ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঋতুর বিবর্তন এবার শরত-সঙ্গী দাবদাহ

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২৮ আগস্ট ২০১৯

ঋতুর বিবর্তন এবার শরত-সঙ্গী দাবদাহ

সমুদ্র হক ॥ এবারের শরত-সঙ্গী দাবদাহ। গ্রীষ্মেও এমন গরম ছিল না। আর কয়েকদিন পর ছাতিম তলার ম ম গন্ধ হেমন্তের ডাক দেবে। এবারের হেমন্ত কি শরতের পথ ধরে শিশির ঝরানো থেকে বিরত থাকবে! বাংলার ঋতু সময়কাল ভুলতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীদের ওই এক কথা- জলবায়ুর পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। এখন গুগল সার্চে তাপমাত্রা জানতে চাওয়া হলে বলা হয়Ñ তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, তবে তাপ অনুভূত হবে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, অক্টোবরের দিকে বঙ্গীয় এই বদ্বীপে মৌসুমী বায়ু ফিরে যাওয়ার কথা। এবার বোধ হয় দ্রুত ফিরছে না। তার অর্থ তাপের আধিক্য আরও কিছু সময় থাকা। প্রকৃতির এমন আচরণে গ্রীষ্ম মুখ টিপে হাসছে। ঋতুর যখন বিবর্তন তখন শীতেও গ্রীষ্মের স্বৈরাচারী আচরণ থাকতেই পারে। দিন কয়েক আগে দেশের কয়েকটি এলাকায় মুষল ধারায় বৃষ্টি ঝরেছিল। কোথাও ছিল মাঝারি। ঝড়ো হাওয়াও বইছিল। মৃদু ভূকম্পনও হয়েছে। তবু গরম কমছে না। গড়ে দুই মিনিট করে দিনের ব্যাপ্তি কমছে। বেটে হয়ে আসছে দিন। বিকেল ও সন্ধ্যার মধ্যে ব্যবধান কমছে। গোধূলী এসেই চলে যায়। শরতে মানব মন পরিশুদ্ধতায় এক ধরনের ¯িœগ্ধতা আসে। উদাসী মন পরিণত হয় পরিযায়ী মনে। সেই পরিযায়ী মন উধাও। শরতের ‘গোট রেইন’ বা ছাগল তাড়ানো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দেখা নেই। মাঝে মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ আকাশে কালো মেঘ জমে। ওই পর্যন্তই। কখনও হুট করে কয়েক ফোটা বৃষ্টি। মেঘ বলেছে যাব যাব, আর যায় না। এ যে কেমনতর আকাশ হিসাব মেলে না। সাধারণত মধ্যরাতের পর গরম কিছুটা বিরতি দেয়ার কথা। এবারের শরতে তাও নেই। আবহাওয়া বিভাগের কথা: এই সময়টায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস, সর্বনি¤œ ২৭ ডিগ্রী। বগুড়ায় গত বছর এই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবার একই সময়ে তা ৩৩ ডিগ্রী। ওয়ার্ল্ড মেটিরিওলজিক্যাল অরগানাইজেশন বলছে, পৃথিবীজুড়ে উষ্ণতা বেড়েছে। বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে কেন! বাহ! কি সুন্দর সহজ সমীকরণ। সাধারণত শরতের শেষের বেলায় শিশির ঝরার পালা শুরু হয়। মধ্যরাতে শিশিরে ভিজে সিক্ত হয়ে মানুষ ঘরে ফেরে। গতবারের শেষ শরতের চিত্র এমনই ছিল। এবার কি তা থাকবে! হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলে সময়মতো হিমবায়ু নামে। বলা হচ্ছে এবার দেরিতে বইবে। তার অর্থ শীতও দেরিতে এসে দ্রুত চলে যাবে। গত মৌসুমেও তাই হয়েছিল। শীতের ব্যাপ্তি ছিল কম। এবার হয়ত আরও কমে থাকবে বড় জোর এক মাস। তবে হেমন্তে যে শীতের ছোঁয়া পড়বে না তা এবারের শরত তাই বলে দিচ্ছে। হেমন্তের মধ্যভাগে নবান্নের পালায় সূর্যের তাপ কতটা থাকবে তা নিয়ে কৃষককূল চিন্তিত। হিমেল পরশ থাকলে স্বস্তির সঙ্গে ধান মাড়াই কাটাই করা যায়। যদিও বর্তমানে কৃষির যাবতীয় কাজ হচ্ছে যন্ত্রে। কায়িক শ্রম কমেছে। তারপরও ভর দুপুরে গরমের জ্বালা সওয়া বেশ কঠিন। প্রবীণ কৃষকরা বলছেন এবার রোদের তেজ বেশি। রাতেও কমে না। গরমের ধরন অন্যরকম। গা জ্বালা করে। নগরীতে কংক্রিটের বন। প্রকৃতির হাওয়ার পথ রুদ্ধ। যারা তাপানুকূল ঘরে থাকেন তাদের কথা আলাদা। অসহনীয় যন্ত্রনা সইতে হয় সাধারণ জনগণের। অপেক্ষা হেমন্তের শীতল পরশের। দ্রুত গুডবাই কি দেয়া যাবে শরতের অসহনীয় গরমকে! দেখা যাক কতদিনে আসে কাক্সিক্ষত হিমেল পরশ।
×