ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৫২

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৫২

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডেঙ্গজ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুরু থেকে সোমবার পর্যন্ত ১৭৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর মধ্যে ৮৮ মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করে এই রোগে মোট ৫২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সোমবার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, এই ৮৮ জনের মধ্যে ৩৬ জনের বেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার কোন প্রমাণ মেলেনি। তারা জানিয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৯১ ভাগ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পক্ষ থেকে ডেঙ্গুর সবশেষ অবস্থার তথ্যে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন ১২৫১ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭৭, ঢাকার বাইরের ৬৭৪। তারা জানান, সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৪ হাজার ৭৬৫। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৫৯ হাজার ৩০। সারাদেশে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫ হাজার ৫৬২। ঢাকায় এই সংখ্যা ৩ হাজার ৮১, ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৪৮১। এদিকে গত জুন থেকে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বাড়লে এখন পর্যন্ত এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কোন দিন আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও পরদিনই আবার তা বেড়ে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশা নিয়ন্ত্রণে চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। নেয়া হয়েছে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচী। এরপরও প্রায় প্রতিদিন হাজারের বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে ডেঙ্গু নিয়ে মানুষ এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়েছে শুরু থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে আসা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর পর্যালোচনা করে আসছে তারা। তারা ১৭৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পেলেও এর মধ্যে ৮৮ জনের তথ্য যাচাইয়ে ৫২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ডেঙ্গুতে মুত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা তিন ভাবে কাজ করেন। প্রথমত, সব ক্লিনিক্যাল ডকুমেন্ট, চিকিৎসার তথ্য, হাসপাতালে থাকার সময়কার তথ্য পর্যালোচনা করতে হয়। তারপর ভার্বাল অটোপসি (মৃত্যুর কারণ বোঝার জন্য উপসর্গ ও শারীরিক অবস্থার তথ্য বিচার) এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যখন ল্যাবের পরীক্ষায় পিসিআর (রক্তে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী ভাইরাসের জিন অবশেষ) পেয়ে যাই, তখন বলতে পারি যে ডেঙ্গুতেই তার মৃত্যু হয়েছে। আর বাকি ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় ডেঙ্গুর ‘সম্ভাব্য সংক্রমণ’ হিসেবে। মৃতের তালিকায় আমরা সেসব নাম দেই না। তিনি বলেন, অনেক ডেঙ্গুরোগী এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যায়। তখন রোগী হিসেবে তার নাম একাধিক হাসপাতালেই এন্ট্রি হয়। হাসপাতালগুলো থেকে যখন স্বাস্থ্য অধিদফতরে তালিকা আসে, তখন জানার উপায় নেই যে রোগীরা এক না একাধিক হাসপাতালে ছিলেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায় ক্রমান্বয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে। যদিও তা খুব ধীরগতিতে। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার রাজধানীর চেয়ে এখনও বেশি। সেখানে ক্রমান্বয়ে আক্রান্তের হার কমে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে আগের দিনের চেয়ে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার ৪ শতাংশ কমেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমেছে আগের দিনের চেয়ে ৬ শতাংশ। সারাদেশে এই রোগে আক্রান্ত হওয়াদের ৯১ ভাগ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছে। এদিকে কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে রাসেল (৩০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে কেরানীগঞ্জের ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত ১৯ আগস্ট জ্বর নিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রাসেল। কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জে তৈরি পোশাকের একটি দোকানে চাকরি করতেন তিনি। বাড়ি কালিগঞ্জের নয়াবাড়ি এলাকায়। গত ২১ আগস্ট মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মুদি দোকানি তসলিম (৩৫)। ২২ আগস্ট একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মায়া (৩৫) নামে এক গৃহিনী। ২৪ আগস্ট রহমতপুরের বাসিন্দা আবুল কালামের মৃত্যু হয়। তিনিও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত জুলাই মাসে সৌরভ নামে এক কিশোর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মাগুরা ॥ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আজ সোমবার মাগুরায় ৩২ জন মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। এ পর্যন্ত জেলায় ২০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ১৬৮ জন বাড়িতে ফিরে গেছে। গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীতে এক মাসে অর্থাৎ গত ১৬ জুলাই থেকে সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত ৪০১ জন ডেঙ্গু জ্বরের রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নতুন ১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ যাবত ২৪ জনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। অপর একজনকে বরিশাল শেবাচিমে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছেন স্বজনরা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩২৭ জন। বাকিরাও সুস্থতার পথে। পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডাঃ শাহ মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলায় ৬ জন এবং জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কোথাও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। বোয়ালখালী ॥ শিশুসহ ৬ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সোমবার (২৬ আগস্ট) তীব্র জ্বর নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে তাদের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয় বলে জানান হাসপাতালের সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার সঞ্জয় সেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে বোয়ালখালীতে ১৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আমতলী, বরগুনা ॥ বেড়েই চলছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৬ দিনে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। ইতোমধ্যে ৩৪ জন রোগী চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে ৬ জন রোগী আমতলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের শুরু থেকে সোমবার পর্যন্ত ২৬ দিনে ৪০ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী আমতলী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৪ রোগী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে ৬ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সোমবার হাসপাতালে ওমর আলী (১৪) ও আলিফ (১১) নামের দুই শিশু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে সরকারীভাবে এনএস-১ পরীক্ষা করে ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হচ্ছে এমনটাই জানালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
×