ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাংস ডিম দুধের জীবাণু থেকে রক্ষায় ৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ১০:১৪, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 মাংস ডিম দুধের জীবাণু থেকে রক্ষায় ৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প

ওয়াজেদ হীরা ॥ গৃহপালিত প্রাণীর ও প্রাণিজাত খাদ্যের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ ল্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১৭ হাজার অণুজীবের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মানবদেহে সংক্রমিত হয় বিভিন্ন প্রাণীর মাধ্যমে। প্রাণিজাত খাদ্য- যেমন ডিম, দুধ, মাংস এবং এ থেকে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের মাধ্যমে এসব অণুজীব মানবদেহে প্রবেশ করে, যা নানা ধরনের ক্ষতি করে। প্রাণিসম্পদের ভেতর থাকা বিভিন্ন প্রকার জীবাণুর ঝুঁকি বা হ্যাজার্ড কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ। ইতেমধ্যেই ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ উন্নয়নে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এই ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে ৭৩ কোটি টাকা। জানা গেছে, গৃহপালিত প্রাণীর ও প্রাণিজাত খাদ্যের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে এই ল্যাবে সক্ষমতা বৃদ্ধি, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় জেনেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং এই জেনেটিক রোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সরকারী অর্থায়নে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ২৬ লাখ ৪ হাজার টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। গত জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। ২০১টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, আমাদের কৃষির সাবসেক্টর হিসেবে মৎস্য প্রাণী খুবই ভাল করছে। আমাদের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। দুগ্ধ উৎপাদন বাড়ছে। গ্রামে গঞ্জে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ পোল্ট্রি করছে নিজেরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। আমরা এখন নিজেদের দেশীয় পশুতে কোরবানি দেই। দেশে গরু-ছাগলের উৎপাদন বা খামার সবই বাড়ছে। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি এই দুধ, ডিম, মাংস থেকে বা প্রাণীজাত খাদ্য যেন ঝুঁকিমুক্ত হয় সেটিও বিবেচ্য বিষয়। বিভিন্ন জীবাণুর ঝুঁকি কমিয়ে আনতে ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ কাজ করবে। আমরা এটি শক্তিশালী করব। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে পরিবারভিত্তিক পশুপালনের বাইরে অনেক পশুখামার গড়ে উঠছে। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে ছোট বা মাঝারি আকারে দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামারের সম্ভাবনা খুব বেশি। ডিম, দুধ, মাংস ও এসব থেকে উৎপাদিত পণ্যই প্রাণিজ উৎসে প্রধান খাদ্য, যা দৈনন্দিন জীবনে মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। এসব খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, হ্যান্ডেলিং, পরিবহন ও সংরক্ষণ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে না করা হলে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিসহ অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে। এই প্রাণিজাত খাদ্যের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার হ্যাজার্ডের উপস্থিতি মানুষের খাদ্যের যেমন জেনেটিক প্যাথোজেনস বা জীবাণু এবং বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল হ্যাজার্ড সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রাতিরিক্তভাবে পাওয়া গেলে তা জনস্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানে এ প্রকল্পের আওতায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ এ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরি নির্মাণ করা হবে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মাংস প্রক্রিয়াকরণের ওপর ১৫ হাজার জন মাংস বিক্রেতা/কসাইকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং জেনেটিক (প্রাণিজাত খাদ্যে বিভিন্ন প্রকার জীবাণুর উপস্থিতি) রোগ নিয়ন্ত্রণে সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম, নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও টিকা প্রদান, ইত্যাদি বিষয়ে ২০১ জন ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। চালু করা হবে চারটি গুরুত্বপূর্ণ জেনেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণে সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম। নির্বাচিত ২০১টি উপজেলায় গবাদিপশুকে (গরু ও মহিষ) তড়কা রোগের টিকা দেয়া এবং জেনেটিক রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর মৃত্যুর কারণে কৃষক/খামারিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং মৃত গবাদিপশু অপসারণে আর্থিক সাহায্য দেয়া হবে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ জেনেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্বাচিত ২০১ উপজেলায় বিলবোর্ড স্থাপন এবং টিভি ফিলার ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এ প্রকল্পে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের একটা সেকশন হিসেবে বর্তমানে এটি কাজ করছিল। এখন একটি ল্যাবরেটরি হবে। আমরা চারটি জেনেটিক রোগ নিয়ে কাজ করব। বিভিন্ন ফার্মে আমরা তদারকি করব যাতে এ ধরনের রোগ না হয়। প্রকল্প বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, একনেকে পাশ হলেও মন্ত্রণালয়ের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম রয়ে গেছে। এখনও জিও (সরকারী আদেশ) হয়নি। দ্রুতই কাজ শুরু হবে আশা করছি। এর সুফল মানুষ পাবে সেটিও প্রত্যাশা করেন তিনি। প্রকল্পের ওপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও প্রকল্পের বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মোঃ জাতিক হোসেন আকন্দ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গৃহপালিত ও প্রাণিজাত খাদ্যের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ ল্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জেনেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হবে এবং এসব রোগের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
×