সাভার থেকে প্রতিটি ফুল দুই টাকা করে কিনে আনতে হচ্ছে বলে জানান শাহাবুদ্দীন। অপরাজিতা ফুলে চা করার ধারণা কিভাবে এল? জানতে মোবাইলে ফোনে কনা হয় কণার সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, শামসুন্নাহার হলের এক আপু আর তার বন্ধু একদিন নীল অপরাজিতা ফুল নিয়ে আমাদের এখানে এসেছিল। ওই ফুল দিয়ে চা বানিয়ে খেয়েছিল তারা। এটা নাকি খুব উপকারী। কিছুটা তাদের পরামর্শেই শুরু করেন বলে জানান কণা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরও অনেকে এই চা বানিয়ে খান। চীন জাপান থেকে এই চায়ের খোঁজ পেয়েছেন বলে জানান তারা। চা প্রসঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আকতারুজ্জমানের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, খাবার বা চায়ে ফুলের পাপড়ির ব্যবহার অনেক আগে থেকেই লক্ষ্য করা গেছে। যেমন ধরুন, জাফরানের পাপড়ি জর্দা রান্নায় ব্যবহার করা হয়। জেসমিনের পাপড়ি দিয়ে চমৎকার জেসমিন টি হয়। স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। নীল অপরাজিতারও ভেষজগুণ অনেক। হারবাল চা তো, ভাল কিছু হওয়ার কথা। তবে একইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার গবেষণা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। এদিকে, নীল অপরাজিতার ভেষজগুণ সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী, ফুলটিতে ভাল এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। ইউরিনেশনে সাহায্য করে। এ্যান্টি এইচআইভি, এ্যান্টি-টিউমার গুণ আছে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। জ্বর সারাতে সহায়ক। তার চেয়ে বড় কথা অহেতুক দুশ্চিন্তা কমাতে ও অবসাদ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে নীল অপরাজিতা। এইসব গুণ চায়ে যোগ হলে অমৃত হিসেবেই পান করা উচিত। পান করে দেখতেই পারেন একবার।
×