ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অঘোষিত রোহিঙ্গা ঘাঁটি পটিয়া

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২৮ আগস্ট ২০১৯

অঘোষিত রোহিঙ্গা ঘাঁটি পটিয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, ২৭ আগস্ট ॥ রোহিঙ্গা নাগরিকদের অঘোষিত ঘাঁটি হচ্ছে চট্টগ্রামের পটিয়া। বর্তমানে উপজেলা ও পৌর এলাকায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কিছু লোভী ব্যক্তি এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নতুন ভোটার তালিকায় ভোটার হতে সুযোগ দিচ্ছে। উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়নে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ফয়সাল ও মহিলা ইউপি সদস্য ফেরদৌস বেগমের যোগসাজশে রোহিঙ্গা মহিলা আকলিমা মৃধা ভোটার তালিকায় অন্তভুক্ত হতে জন্ম সনদ ও জাতীয়তা সনদপত্র নিয়েছেন। রোহিঙ্গা মহিলা নাগরিককে বড়লিয়ার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেখানো হয়েছিল। ভোটার তালিকার ছবি তুলতে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনুল ইসলাম শানু নিজেই হাতেনাতে ধরেছেন। যার কারণে ছবি তুলতে পারেননি। রোহিঙ্গা নাগরিকরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া এলাকায় ক্যাম্পে থাকলেও নানা কৌশলে পটিয়া ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের কারণে এলাকায় মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাইসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতির মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মূলত মানবিক কারণে কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় দিয়েছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়ক হয়ে বিভিন্ন পরিবহনে করে পালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ত্রিপুরা দিঘীরহাট এলাকা থেকে পটিয়া থানা পুলিশ ৪২ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে ক্যাম্পে পাঠিয়েছে। বর্তমানে তারা পুনরায় পটিয়ায় ফিরে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ প্রশাসনের অবহেলার কারণে রোহিঙ্গা নাগরিকরা পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তারা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অর্থের বিনিময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকর্মে। জানা গেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে সেখানে থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশে এই পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পাড়ি দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের কক্সবাজার জেলার ১১টি স্পটে ক্যাম্প করে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। যা বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হন। কিন্তু ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা পটিয়া উপজেলায় পালিয়ে এসেছে কয়েক হাজার। এর আগেও পটিয়াতে ছিল রোহিঙ্গারা। পটিয়া পৌরসভার দক্ষিণ গৌবিন্দারখীল গ্রামের ৮নং ওয়ার্ড, পৌরসভার বাহুলী গ্রামের ৭নং ওয়ার্ড, উত্তর গোবিন্দারখীল গ্রামের ৩নং ওয়ার্ড, গোবিন্দারখীল গ্রামের ৯নং ওয়ার্ড, হাইদগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে, কেলিশহর ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায়, খরনা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা ও কচুয়াই ইউনিয়নের শ্রীমাই পাহাড়ি এলাকায় কিছু বসতি রয়েছে। ১৯৯২ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকরা বিভিন্ন কৌশলে পটিয়ায় প্রবেশ করতে থাকে। তাদের মধ্যে অনেকে জনপ্রতিনিধিকে ম্যানেজ করে জন্ম নিবন্ধন, জাতীয়তা সনদ নিয়ে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে। পটিয়া পৌর সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় বার্মা কোলনি নামে কয়েকটি কোলনি রয়েছে। পটিয়া শহরে অসংখ্য রোহিঙ্গা সিএনজিচালক, রিক্সাচালক, দিনমজুর ছাড়াও অনেকের ঘরে গৃহিণী হিসেবে মহিলা রোহিঙ্গা রয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে পটিয়ায় রয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ সরকার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারে পাঠানোর উদ্যাগ নিলেও তাদের ইচ্ছা না থাকায় মিয়ানমারে তাদের পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বড়লিয়া ইউপির চেয়ারম্যান শাহীনুল ইসলাম শানু বলেন, রোহিঙ্গা নাগরিক বোরকা পরে এসে ছবি তুলতে এলে রোহিঙ্গা মহিলা আকলিমা মৃধা ধরা পড়েন। জন্মনিবন্ধন ও জাতীয়তা সনদ বাতিলের জন্য ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। পরিষদের মাসিক মিটিং এ প্রস্তাব গ্রহণ করে তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তবে মহিলা মেম্বার ফেরদৌস বেগম রোহিঙ্গা মহিলাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কাজে কোন ধরনের সহযোগিতা করেননি বলে জানান। এলাকার গুটি কয়েকব্যক্তি তার (মহিলা মেম্বার) বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
×