ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতারক চক্র থেকে সাবধান

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২৮ আগস্ট ২০১৯

প্রতারক চক্র থেকে সাবধান

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ২০১৬-এর আলোকে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, যে সব নারী-পুরুষ ভাগ্যান্বেষণ তথা ভাল চাকরির আশায় বিদেশে যান তারা যেন কোনভাবেই প্রতারক চক্র বা দালালের খপ্পরে না পড়েন। বিদেশে, তা সে বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক না কেন, যাওয়ার আগে তারা যেন ভালভাবে খোঁজখবর নেন। বিভিন্ন সরকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর জন্য বর্তমান সরকার সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে, যাতে সাধারণ নারী-পুরুষ যোগাযোগ করে সঠিক তথ্যাদি প্রাপ্তিসহ সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নিতে পারেন। কোন অবস্থাতেই যেন প্রতারকের খপ্পরে না পড়েন। প্রধানমন্ত্রী এর জন্য গণমাধ্যমেরও নিয়মিত সহায়তা প্রত্যাশা করেন, যাতে দালাল ও প্রতারকচক্র সম্পর্কে জানতে পারে সর্বস্তরের মানুষ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে বর্তমানে প্রায় ৯৬ লাখ বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে বিশ্বের ১৬০টি দেশে কর্মরত আছেন। তবে এই সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। কেননা বহু বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস ও আয়-উপার্জন করছেন। অনেকে নিবন্ধনের বাইরেও দালাল এবং মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। এর বাইরেও বিদেশের বাজারে নিত্য-নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় প্রতিবছর চার-পাঁচ লাখ কর্মী যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে দিন দিন। এক হিসাবে হোম রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। পোশাক রফতানি আয়ের পরেই এর অবস্থান। তবে প্রবাসী অভিবাসী শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ সামাজিক সুরক্ষার জন্য তেমন নীতিমালা ও আইন নেই। বিশেষ করে প্রতারক এজেন্সি ও দালাল চক্রের খপ্পরে প্রলোভিত হয়ে যেসব পুরুষ-নারী ও শিশু জীবনের সমূহ ঝুঁকি নিয়ে পা বাড়ান বিদেশের অজানা-অচেনা গন্তব্যে, তাদের দুঃখ-কষ্ট-মানবেতর জীবন এক কথায় অবর্ণনীয়, অসহনীয়। এসব ক্ষেত্রে বিদেশ-বিভুঁইয়ে জেলখানা ও বন্দী শিবিরে শেকল বাঁধাসহ অনাহারে-অর্ধাহারে মৃত্যুর খবরও আছে। অভিবাসী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিরাপদ অভিবাসন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ৫ বছরের জেল-জরিমানাসহ মানব পাচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের পর আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়। মানুষ নিতান্তই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। অনেকে শেষ সহায়সম্বল, ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে। বিশেষ করে দালাল ও প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে যেসব পুরুষ, নারী ও শিশু শ্রমিক পাড়ি জমায় বিদেশে তাদের দুঃখ-কষ্ট-দুর্দশা অবর্ণনীয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের কর্মসংস্থান হয় অতি নিম্নমানের ও কম মজুরিতে। প্রতারক দালাল চক্র এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে। এক্ষেত্রে নারী ও শিশুর অবস্থান হয় আরও শোচনীয়। শিশুদের কাজে লাগানো হয় উটের জকি হিসেবে আর গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মহিলারা ব্যবহার হয়ে থাকেন ‘যৌনদাসী’ হিসেবে। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনই আভাস মিলেছে। সে অবস্থায় বিদেশে শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রতারক চক্র সম্পর্কে আরও বেশি মাত্রায় সতর্ক ও সাবধান হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তায় সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে।
×