ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ জয়ের সমান আনন্দ স্টোকসের

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 বিশ্বকাপ জয়ের সমান আনন্দ স্টোকসের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ লক্ষ্য ৩৫৯। জিততে হলে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসটাকে নতুন করে লিখতে হবে। স্টুয়ার্ট ব্রড যখন আউট হন ইংল্যান্ডের রান তখন ২৮৬। চাই আরও ৭৩। শেষ ব্যাটসম্যান জ্যাক লিচকে নিয়ে অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয় এক জয় উপহার দেন বেন স্টোকস। শেষ জুটিতে যোগ করেন অবিচ্ছিন্ন ৭৬ রান। যেখানে ৪৪ বলে ৭৪ স্টোকসের। লিচ ১৭ বলে ১*। ১১ চার ও ৮ ছক্কায় অপরাজিত ১৩৫ রানের মহাকাব্য লেখেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। হেডিংলি টেস্টে ১ উইকেটের নাটকীয় জয়ে নতুন ইতিহাস গড়ে জো রুটের দল। ১-১ সমতায় বাঁচিয়ে রাখে এ্যাশেজ জয়ের সম্ভাবনা। অস্ট্রেলীয় বোলারদের একটিমাত্র ডেলিভারিই শেষ করে দিতে পারত সব। শেষ মুহূর্তে তাই লিচ যখন ক্রিজে, ননস্ট্রাইকিংয়ে এন্ডে উত্তেজনায় মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাঁকিয়ে স্টোকস! ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্বকাপজয়ের পথে লর্ডসের ফাইনালে অপরাজিত ৮৪ রান করে এভাবেই ‘নায়ক’ বনে গিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড বংশোদ্ভুত ২৮ বছর বয়সী ইংলিশ অলরাউন্ডার। ঐতিহাসিক জয়ের পর স্টোকস বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে সেরা দুই মুহূর্তের একটি এই টেস্ট জয়। সত্যি বলতে কী, ঠিক বিশ্বকাপ জয়ের মতো অনুভূতি হয়েছে! অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অভাবনীয়, অবর্ণনীয়, অতিমানবীয়- যা-ই বলুন না কেন; এ ইনিংস আমি কোন দিন ভুলব না। এমনটি আর কখনও ঘটবে বলে মনে হয় না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘মূল কথা হলো- কোন কিছুর শেষের আগে সমাপ্ত বলতে নেই। লিচ উইকেটে আসার পর আমি পরিষ্কার বুঝে যাই, যা করার আমাকেই করতে হবে। মনে মনে পাঁচ ও এক- থিওরি ঠিক করে ফেলি। আমি পাঁচ বল খেলব এবং সে এক বল খেলবে। তবে তার ওপর আমার ভরসা ছিল। লিচ নাইটওয়াচম্যান হিসেবে আগেও ভাল করেছে। এ ছাড়া লঙ্গার ভার্সনের ক্রিকেটে তার ৯২ রানের ইনিংস আছে।’ স্টোকস বলেন, ‘আমি ওকে সাহস দিয়েছি। শেষদিকে তো আমি তাকাতেই পারছিলাম না। ম্যাচটা যখন জিতলাম, ও এসে আমাকে চুমু দিল। আমার জীবনের সেরা চুমু এটি!’ তৃতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৫৬ রান করে স্বাগতিকরা। শেষ দুই দিনে তাদের প্রয়োজন ছিল ২০৩ রান, হাতে ৭ উইকেট। দিনের শুরুতে তাই স্টোকসের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। তিনি চেয়েছিলেন ধীরে ধীরে খেলে ম্যাচ জেতাতে। কিন্তু সঙ্গীরা একে একে আউট হতে থাকলে পরিকল্পনা পাল্টান। শেষ ১০ ওভারে তোলেন ৭৬ রান। স্টোকস বলেন, ‘যদি রান তুলতে সারা দিনও লাগত, আমি তা করতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু স্বীকৃত সব ব্যাটসম্যান আউট হলে লিচ নামার পর বুঝলাম, আমাকে দ্রুত শেষ করতে হবে। তবে এটা বলতেই হবে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলগুলো লিচ খেলেছে। সে যেভাবে এটা করল, সেটা অসাধারণ।’ আশা বাঁচিয়ে রাখতে পেরে বেশ তৃপ্তি ঝরেছে স্টোকসের কণ্ঠে, ‘এ্যাশেজে টিকে থাকতে এই টেস্ট জিততেই হতো আমাদের। আমরা তা করে দেখিয়েছি, এখন আমাদের পরের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’ উল্লেখ্য, এজবাস্টনের প্রথম টেস্টে ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ২৫১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল সফরকারী টিম পেইনের অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসের দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র হয়। দুর্দান্ত এ জয়ে পাঁচ টেস্টের এ্যাশেজে ১-১এ সমতায় ফিরল জো রুটের ইংল্যান্ড। ওল্ডট্রাফোর্ডে ৪ সেপ্টেম্বর শুরু চতুর্থ টেস্ট। রেকর্ডে সয়লাব হেডিংলি টেস্ট ॥ ৩৫৯/৯ : নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ল ইংল্যান্ড। ১৯২৮ সালে মেলবোর্নে ৩৩২ রান করে জিতেছিল ইংলিশরা। যা ছিল এতদিন তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। স্টোকসের অতিমানবীয় সেঞ্চুরিতে দীর্ঘ ৯১ বছর পর নিজেদের সেই রেকর্ডটা নতুন করে লিখল জো রুটের দল। ** অবিচ্ছিন্ন ৭৬ : টেস্টে দশম অর্থাৎ শেষ উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ৭৬ রানের বেশি আর মাত্র একটি রেকর্ড জুটি রয়েছে। তাও চলতি বছরে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দশম উইকেটে বিশ্ব ফার্নান্দোকে সঙ্গে নিয়ে অপরাজিত ৭৮ রানের জুটি গড়েছিলেন কুশল পেরেরা। স্টোকস আর জ্যাক লিচ মিলে ৭৬ রানে জুটি গড়ে জেতালেন দলকে। ** ৬৭/১০ : হেডিংলিতে প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানে গুটিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতেছে ইংল্যান্ড। গত ১৩১ বছরে এক ইনিংসে এত কম রান করে জেতেনি কোন দল। সব মিলিয়ে এর চেয়ে কম রান করেও ম্যাচ জয়ের নজির আছে আর তিনটি। ১৮৮২ সালে প্রথম ইনিংসে ৬৩ রান করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া, ১৮৮৮ সালে জিতেছিল তৃতীয় ইনিংসে ৬০ রান করে। ১৮৮৭ সালে ইংল্যান্ড জিতেছিল প্রথম ইনিংসে ৬৭ রান করে। গত মাসে লর্ডসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৮৫ রানে গুটিয়ে গিয়েও জিতেছিল ইংল্যান্ড। টেস্টে এক শ’ কম রানে অলআউট হয়েও ম্যাচ জয়ের ঘটনা এখন ১৬টি, ৭টিই ইংল্যান্ডের। ** ৮ ছক্কা: ১৩৫ রানের ইনিংসে ৮ ছক্কা মেরেছেন বেন স্টোকস। চতুর্থ ইনিংসে জয়ের পথে এত ছক্কা নেই টেস্ট ইতিহাসে আর কোন ব্যাটসম্যানের। হানসি ক্রনিয়ে ও ক্রিস গেইলের ছয় ছক্কা ছিল আগের রেকর্ড। ** ৬ বার : টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়াই ৬ ম্যাচ এমন পরিস্থিতিতে এমন (১ উইকেট) ব্যবধানে হেরেছিল। টেস্টের ইতিহাসে ১ উইকেটের ব্যবধানে হারের ঘটনা আছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক রেকর্ডই অস্ট্রেলিয়ার। ১৯৯০ সালের পর তারা ১ উইকেটে হেরেছে ৪ ম্যাচে।
×