ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের জন্য খুলল জাপানের শ্রমবাজার

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৮ আগস্ট ২০১৯

বাংলাদেশের জন্য খুলল জাপানের শ্রমবাজার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন পরে হলেও শ্রমবাজারে সুখবর পাওয়া গেছে। দেশের সব শ্রমবাজার যখন বন্ধ প্রায়- ঠিক সেই সময় জাপানে বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর শ্রমবাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাপান বাংলাদেশ থেকে গত কয়েক বছর ধরে ‘ইন্টার্ন’ কর্মী নিয়োগ করে যাচ্ছে। তবে এবার সোর্স কান্ট্রি হিসেবে জাপানের শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়ায়, বাজারটি বাংলাদেশের জন্য নিশ্চিত হলো। যারা ইন্টার্ন হিসেবে দেশটিতে গেছেন, তারা চার বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে উদ্যোক্তা হবেন। কিন্ত এবারের চুক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় খবর। শ্রমবাজারে জাপান যুক্ত হওয়ায় আরও একটি দেশে বাংলাদেশের কর্মীদের চাকরির সুবিধা তৈরি হলো। উল্লেখ্য, এ বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিও সফরে যান। তখন বাংলাদেশ থেকে জাপানে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেন। জাপান কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর এই আলোচনায় ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহ দেখান। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে টোকিওতে জাপানের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাপানের জাতীয় পরিকল্পনা এজেন্সি এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। দক্ষ কর্মী প্রেরণকারী নবম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করল। উভয়পক্ষ এ সময় কর্মী প্রশিক্ষণ ও নিয়োগে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান ও জাপানের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ইমিগ্রেশন সার্ভিস এজেন্সির কমিশনার সোকো সাসাকি নিজ নিজ দেশের পক্ষে এতে স্বাক্ষর করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান বলেন, সমঝোতা বা সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে জাপানে দক্ষ কর্মী পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে যা দুই দেশের জন্যই লাভজনক। বাংলাদেশ সরকার জাপানের চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে দক্ষ কর্মী তৈরিতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সারাদেশে ২৬টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে জাপানী ভাষায় চার মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও জাপানী ভাষা শিক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। সমঝোতা বা সহযোগিতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজ রাবাব ফাতিমা, জাপানের পলিসি প্ল্যানিং ডিভিশনের ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ারস দফতরের পরিচালক ইয়াসুয়াকি ইমাই, বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, উপসচিব কাজী আবেদ হোসেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর ও দু’দেশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, জাপান দুটি ক্যাটাগরিতে আগামী পাঁচ বছর কেয়ার ওয়ার্কার, বিল্ডিং ক্লিনিং ম্যানেজমেন্ট, মেশিন পার্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, ইলেকট্রিক, ইলেক্ট্রনিক্স, কন্সট্রাকশন, জাহাজ শিল্প, অটোমোবাইল, কৃষিসহ জাপান ১৪টি খাতে বিশেষভাবে দক্ষ ও জাপানিজ ভাষায় পারদর্শী কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হবে। প্রথম ক্যাটাগরিতে জাপানী ভাষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা থাকলে পরিবার ছাড়া জাপানে পাঁচ বছর পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পাবেন। আর দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে যাদের জাপানী ভাষা ও নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা প্রথম ক্যাটাগরির কর্মী থেকে বেশি তারা পরিবারসহ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করার সুযোগ পাবেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৩ লাখ ৩৪ হাজার কর্মী নিয়োগে জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে জাপানের সংসদে বিল পাস হয়। প্রাথমিকভাবে আটটি দেশ থেকে তারা কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। দেশগুলো হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ফিলিপিন্স, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও পূর্ব এশিয়ার অন্য একটি দেশের নাম ওই তালিকায় ছিল। দীর্ঘদিন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেন দরবার করে বাংলাদেশও সেই তালিকায় যুক্ত হলো। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে কর্মীদের জন্য দুই ধরনের ভিসা ব্যবস্থা চালু করেছে জাপান। কিন্তু তা ছিল সীমিত আকারে। তালিকায় বাংলাদেশের নাম যুক্ত হওয়ায় এখন আনুপাতিক হারে কর্মী নিয়োগ হবে। বিদেশী কর্মী যাদের ন্যূনতম কারিগরি শিক্ষা রয়েছে, তারা পাঁচ বছরের জন্য কাজ করার সুযোগ দেবে জাপান। এই সময়ের মধ্যে তারা পরিবারের সদস্যদের জাপানে নিতে পারবে না। আর যারা দক্ষ (গবেষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী) কর্মী, তারা জাপানে যতদিন খুশি ততদিন থাকতে পারবেন। সেই সঙ্গে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদেরও জাপানে নেয়ার সুযোগ পাবেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন। তিনি আগামী ১ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন। জাপানে কর্মীর চাহিদার কথা বিবেচনা করে দক্ষ কর্মী তৈরিতে বিভিন্ন কার্যক্রম ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছেন বলে জাপান কর্তৃপক্ষকে তিনি জানিয়েছেন। যে স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বড় আকারে জাপানের শ্রম বাজারে বাংলাদেশ সুযোগ পেল, যা দুই দেশের জন্যই সুফল বয়ে আনবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় কোটি মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে গেলেও জাপানে সরকারীভাবে জনশক্তি রফতানির সুযোগ ছিল না। এবারই প্রথম বাজারটির দুয়ার খুলে যাচ্ছে। এই বাজারটি বাংলাদেশের জন্য একটি স্থিতিশীল ও নিশ্চিত বাজার হিসেবে গড়ে উঠবে। কারণ এখানে যে কেউ যেতে পারবেন না। জাপানী ভাষায় পারদর্শী হতে হবে। যে কাজের জন্য যাবেন তার ওপর দক্ষ হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জাপানী কর্তৃপক্ষ কর্মীদের ‘ইন্টারভিউ’ নিয়ে চূড়ান্ত করবেন। এখানে বাংলাদেশের কোন হাত নেই।
×