ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খরা মোকাবেলা ॥ আশীর্বাদ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ২৭ আগস্ট ২০১৯

  খরা মোকাবেলা ॥ আশীর্বাদ  তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প

তাহমিন হক ববী, তিস্তা কমান্ড এলাকা থেকে ফিরে ॥ উত্তরাঞ্চলের খরাপীড়িত এলাকায় আমন ধান আবাদে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের (খরিপ ২) মাধ্যমে ৬৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাচ্ছে। এতে চলতি আমন মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে খরা মোকাবেলায় তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প কৃষককুলের মাঝে আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায়,৭১০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার ক্যানেলজুড়ে তিস্তার সেচের পানি। বর্তমানে প্রতিদিন ৩৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার প্রধান ক্যানেল, ৭৪ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার মেজর সেকেন্ডারি সেচ ক্যানেল, ২১৪ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সেকেন্ডারি ক্যানেল ও ৩৮৭ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার টারশিয়ারি ক্যানেলে ১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর ৫ হাজার কিউসেক করে সেচ পাচ্ছে কৃষক। দুই দফা বন্যার পর হঠাৎ করে বৃষ্টির অভাব এবং কোথাও কোথাও অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছেনা। পাশাপাশি রোপণকৃত আমনের চারাগুলো পানির অভাবে বিনষ্ট হতে বসেছে। সেখানে তিস্তা সেচ প্রকল্পের সেচ পেয়ে মহাখুশি কৃষকরা। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সূত্র বলছে, অভূতভাবে উজান থেকে পানি আসছে। ব্যারাজ পয়েন্টে পানির উথাল ঢেউ। পানিতে যেমন ভরে উঠছে নদী, তেমনি ৭১০ কিলোমিটারজুড়ে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সকল সেচ ক্যানেল পানিতে টইটম্বুর। তাই রোপা আমন ধান আবাদে দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ থেকে সম্পূূরক সেচ প্রদান করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এবার শুষ্ক মৌসুমে সেচনির্ভর বোরো আবাদে তিস্তা নদীতে পানি সঙ্কটের কারণে খরিপ ১ মৌসুমে (বোরো) কৃষকরা রেশনিং সিস্টেমে ৪০ হাজার হেক্টরে সেচ সুবিধা পেয়েছিল। এবার খরিপ ২ মৌসুমে কৃষকরা সেচ সুবিধা পাচ্ছেন ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে। তিস্তা সেচ ক্যানেল এসওয়ানটি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, প্রচ- তাপপ্রবাহে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে বসেছে এ সময় তিস্তার সেচ ক্যানেলের পানির কারণে আমন ধানের ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বলেন, চলতি মৌসুমে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওয়ার ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমন মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ কৃষি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। তিস্তা ব্যারাজের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ প্রধানত খরিপ ২ মৌসুমের জন্য নির্মিত। অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে খরা দেখা দিলে কৃষকরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ পাবেন। যাতে আমন ধান তারা পরিপূর্ণভাবে আবাদ করতে পারেন। বর্তমানে অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে কৃষক। তাই এই মৌসুমে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প যে এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ তা খরিপ ২ মৌসুমে কৃষকরা বুঝতে পারছেন। এ দিকে জানা যায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় চলতি মৌসুমে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ শেষ করেছে কৃষক। পাশাপাশি কৃষককুল আমনের চারা রোপণ অব্যাহত রেখেছে। জেলা ভিত্তিক আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা হলো নীলফামারীতে এক লাখ ২৩ হাজার ৩৭ হেক্টর, রংপুরে এক লাখ ৭৬ হাজার ৭৪১ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৯০ হাজার ৪০০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ হেক্টর ও কুড়িগ্রামে ১ লাখ ২২ হাজার ১৫৯ হেক্টর।
×