ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব’ যাত্রাপালার সপ্তম মঞ্চায়ন শিল্পকলায়

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৭ আগস্ট ২০১৯

  ‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব’ যাত্রাপালার  সপ্তম মঞ্চায়ন শিল্পকলায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতবষের্র স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায় ১৯৪২ সালের আগস্ট আন্দোলন। ইতিহাসের পাতায় বিয়াল্লিশের বিপ্লব হিসেবে পরিচিত এই সংগ্রাম। মুক্তির আকাক্সক্ষায় বাংলার মৃত্যুপাগল যৌবন সেদিন দাবানলের মতো জ্বলে উঠেছিল গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। তারা জীবনপণ করে নির্ভীক সৈনিকের মতো যুদ্ধ করেছিল স্বাধীনতার জন্য। তাদেরই কিছু কাল্পনিক চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগের প্রথম যাত্রাপালা ‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব’। সোমবার সন্ধ্যায় পালাটির সপ্তম মঞ্চায়ন হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে প্রসাদকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য রচিত যাত্রাপালাটির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রখ্যাত যাত্রাশিল্পী ও নির্দেশক ভিক্টর দানিয়েল। সহযোগী নির্দেশকের দায়িত্বে ছিলেন মোফাখখারুল ইসলাম। যাত্রাপালার ঘটনাপ্রবাহে সা¤্রাজ্যবাদী শাসকের প্রলোভনে মত্ত জমিদার তার স্নেহের নাতি, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূসহ স্বজনদের হারিয়ে উন্মাদ হয়ে যায়। ইংরেজের বিচারে এই আন্দোলনের মূল নায়ক জমিদারপুত্র মহেন্দ্র (প্রশান্ত) চৌধুরীর দ্বীপান্তর হয়। কিন্তু স্বাধীনতা পাওয়ার পর কালাপানির নির্বাসন থেকে সে আবার ফিরে আসে প্রিয় জন্মভূমির বুকে। পালায় ইংরেজ সরকারের রায় বাহাদুর খেতাবপ্রাপ্ত বাঙালী জমিদার চরিত্র যেমন স্থান পেয়েছে, তেমনি জমিদারের ঘরেই জন্ম নিয়েছে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী দস্যুর হাত থেকে নিজ ভূখ-ের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূর্যসৈনিকরা। তারা ইংরেজের কবল থেকে মুক্ত করে পলাশপুর থানা। তাদের বিশ্বাস, সেদিনের সে সংগ্রাম আগামীদিনের সংগ্রামের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। কাল্পনিক চরিত্রের সমাবেশ এ যাত্রায় চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে ভিন্নভাবে। চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে জন্মভূমির মুক্তি সংগ্রামে নিবেদিত বীরসন্তানরা, আছে স্বার্থের মোহে অন্ধ ইংরেজের ক্রীতদাস, রয়েছে ঘরশত্রু বিভীষণের দল। পালাটির বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন বিমল মজুমদার, মারুফ রহমান, প্রবীর সরদার, রেখা রানী গুণ, অমিত রঞ্জন দে, আশরাফুন নাহার মালা, শারমিন আক্তার রিনি, বিজয় রায়, শামীম আল মামুন প্রমুখ। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে ব্রিটিশবিরোধী বক্তব্য প্রচার করে চারণকবি মুকুন্দদাস শুরু করেছিলেন ‘স্বদেশী যাত্রা’। সেই পথরেখা ব্রিটিশ ভারতের স্বদেশী আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে উদীচীর যাত্রাপালা ‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব’। পালাটি প্রসঙ্গে উদীচীর ভাষ্য, বাংলাদেশের এক অতি প্রাচীন গৌরবময় লোকনাট্যধারা এই যাত্রা। আমাদের লোকজ সংস্কৃতির মূল্যবান এবং মৌলিক শিল্পমাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পদ যাত্রা। একাত্তরে মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর সবার প্রত্যাশা ছিল এই শিল্পমাধ্যমটি আমাদের সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে সমাজে নবজাগরণ সৃষ্টি করবে। কিন্তু পঁচাত্তরের দুঃখজনক পট-পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় ইতিবাচক অর্জনগুলোর অবক্ষয়ের পাশাপাশি এই লোকজ সাংস্কৃতিক ধারাটিও উল্টোরথে চলতে শুরু করে। সিপাহী সরকারদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ তত্ত্বাবধান, উদ্যোক্তাদের ঘৃণ্য অর্থলোভী মানসিকতা, তথাকথিত প্রিন্সেসদের বেলেল্লাপনা এবং নানাবিধ অশ্লীলতায় এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পমাধ্যমটি কলুষিত হয়ে পড়ে। ফলে সুস্থ মানসিকতার দর্শকরা এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে। তাই যাত্রাশিল্পের এই সঙ্কটকালে নিজেদের দায় মেটানোর প্রয়াস এই যাত্রাপালার নির্মাণ।
×