ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পর্যাপ্ত তথ্য নেই

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৭ আগস্ট ২০১৯

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পর্যাপ্ত তথ্য নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। আর এটাকেই বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বঙ্গোপসাগরে ২৬ ব্লকের মধ্যে মাত্র চারটিতে কাজ হচ্ছে। বাকি ২২টি সম্পর্কে পেট্রোবাংলার কাছে তেমন কোন তথ্যই নেই। আর গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলো অনেক বেশি গভীরে হওয়ায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এসব জায়গায় কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে সম্প্রতি মডেল উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) ২০১৯ অনুমোদন করেছে সরকার। অনুসন্ধান সফল হলে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম সাড়ে ছয় ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭.২৫ ডলার করার বিষয়ে পেট্রোবাংলার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। ভারত ও মিয়ানমার গত কয়েকবছরে তাদের সমুদ্র সীমাতে যেভাবে গ্যাস অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশ সেখানে পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০০৮ ও ২০১২ সালে দু’বার মডেল পিএসসিতে আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানিকে আহ্বান জানানো হলেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস ব্লক ইজারা নিয়ে মাঝপথে চলে গেছে। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আগের দু’বার পিএসসিতে খুব একটা সাড়া না পড়ার মূল কারণ হিসেবে দামকেই বিবেচনা করা হয়েছিল। এবার সেই দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। যদিও পিএসসিতে অন্য শর্তের ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়া গেলে স্থলভাগে আনার বিষয়ে যে শর্ত দেয়া হয়েছে তাতে অনেক ক্ষেত্রে দ্বিমত জানায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়াটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। হুট করে এখনই সেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়া কঠিন বলেও মনে করছেন তারা। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে, গ্যাস পাওয়া গেলে কোন প্রক্রিয়াতে আনা হবে। আমরা যেহেতু সঙ্কটে রয়েছি সেহেতু আমরা চাইছি পাইপ লাইন করে স্থলভাগে ওই গ্যাস নিয়ে আসতে। কিন্তু, এক্ষেত্রে খনির মজুদের পরিমাণ, দূরত্ব, পাইপ লাইন নির্মাণের খরচ বিবেচনা করতে হবে। পাইপ লাইনে করে আনা বেশি ব্যয়বহুল হলে বিদেশী কোম্পানিগুলো আগ্রহী হবে না। তবে এ বিষয়টি আগেভাগে ঠিক করা কঠিন। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, দরপত্র আহ্বান করা হলে সেগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু অনুসন্ধানের তথ্য বহুজাতিক অনুসন্ধান কোম্পানিকে দিতে হয়। কিন্তু পেট্রোবাংলার কাছে পানির গভীরতা এবং ব্লকের আয়তন ছাড়া কোন তথ্য নেই। সাধারণত বিনিয়োগকারীরা দ্বিতীয় মাত্রার ভূকম্পন জরিপের ফলাফল চেয়ে থাকে। এজন্য সাগরে দরপত্র আহ্বানের আগে একটি মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে করা হয়। এতে উঠে আসে সেখানে সম্ভাব্য সম্পদ মজুদের তথ্য। এরপর বিনিয়োগকারী ওই তথ্যের ভিত্তিতে তৃতীয় মাত্রার জরিপ করে কূপ খনন করে থাকে। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে চেষ্টা করেও মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের কোনও কাজ দিতে পারেনি। সম্প্রতি ওই জরিপের কাজ একটি বিদেশী কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। তাদের এই জরিপ শেষ করে ফলাফল বিশ্লেষণ করতে অন্তত তিন বছর সময় প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব নাজমুল আহসান বলেন, ‘এতদিন বসে থাকা যৌক্তিক হবে না। এজন্য পেট্রোবাংলাকে আমরা পিএসসি আহ্বানের প্রস্তুতি নিতে বলেছি। এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। ওই অনুমোদন পাওয়া গেলেই পিএসসি আহ্বান করা হবে।’ এ সম্পর্কে সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ম তামিম বলেন, ‘মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে না করে দরপত্র আহ্বান করে লাভ হবে না। আগ্রহী কোম্পানিগুলো যে প্রস্তাব দেবে তা বাংলাদেশের সঙ্গে মনে হয় না সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।’ তিনি বলেন, ‘সাগরে কী কী আছে তা না জেনে কোন কোম্পানি আসতেও চাইবে না। সেক্ষেত্রে সাড়াও কম পাবে সরকার। মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে করতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে। আর এই জরিপ না হলে সাগরে কী আছে তা আমরাও জানতে পারব না। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় দুর্বলতা।’ পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, ‘আমাদের এখানে সাগরের গভীরতা অনেক বেশি। কোথাও কোথাও হঠাৎ করে বড় খাদের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে নদীগুলো থেকে প্রচুর পলি পড়ছে সাগরে। সব মিলিয়ে সাগরের নিচে কাজ করা জটিল এবং কষ্টসাধ্য বিষয়। এই পর্যন্ত তথ্য আছে আমাদের কাছে। কিন্তু সাগরের আরও গভীরে যেখান থেকে আমরা গ্যাস বা তেল উত্তোলন করব সেখানকার কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। সেই কাজের জন্যই মাল্টিক্লায়েন্ট জরুরী।’ বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ চিশতী বলেন, ‘মাল্টিক্লায়েন করতে যে কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের সঙ্গে এখনও কিন্তু চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। ফলে চুক্তি করার পর কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে সেখান থেকে কোনও তথ্য পেতে। আমরা এমনিতেই পিছিয়ে পড়েছি। এখন কাজ দ্রুত শুরু করা দরকার।’
×