ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়তে আবাহনীর চাই মাত্র ১ পয়েন্ট!

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ২৭ আগস্ট ২০১৯

ইতিহাস গড়তে আবাহনীর চাই মাত্র ১ পয়েন্ট!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঢাকা আবাহনী লিমিটেডই হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র ক্লাব, যারা সবচেয়ে বেশি ৫ বার ‘এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপ’ এবং সবচেয়ে বেশি ২ বার ‘এএফসি কাপ’ খেলেছে। কিন্তু এই দুটি আসরেই তাদের ব্যর্থতা ছিল বিস্ময়কর। কেননা এই দুটি আসরেই তারা কখনও প্রথম রাউন্ডের গণ্ডি পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উন্নীত হতে পারেনি। তবে এএফসি কাপে গ্রুপসেরা হয়ে আগের দু’বারের ব্যর্থতা কাটিয়ে দ্বিতীয় পর্বে নাম লিখিয়ে নতুন ইতিহাস গড়েছিল তারা। এবার সেই ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করার একেবারেই দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে তারা। এজন্য তাদের দরকার মাত্র ১টি পয়েন্ট! অর্থাৎ ড্র করলেই হয়ে যাবে কেল্লাফতে। এএফসি কাপের আন্তঃ আঞ্চলিক সেমিফাইনালের প্লে অফের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে কাল তারা মাঠে নামছে। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ। খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে কিম টু সাং স্টেডিয়ামে, বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়। প্রথম লেগে গত ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রবল শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে দুই দলের মোকাবেলায় ৪-৩ গোলে জিতেছিল আবাহনী। ফলে এই জয়ে প্লে অফের ফাইনালে উন্নীত হওয়ার জন্য এক ধাপ এগিয়ে যায় তারা। সেক্ষেত্রে আজকের ফিরতি মোকাবেলায় ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’দের নতুন ইতিহাস রচনা করতে প্রয়োজন নুন্যতম ড্র। প্রতিপক্ষ হিসেবে এপ্রিল নিঃসন্দেহে অনেক শক্তিশালী দল। কিন্তু ঢাকায় তাদের বিপক্ষে খেলতে দেখা গেছে আত্মবিশ্বাসী আবাহনীকেই। বিন্দুমাত্র না ঘাবড়ে সোহেল-সানডেরা উপহার দিয়েছিলেন অবিশ্বাস্য-আক্রমণাত্নক ফুটবল। ওই ম্যাচে আবাহনীর মিডফিল্ডার সোহেল রানা যে নয়নাভিরাম গোলটি করেছিলেন, তা ওয়েবসাইটে দর্শকদের ভোটে এএফসির সপ্তাহের সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত হয়। ওই ম্যাচে আবাহনীর জয়টা ছিল অনেক বেশি কৃতিত্বপূর্ণ। কেননা ওই ম্যাচে ইনজুরির কারণে মাঠে থাকতে পারেননি মধ্যমাঠের অন্যতম ফুটবলার মামুনুল ইসলামসহ মোট তিন ফুটবলার। তবে আজকের মাচে ফিট থাকলে মামুনুলকে খেলাবেন বলে আভাস দিয়েছেন আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস। মিশরিয় ডিফেন্ডার এলদিন নাসেরও আগের ম্যাচে খেলেননি কার্ড সমস্যায়। তবে আজকের ম্যাচে তাকে পাওয়া যাবে। মাঝে উত্তর কোরিয়া যাবার পথে বাধা পড়েছিলো জয়ের ম্যাচে দুই গোল করা নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবার। ভিসা সমস্যা কাটিয়ে ভিন্ন রুটে একা গিয়ে পরে দলের সঙ্গে যোগ দেয়া সানডেও থাকছেন এই ম্যাচে। ফলে পূর্ণশক্তির আবাহনীকেই দেখা যাবে আজকের ম্যাচে। ভিসা সমস্যা কাটিয়ে শনিবার রাতে ঢাকা ছাড়ার আগে সানডে বলে গিয়েছিলেন এই ম্যাচেও জ্বলে উঠতে চান। গোল করে দলকে জয় এনে দিতে চান। দলের কোচ মারিও লেমোস আজকের ম্যাচে নিজেদের প্রত্যাশা নিয়ে বলেছেন,‘আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। আমরা জানি দেশের সবাই ফিরতি পর্বের ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে ওদের মাটিতে আমাদের জন্য কাজটা মোটেও সহজ হবে না। অবশ্যই জয়ের লক্ষ্য নিয়েই খেলতে নামবো আমরা।’ ঢাকায় ঘাসের মাঠে খেলা হলেও সেখানে নাসের-সানডেদের খেলতে হবে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে। তবে সেটা খুব বড় একটা সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন ম্যাচে ফেরা ডিফেন্ডার এলদিন নাসের, ‘আর্টিফিসিয়াল টার্ফে খেলাটা কিছুটা সমস্যার হলেও বিষয়টা এমন নয় যে মূল মাঠের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য সেখানে। এই ম্যাচে ইতিবাচক ফলাফলের উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা খেলতে নামবো। আর সেই ফলাফলটা যেন জয় হয়, সেই লক্ষ্যই থাকবে আমাদের।’ আন্তঃ আঞ্চলিক সেমিফাইনালে আবাহনীর প্রতিপক্ষ এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ ক্লাবের পারফরমেন্স ছিল আরও দুর্দান্ত। ৬ ম্যাচে ৫ জয়ের বিপরীতে তারা ম্যাচ হারে মাত্র একটি এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ ক্লাবের সব খেলোয়াড়ই সেনাবাহিনীর সদস্য। এই ক্লাবে খেলেন জাতীয় দলের আট ফুটবলার। বিস্ময়কর ব্যাপার-এই দলে কোন বিদেশি ফুটবলার নেই! আবাহনীতে আছে চার বিদেশি খেলোয়াড়। প্রথম পর্বে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬ গোল করেছেন স্ট্রাইকার কিম ইউ সং। তবে এই ক্লাবটি বাংলাদেশের ফুটবলে খুব অপরিচিত প্রতিপক্ষ নয়। এই দলটির বিপক্ষে অতীতে জয়ের রেকর্ড আছে। ১৯৮৮ সালে সে সময়ের এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল পর্বে এই ক্লাবকেই ১-০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। মোহামেডানই ১৯৯০ এশিয়ান ক্লাব কাপের চূড়ান্তপর্বে গোলশূন্য ড্র করেছিল ক্লাবটির সঙ্গে। ১৯৯১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্তপর্বে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল। ইন্টার জোন সেমিফাইনালে বিজয়ী দু’দল খেলবে ইন্টার জোন প্লে-অফ ফাইনাল। এই ম্যাচের জয়ী দল চলে যাবে এএফসি কাপের ফাইনালে। ফাইনালে ওয়েস্ট জোনের একটি দল থাকবে। ওয়েস্ট জোনের ফাইনালের প্লে-অফে মুখোমুখি হবে জর্দানের আল জাজিরা ও লেবাননের আল আহেদ। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২ নভেম্বর। এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের জন্ম ১৯৪৯ সালে। ৭০ বছর বয়সী ক্লাবটি সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ট্রফি জিতেছে মোট ৩৬ বার। ১৯৭২ সালে জন্ম আবাহনীর। মোট ৩৬টি ট্রফি করায়ত্ত করেছে ৪৭ বছর বয়সী ক্লাবটি। এখন দেখার বিষয়, আজ পিয়ংইয়ংয়ে এপ্রিলের সঙ্গে নুন্যতম ড্র করে নতুন ইতিহাস গড়তে পারে কি না আবাহনী।
×