ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের নিয়ে ডোমিঙ্গোর স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ২৮ আগস্ট ২০১৯

টাইগারদের নিয়ে ডোমিঙ্গোর স্বপ্ন

কোচ হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে কখনও কাজ করেননি রাসেল ডোমিঙ্গো। উপমহাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা থাকলেও সরাসরি সেটির ছোঁয়া পাননি। কিন্তু এবার বাংলাদেশের জাতীয় দল পরিচালনায় যে আবহ পাবেন তাতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তার জন্য আসবে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে ডোমিঙ্গোর পথচলা। অধিনায়ককে নিয়ে হয়তো রণপরিকল্পনা সাজাবেন তিনি, সেভাবেই একাদশ গড়বেন। বাংলাদেশের বর্তমান ক্রিকেট দলটাকে আরও পরিণত করে তুলতে চান রাসেল ডোমিঙ্গো। নতুন প্রধান কোচ দেখতে চান দলের ধারাবাহিকতা। আগামী দুই বছরে সব সংস্করণে দলকে নিয়ে যেতে চানা র‌্যাঙ্কিংয়ে চার/পাঁচ নম্বরে। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই কোচিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। লম্বা সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় বিভিন্ন পর্যায়ে কোচিং করিয়ে এবার নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে যোগ হলেন বাংলাদেশের সঙ্গে। দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন কোচ জানালেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে তার লক্ষ্য, পরিকল্পনার কথা। প্রশ্ন ॥ দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তার সামনে এখন সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। প্রস্তুতির জন্য সময়টা কি যথেষ্ট? ডোমিঙ্গো ॥ অনুশীলন ক্যাম্পে ১০ দিন ছেলেদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের দল ঠিক কি আছে, না আছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য এই সময়টা যথেষ্ট। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে হচ্ছে। আফগানদের বিরুদ্ধে জিতবই এটা আমরা ধরে নিতে পারি না। আর নেয়াটা ঠিক হবে না। কারন খেলার মাঠে কোন প্রতিপক্ষকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। খাটো করে দেখা মানেই বিপদ। ওদের বিশ্বমানের কিছু ক্রিকেটার আছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটা কিভাবে খেলতে হবে এ নিয়ে এখন ছক তৈরি করছি। সন্দেহ নেই বাংলাদেশের বর্তমান ক্রিকেট দলে অনেক মেধাবী খেলোয়াড় রয়েছে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- সব বিভাগেই অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। আমার কাজ হচ্ছে এখন গোটা দলটাকে আরও শাণিত করে তোলা। প্রশ্ন ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন দলের হয়ে অনেকবার বাংলাদেশে এসেছেন। এই দেশের ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা কী? ডোমিঙ্গো ॥ আমার মনে হয়, দ্রুত সবার সঙ্গে ভাল বোঝাপড়া করা হবে প্রথম কাজ। আর এই কাজটা প্রায় হয়েই গেছে এই কয়েকদিনের দায়িত্বে। ছেলেরা বেশ মানিয়ে নিয়েছে। আমিও তাদের সঙ্গে এখন বেশ খোলামেলা। এক কথায় খোশ মেজাজে। তবে মাঠের বাইরের বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাঠে তাদের ঠিক কি প্রয়োজন সেটার দিকে নজর রাখা, শুরুতে এই কাজগুলোই করতে বর্তমানে করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের ফিল্ডিং নিয়ে কিছু আলোচনা আমি শুনেছিলাম। তবে এই মুহূর্তে ফিল্ডিং নিয়ে কথা বলার মতো পর্যায়ে আমি নেই। কারণ আরও ড়রখ করা প্রয়োজন। তাদের বর্তমান অবস্থা আমার দেখতে হচ্ছে। হতে পারে টেকনিক্যাল কিংবা মানসিক কিছু ব্যাপারে আমাদের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। প্রথম মাসে আমি এই ব্যাপারগুলো দেখব। এরপর ঘাটতি এবং উন্নতির জন্য কি কি করতে হবে সেগুলো ঠিক করব ধীরে ধীরে। প্রশ্ন ॥ কোচ নিয়োগের সাক্ষাৎকারের সময় আপনার প্রেজেন্টেশনে মুগ্ধ হয়েছিল বিসিবি। কি ছিল সেই প্রেজেন্টেশনে? ডোমিঙ্গো ॥ অল্প কথায় বলা কঠিন। সেখানে দলটাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে গড়ে তোলার কথা বলেছি, যেন ধারাবাহিকভাবে জিততে পারে। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা কথা বলেছি। তরুণ খেলোয়াড়দের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করার কথা বলেছি। আমাকে এই দুইয়ের সমন্বয় করতে হবে। বর্তমান সময়ের জন্য দলের পারফরম্যান্স, ম্যাচের ফল খুব গুরুত্বপূর্ণ। আবার একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দেয়ার পথটাও আমার বের করতে হবে। টি২০ বিশ্বকাপের আগে যদি আমরা কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড়কে কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিতে পারি সেটা হবে খুব ভাল একটা দিক। আমি যখন দক্ষিণ আফ্রিকার দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন আমাদের দলের জন্য সাফল্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরাজয় আমাদের দলের ওপর চাপ তৈরি করত। কোন কোচ তার দলকে হারার জন্য প্রস্তুত করেন না। কোচ হিসেবে আমি চেষ্টা করব ছেলেদের তাদের দায়িত্বের বিষয়ে ইতিবাচক রাখতে, তাদের খেলার দিকে মনোযোগী রাখতে। একই সঙ্গে দলের সাফল্যের জন্য বোর্ডের সবার সমর্থনও খুব জরুরী। আপনি এমন একটা সময়ে দায়িত্ব নিয়েছেন যখন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সফল অধিনায়ক ও পেসার প্রশ্ন ॥ মাশরাফি বিন মুর্তজা অবসর নেয়ার সময় খুবই কাছাকাছি। ড্রেসিংরুমে অনুপ্রেরণাদায়ী এমন একজনের অনুপস্থিতি কিভাবে সামাল দেবেন? ডোমিঙ্গো ॥ একটা দলে সিনিয়র লিডারশিপ গ্রুপ থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়ক একা সিদ্ধান্ত নেবে বিষয়টা এমন নয়। এটা ঠিক যে, অধিনায়কই বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে লিডারশিপ গ্রুপও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখন তাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। সব বিষয়ে কাজগুলো কিভাবে সুচারুভাবে করা যায় সেই চেষ্টা করছি। মাঠের বাইরে- ভেতরের জন্য সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে এগোচ্ছি। প্রশ্ন ॥ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ সফল একজন কোচ আপনি। সাফল্যের পেছনের গল্পটা কি? ডোমিঙ্গো ॥ আমি সব সময়ই মানুষের সঙ্গে কাজ করতে আর নতুন-নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে ভালবাসী। কোচ হিসেবে আমি অন্য মানুষের কাছ থেকে শেখার সুযোগটা কাজে লাগাই। কোচ হিসেবে আমি বুঝতে পারি, একজন ক্রিকেটারের পরের ধাপে যেতে ঠিক কী প্রয়োজন। আমার মনে হয়, এই ব্যাপারটাই আমাকে কোচ হওয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমি আশাবাদী, এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দল আর ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করবে। প্রশ্ন ॥ বাংলাদেশের কোচ হতে কোন বিষয়টা আপানাকে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে? ডোমিঙ্গো ॥ আমি দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের সঙ্গে কাজ করছিলাম। এটা ছিল জাতীয় দলের ঠিক নিচে। জাতীয় দলের কিছু খেলোয়াড়ও এই দলটিতে ছিল। কাজটা আমি খুব উপভোগ করছিলাম। বাংলাদেশ এমন একটা দল যারা গত পাঁচ বছরে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে। ওরা এই সময়ে নিজেদের পারফরম্যান্সেরও বেশ উন্নতি করেছে। কাজেই এমন একটা দলের দায়িত্ব নেয়া মনে হয় না কোন ভুল সিদ্ধান্ত। প্রশ্ন ॥ নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আপনার সুনাম আছে। উঠতি প্রতিভাদের পথ দেখানোর ক্ষেত্রেও আপনি পারদর্শী। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি? ডোমিঙ্গো ॥ অবশ্যই আমি বয়সভিত্তিক দলগুলোর ম্যানেজার ও কোচের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাব। প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ওঠে আসা সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখব। আমার মনে হয়, পরের দলটা কেমন হতে পারে বুঝতে পারা সব সময়ই খুব ভাল একটি বিষয়। পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলা মাঠে বসে দেখা আমার জন্য জরুরী। দেশের সেরা লিগে (ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ) নতুন একটা ছেলে কিভাবে খেলে সেটা সরাসরি দেখা প্রয়োজন। আমার ধারণা, ঘরোয়া ক্রিকেটে দলগুলো ভাল কোচের অধীনে আছে। আমি জানি, ঢাকা লিগে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। প্রশ্ন ॥ ল্যাঙ্গাভেল্ট, ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে কাজ করেছেন। স্বদেশি কোচদের পাশাপাশি নিউ জিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্রোরিও আছে আপনার কোচিং প্যানেলে। তার কাছ থেকে ঠিক কি আশা করছেন আপনি? ডোমিঙ্গো ॥ ভেটোরির সঙ্গে এর আগে কয়েকবার দেখা হয়েছে আমার। আমরা মতো তিনিও ছেলেদের জন্য সেরা সহায়তাটা দেয়ার চেষ্টা করবেন। যদি ভেট্রোরি তরুণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে বেশি সময় কাটায় তাহলে তারা ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। প্রাথমিকভাবে চুক্তির মেয়াদ দুই বছর। এই সময়ে বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চান? ডমিঙ্গো ॥ আমার মনে হয় অবশ্যই র‌্যাঙ্কিংয়ে চার-পাঁচে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে ওয়ানডেতে আমাদের অবশ্যই সেরা চারে থাকার সামর্থ্য আছে। এটা হবে বাস্তবসম্মত একটা লক্ষ্য। আমি জানি, এটা কঠিন হবে। লক্ষ্য পূরণ করতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পরের ধাপে যেতে বাংলাদেশকে পথ দেখাতেই এসেছি আমি। এখন পুরোদমে ছেলেদের নিয়ে মাঠে আছি। কাজ করচি, দেখছি সার্বিক পরিস্থিতি। আরও কিছুদিন দেখতে চাই এভাবে। এভাবে চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ দলটাকে আমার নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারব বলে আশা করছি।
×