ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোটরসাইকেল খোয়া

মালিবাগ ফ্লাইওভারের ওপর পাঠাও চালককে গলা কেটে হত্যা

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 মালিবাগ ফ্লাইওভারের ওপর পাঠাও চালককে গলা কেটে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মালিবাগ ফ্লাইওভারের উপর এক পাঠাও চালককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর পাঠাও চালকের মোটরসাইকেল খোয়া গেছে। মোটরসাইকেলটি হত্যাকারী নিয়ে গেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। মোটরসাইকেল ছিনতাই করতেই পাঠাও চালককে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা। ব্যক্তিগত বিরোধ, অর্থনৈতিক বিষয়াদি বা পারিবারিক কলহের কারণে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। রবিবার রাত আড়াইটার দিকে ঢাকার শাহজাহানপুর থানাধীন মালিবাগ সিআইডি অফিসের কাছ দিয়ে যাওয়া সবচেয়ে উপরের ফ্লাইওভারটির মাঝামাঝি জায়গায় মিলন (৩৫) নামের ওই পাঠাও চালককে গলাকেটে হত্যার ঘটনাটি ঘটে। নিহত মিলনের বন্ধু সিএনজি চালক শিহাবের বরাত দিয়ে শাহজাহানপুর থানার ওসি মোঃ শহীদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনার দিন রাত সোয়া দুটার দিকে শিহাবের সঙ্গে মিলনের কথা হয়। মিলন জানায়, সে যাত্রী নিয়ে মালিবাগ সিআইডি অফিসের সামনের ফ্লাইওভার দিয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। তবে কোথায় যাচ্ছে তা বলেনি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার এসআই (উপপরিদর্শক) মোঃ আতিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনাস্থলের কাছেই পল্টন থানা পুলিশের একটি টহল দল দায়িত্ব পালন করছিল। রাত আড়াইটার দিকে একজনের চিৎকার শুনে টহল দলের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তারা দেখতে পান, একজন মানুষ দৌড়ে তাদের দিকে আসছে। কাছাকাছি আসার পরই লোকটি ঢলে পড়ে। কাছে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা দেখেন, ওই লোকের গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে। তারা দ্রুত ওই ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে পাঠাও চালক মিলনের গলায় সাতটি সেলাই দেন চিকিৎসকরা। মিলনের হার্টে সমস্যা থাকার কারণে এবং অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে শেরে বাংলানগর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভোর পৌনে ছয়টার দিকে মিলনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে মিলনের জবানবন্দী রেকর্ড করার উদ্যোগ নেয়া হলেও মিলন কথা বলতে না পারায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। পরে মিলনের লাশ পাশেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। বিকেলে সুরতহাল শেষে লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মিলনের পিতার নাম আবুল কালাম। বাড়ি ভোলা সদর জেলার তালুকদার হাট এলাকায়। গ্রামের বাড়িতেই মিলনের দাফন হবে বলে পরিবার জানায়। পুলিশ কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে মিলনের মোটরসাইকেলটি খোয়া গেছে। সেখানে মিলনের হেলমেট, জুতো ও একটি হাতঘড়ি পাওয়া গেছে। এসব জিনিস আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করতেই মিলনকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মিলন পেশাদার পাঠাও চালক ছিলেন বলে তার স্ত্রীর দাবি। পাঠাও মোটরসাইকেল চালিয়েই মিলনের সংসার চলত। শাহজাহানপুর থানার ওসি মোঃ শহীদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, মিলনের প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে আছে। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরেও এক ছেলে আছে। প্রথম স্ত্রী বিয়ের ছয় মাস পরেই চলে যান। দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে মিরপুর-১ এর গুদারাঘাট এলাকায় বসবাস করতেন। গভীর রাতে সাধারণত সব রাস্তাই ফাঁকে থাকে। নিচের ফাঁকা রাস্তায় না গিয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায়নি। ঘটনাস্থলের আশপাশে ফ্লাইওভারের উপরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজের পর্যালোচনা চলছে। মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের জন্যই মিলনকে হত্যা করা হয়েছে নাকি ব্যক্তি বা পরিবারিক বা অন্যকোন কারণে মিলন পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন তা গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পাঠাও অফিসের তথ্যের বরাত দিয়ে এসআই আতিকুর রহমান আরও জানান, পাঠাও চালক হিসেবে মিলন গত ৭ আগস্ট শেষবারের মতো কথা বলেছিলেন। এরপর পাঠাও চালানোর জন্য কোন যাত্রীর সঙ্গে পাঠাও এ্যাপসে তার কথা হয়নি। হয়ত দীর্ঘ এই সময় মিলন এ্যাপস ছাড়াই যাত্রী পরিবহন করেছে।
×